সংরক্ষণের বাইরে থাকা আসনগুলিতে মহিলাদের প্রার্থী করতে পুরুলিয়া জেলায় কোনও দলেরই তেমন আগ্রহ দেখা গেল না। আসন্ন পুরভোটে এই জেলার তিনটি কেন্দ্রেই আধিকাংশ মহিলা প্রার্থী হয়েছেন সংরক্ষিত আসনেই। ব্যতিক্রম দেখাতে এগিয়ে আসেনি কোনও দলই।
পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর ও ঝালদা এই তিনটি পুরসভায় মোট আসনের সংখ্যা ৪৮টি। তার মধ্যে তফসিলি জাতি ও সাধারণ মহিলাদের জন্য মোট সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ১৭টি। ওই আসনগুলির বাইরে মহিলাদের জন্য জেলার প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির নেতৃত্ব বরাদ্দ করেছেন মোটে ৬টি আসন। পুরুলিয়া পুরসভায় মোট আসনের সংখ্যা ২৩। তারমধ্যে তফশিলি জাতি ও সাধারণ মহিলা মিলিয়ে ৮টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। এই ৮টি আসনে নিজেদের দলের প্রার্থী দেওয়ার পাশাপাশি তৃণমূল ও বামফ্রন্ট আরও দু’টি বাড়তি আসনে মহিলা প্রার্থী দিয়েছে। কংগ্রেস ১টি ওয়ার্ডে দিয়েছে। বিজেপি সংরক্ষিত আসনের বাইরে আর কোনও আসনেই মহিলা প্রার্থীর মনোনয়ন দেয়নি। এখানে তৃণমূল ৪ নম্বর ও ১৭ নম্বর এই দু’টি অসংরক্ষিত আসনে এবং বামফ্রন্ট ১ নম্বর ও ১০ নম্বর এই দুই অসংরক্ষিত আসনে মহিলা প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছে।
ঝালদায় ছবিটা আরও প্রকট। ১২টি ওয়ার্ডের এই পুরসভায় তফসিলি জাতি ও সাধারণ মিলিয়ে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন রয়েছে ৪টি। এখানে কেবলমাত্র তৃণমূলই মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনের বাইরে অতিরিক্ত একটি আসনে এক মহিলা প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। বাকি কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনের বাইরে আর কোনও মহিলাকে প্রাথী করেনি। বিজেপি ৪টি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে তিনটিতে মহিলা প্রার্থী দিতে পেরেছে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে তারা কোনও প্রার্থী দিতে পারেনি। তৃণমূল ঝালদার অসংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডে এক মহিলা প্রার্থী দিয়েছে।
রঘুনাথপুরে ছবিটা বড়ই করুণ। ১৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে ৫টি আসন। এখানে তৃণমূল, কংগ্রেস, বামফ্রন্ট বা বিজেপি কোনও দলই সংরক্ষিত আসনগুলির বাইরে মহিলাদের প্রার্থী করেনি। তবে এখানে বিদায়ী পুরবোর্ডে ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন তৃণমূলের সাধনা মোহন্ত। এ বারও তিনি টিকিটের দাবিদার ছিলেন। কিন্তু দল সাধনাদেবীকে টিকিট দেয়নি। তাই তিনি নিজেই এই ওয়ার্ড থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নির্দল প্রার্থী হিসেবে। সাধনাদেবী বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো মহিলাদের সব কাজে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেন। মহিলাদের সামনে নিয়ে আসার কথা বলেন। কিন্তু দলের নিচুতলায় তার প্রতিফলন কোথায়?’’ একই রকমের ক্ষোভ শোনা গিয়েছে জেলার তিনটি কেন্দ্রের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির মহিলা নেত্রী ও কর্মীদের মুখে। তাঁরা বলছেন, ‘‘নেহাত সংরক্ষণ রয়েছে। না হলে মহিলাদের নির্বাচনে প্রতিনিধিত্ব কতটা থাকত সেটা তো এই প্রার্থী তালিকাই বলছে। এ ছাড়া সংরক্ষিত আসনগুলিতেও কয়েকজন মহিলাকে শুধুমাত্র তাঁর স্বামী বা নিকট আত্মীয় দলের বড় নেতা বা বিদায়ী কাউন্সিলর হওয়ার সুবাদে টিকিট দেওয়া হয়েছে।’’
তবে যতগুলি আসন সংরক্ষিত তার বাইরে অসংরক্ষিত আসনে তাঁরা মহিলাদের প্রার্থী করেছেন বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘পুরুলিয়া পুরসভায় আমরা অতিরিক্ত দু’জনকে ও ঝালদা পুরসভায় একজনকে প্রার্থী করেছি।’’ কিন্তু রঘুনাথপুরে বা অন্য দু’টি পুরসভার ক্ষেত্রে প্রার্থী তালিকায় আরও মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব রাখা যেত না? এড়িয়ে গিয়ে শান্তিরামবাবু বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে আমরা এই বিষয়টি ভেবে দেখব।’’ জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রথীন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, ‘‘প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা ওয়ার্ডের কর্মীদের মতামতকেই গুরুত্ব দিয়েছি। দলের মহিলা সদস্যদেরও মত নেওয়া হয়েছে। তবে বেশি সংখ্যায় যাতে মহিলা প্রার্থী দেওয়া যায়, সে বিষয়টি আমরা ভবিষ্যতে মাথায় রাখব।’’
জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক মণীন্দ্র গোপ বলেন, ‘‘আমরা বরাবর নির্বাচনে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব রাখার চেষ্টা করি। পুরুলিয়ায় ছ’জন মহিলাকে প্রার্থী করেছি। কিন্তু রঘুনাথপুর বা ঝালদায় আসন বেশি না থাকায় মহিলা প্রার্থী করতে পারিনি।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আমাদের সংগঠন বাড়ছে। আগামীদিনে আমরা অসংরক্ষিত আসনেও মহিলাদের প্রার্থী করব। আর এটাই আমাদের দলেরও দৃষ্টিভঙ্গি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy