চলত এ ভাবেই। লাভপুরে।
কখনও ইন্দিরা আবাস যোজনায় তৈরি পরিত্যক্ত ঘর, কখনও কোনও গৃহস্থবাড়ির খোলা চালা, কখনও গাছতলা— টানা কুড়ি বছর ধরে এ ভাবেই ‘যাযাবর’ হয়ে চলছে লাভপুরের কাশিয়াড়া গ্রামের ১৪০ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। প্রশাসন বাড়ি তৈরিতে উদ্যোগী হলেও জায়গার অভাবে তা বাস্তবায়িত হয়নি। কচিকাঁচাদের নিয়ে দুর্ভোগে ওই কেন্দ্রের কর্মীরা।
অবশেযে তাঁদের দুর্ভোগ মিটতে চলেছে। সাহায্যের হাত এগিয়েছেন এক কৃষিজীবী। ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ভবন নির্মাণের জন্য তিনি দান করেছেন কাঠা দু’য়েক জমি।
প্রশাসনিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৮ সালে ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালু হয়। প্রথম দিকে স্থানীয় এক বাসিন্দার বাড়ির খোলা চালায় পঠনপাঠন, খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। চালাঘর তৈরি করা হলেও তা ভেঙে পড়ে। তার পরে কেন্দ্রের ঠাঁই হয় ইন্দিরা আবাস যোজনার পরিত্যক্ত একটি ঘরে। সেখানেই
পুষ্টি প্রকল্পের রান্না করা হয়, লাগোয়া পুকুরপাড়ে চলে পঠনপাঠন। কিন্তু পরিত্যক্ত সেই ঘরের অবস্থাও সঙ্গীন। ভেঙে পড়েছে চাল, দেওয়ালের একাংশ। পড়ুয়াদের নিয়ে চরম সমস্যায় পড়েছেন কর্মীরা। ওই কেন্দ্রে পড়ুয়ার সংখ্যা ৪৪। ১৬ জন গর্ভবতী এবং প্রসূতিকে রান্না করা পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। কেন্দ্রের কর্মী ছায়ারানি হাজরা বলেন, ‘‘পুকুরের ধারে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে। বিপদের আশঙ্কা থাকে সব সময়েই। বৃষ্টি হলে পড়তে আসে না কেউ-ই। মায়েরা এসে তাদের খাবার নিয়ে যায়।’’ সহায়িকা পূর্ণিমা দাস বলেন, ‘‘রান্না করতে করতে বৃষ্টি নামলে প্রচণ্ড সমস্যা হয়। সব জিনিস নিয়ে কারও বাড়িতে ঢুকে রান্না শেষ করতে হয়।’’
সেই দুর্ভোগ এ বার মিটতে চলেছে। সোমবারই ওই কেন্দ্রের বাড়ি নির্মাণের জন্য দু’কাঠা জমি দান করেছেন কৃষিজীবী দেবজিৎ পাল। স্থানীয় বাসিন্দা তথা বিপ্রটিকুরী পঞ্চায়েতের সদস্য অনিল মণ্ডল, মিলন পাল জানান, দেবজিৎবাবুর দান করা জমির দাম প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় দীর্ঘ দিনের একটা সমস্যা মিটতে চলেছে।
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পড়ুয়া সৌমিতা সূত্রধর, পৃথীরাজ মণ্ডল বলে, ‘‘এই ভাঙা ঘরে পড়াশোনা, খাবার খেতে খুব অসুবিধা হয়। দিদিমণি বলেছেন আর কয়েক দিন পর থেকে আর গাছতলায় বসে পড়াশোনা, খাওয়া দাওয়া করতে হবে না।’’
খুশি অভিভাবকেরাও। সুভাষ পাল, আশুতোষ পালের কথায়, ‘‘ছেলেমেয়েদের পুকুর পারের কেন্দ্রে পাঠাতে ভয় লাগে।
দেবজিৎবাবুকে ধন্যবাদ, উনি জমি দিয়ে সেই ভয় দূর করলেন।’’ একই বক্তব্য কেন্দ্রের কর্মীদেরও। তাঁরা জানান, নতুন ভবন তৈরি হলে স্বস্তিতে কাজ করা যাবে।
দেবজিৎবাবু বলছেন, ‘‘বাচ্চা আর প্রসূতিদের দুর্দশা দেখে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারিনি।’’ লাভপুর ব্লকের বিডিও শুভ্র দাস জানান, ‘‘দেবজিৎবাবুকে ধন্যবাদ। এত দিন জায়গার অভাবে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের বাড়ি তৈরি করা যায়নি। এ বার দ্রুত তা নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy