Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
শ্রমিক-মালিক চাপানউতোর রঘুনাথপুরে

মজুরি-বিবাদে বন্ধ কারখানা

মজুরি নিয়ে শ্রমিক-মালিক বিবাদের জেরে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে একটি কারখানায়। শ্রমিকদের কর্মবিরতির জেরে তিন দিন ধরে কাজ হচ্ছে না রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মূলডি গ্রামের ওই কারখানায়। দু’পক্ষকে আলোচনায় ডেকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছে শ্রম দফতর। কিন্তু, মঙ্গলবারের ওই বৈঠকে মালিকপক্ষ অনুপস্থিত থাকায় আলোচনাই হয়নি।

কারখানা বন্ধ। জমে রয়েছে অ্যাসবেসটস। বুধবারের নিজস্ব চিত্র।

কারখানা বন্ধ। জমে রয়েছে অ্যাসবেসটস। বুধবারের নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৫ ০১:৪৭
Share: Save:

মজুরি নিয়ে শ্রমিক-মালিক বিবাদের জেরে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে একটি কারখানায়। শ্রমিকদের কর্মবিরতির জেরে তিন দিন ধরে কাজ হচ্ছে না রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মূলডি গ্রামের ওই কারখানায়।
দু’পক্ষকে আলোচনায় ডেকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছে শ্রম দফতর। কিন্তু, মঙ্গলবারের ওই বৈঠকে মালিকপক্ষ অনুপস্থিত থাকায় আলোচনাই হয়নি। রঘুনাথপুরের সহকারী শ্রম কমিশনার সবুজকুমার ঢালি বলেন, ‘‘মঙ্গলবারের বৈঠকে মালিকপক্ষ না আসায় আলোচনা হয়নি। আজ, বৃহস্পতিবার ফের রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসকের দফতরে বৈঠক ডাকা হয়েছে।” এ দিকে, কারখানা কর্তৃপক্ষ অভিযোগ তুলেছেন, তৃণমূলের নেতৃত্বে গেটের বাইরে স্থানীয় ঠিকা শ্রমিকদের অবস্থানের জেরে কারখানার মধ্যে আটকে পড়েছেন স্থায়ী কর্মীরা। যদিও সেই অভিযোগ মানতে চায়নি তৃণমূলের সমর্থক শ্রমিকেরা।

‘বালমুকুন্দ সিমেন্ট অ্যান্ড রুফিং ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে এই কারখানাটি থেকে মূলত অ্যাসবেস্টস শিট ও সিমেন্ট তৈরি হয়। কারখানায় ঠিকা শ্রমিকের সংখ্যা ১০৬ জন। স্থায়ী কর্মী রয়েছেন জনা পঞ্চাশ। বস্তুত, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে মাস পাঁচেক আগেই খুলেছে কারখানাটি। আগে ঝালদার এক শিল্পোদ্যোগী লিজ নিয়ে কারখানাটি চালাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি লিজের ভিত্তিতে কারখানা চালাতে অসম্মত হওয়ায় পুরানো মালিকই ফের কারখানা খুলেছেন। তার পরেই মজুরি নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিবাদ শুরু হয়েছে ঠিকা শ্রমিকদের। আন্দোলনকারী শ্রমিকদের দাবি, মালিকপক্ষের সঙ্গে দৈনিক ২২০ টাকা করে মজুরি ও মাসে চার দিন সবেতন ছুটি দেওয়ার চুক্তি হয়। কিন্তু, গত মাসের বেতন দেওয়ার সময়ে সেই চার দিন ছুটির মজুরি কেটে নেওয়া হয়েছে।

এই কারখানায় কেবল তৃণমূলেরই শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। আইএনটিটিইউসি-র পুরুলিয়া জেলা সভাপতি প্রফুল্ল মাহাতো বলেন, ‘‘পুরানো মালিকপক্ষ কারখানা খোলার সময়ে আমাদের সংগঠনের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল দৈনিক ২২০ টাকা করে মজুরি পাওয়ার পাশাপাশি মাসে চার দিন সবেতন ছুটি পাবেন শ্রমিকেরা। এ ছাড়াও, নিয়োগপত্র এবং ইপিএফ দিতে সম্মত হয়েছিলেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, গত মাসে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ছুটির টাকা কেটে নিয়েছেন।’’ প্রফুল্লবাবুর অভিযোগ, চুক্তি হওয়ার পরেও শ্রমিকদের নিয়োগপত্র ও ইপিএফ দিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ। তবে কারখানার জেনারেল ম্যানেজার বি কে সিংহের পাল্টা দাবি, শ্রমিকদের সঙ্গে ওই ধরনের কোনও চুক্তিই তাঁরা করেননি। তাঁর দাবি, ‘‘কারখানা খোলার সময়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় স্থির হয়েছিল, মাসে যত দিন তাঁরা কাজ করবেন, তত দিনেরই মজুরি পাবেন। কিন্তু, এখন কার্যত গা জোয়ারি করে ঠিকা শ্রমিকেরা কারখানায় কাজ বন্ধ করেছেন। তাঁরা নিজেরা তিন দিন ধরে কাজে যোগ দিচ্ছেন না। স্থায়ী কর্মীদেরও কারখানার বাইরে যেতে দিচ্ছেন না।’’ তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বেই এই ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ মালিক পক্ষের।

জোর করে কারখানার মধ্যে কাউকে আটকে রাখার অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি ঠিকা শ্রমিকেরা। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, কারখানা কর্তৃপক্ষ চুক্তিভঙ্গ করে প্রতারণা করছেন। শ্রমিকদের মধ্যে রাবণ হাঁসদা, কাজল হেমব্রম, গুরুপদ বাউরিরা বলেন, ‘‘গত তিন মাস কিন্তু কর্তৃপক্ষ মাসে চার দিন সবেতন ছুটি দিয়েছিল। এই মাসে মজুরি দেওয়া সময়ে চার দিনের টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে।” ওই শ্রমিকদের আরও দাবি, প্রথমে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ রাদি না হওয়ায় বাধ্য হয়ে তাঁরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। কর্তৃপক্ষের অনড় মনোভাবের কারণেই তাঁরা শ্রম দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জানান প্রফুল্লবাবু।

কারখানা সূত্রে জানা যাচ্ছে, বর্তমানে বাজারের অবস্থা খারাপ থাকায় কিছুটা হলেও সঙ্কটে চলছে কারখানা। এই অবস্থায় শ্রমিকদের মাসে চার দিন সবেতন ছুটি দেওয়া সম্ভবপর নয়। পাশাপাশি প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত শ্রমিক থাকায় সমস্যা আরও বেড়েছে। জেনারেল ম্যানেজার বলেন, ‘‘আমাদের যত ঠিকা শ্রমিক প্রয়োজন, বিভিন্ন দিক থেকে চাপে পড়ে তার দ্বিগুণেরও বেশি শ্রমিককে কাজ করাতে হচ্ছে। তার উপরে শ্রমিকরা মজুরি বাড়ানো-সহ নিত্যনতুন দাবি তুলছেন।” এই অবস্থায় জেলার শিল্পাঞ্চল হিসাবে পরিচিত রঘুনাথপুরে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে হওয়া আন্দোলনের জেরে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা এলাকার শিল্প পরিস্থিতির পক্ষে নেতিবাচক উদাহরণ তৈরি করছে বলে অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা। মালিকপক্ষেরও বক্তব্য, এই পরিস্থিতি চললে ভবিষ্যতে কারখানা চালানো সম্ভব না-ও হতে পারে। এই অভিযোগ মানতে নারাজ প্রফুল্লবাবু। তাঁর পাল্টা দাবি, “আমরা কোনও অন্যায্য দাবি করিনি। শ্রম আইনেই শ্রমিকদের সপ্তাহে এক দিন সবেতন ছুটি পাওয়ার অধিকার রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE