ধান কাটার সময়ে লাঠি হাতে পাহারা। লাভপুরে। ছবি: কল্যাণ আচার্য
মাঠে পাকা ধান হাওয়ায় মাথা দোলাচ্ছে। আকাশে মেঘ, নিম্নচাপের আশঙ্কা। অসহায় চোখে মাঠের কাছে গিয়ে চাষিরা তাকিয়ে দেখছেন কিন্তু ধান কাটার লোক মিলছে না। কারণ, বিষধর সাপের ছোবলের ভয়।
লাভপুরের বগতোড়ের সুনীল মণ্ডল, নানুরের পোশলার জাকির হোসেনদের মতো ধান চাষিরা এখন সাপ তাড়ানোর জন্য কার্বলিক অ্যাসিড স্প্রে করা শুরু করেছেন। পোশলার গোলাম মোল্লা, রামঘাটির সিরাজ শেখরা জানান, বিঘার পর বিঘা জমি জুড়ে পাকা ধান। ইঁদুর, পাখি সেই ধান খেয়ে শেষ করছে। বেশি শুকিয়ে যাওয়া ধানের শিস ভেঙে পড়ছে। কিন্তু ধান কাটার লোক মিলছে না। চাহিদা মতো মজুরী দেওয়ার কথা বললেও এই মরশুমে ধান কাটার কথা শুনেই না করে দিচ্ছেন এই অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষি শ্রমিক।
বীরভূমের কৃষি আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, চলতি মরশুমে ৩লক্ষ ১২হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়েছিল। ২লক্ষ ৮৯হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। গত বছর এই সময়ে ১০শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। এবারে ১৫ শতাংশ জমির ধান পেকে গিয়েছে। ইতিমধ্যে ধান কাটতে গিয়ে সাপের কামড় খেয়েছেন নানুরের রামকৃষ্ণপুরের দিলীপ দাস এবং অরুণ দাস নামে দু’জন কৃষি শ্রমিক। হাসপাতালে চিকিৎসার পর তাঁরা সুস্থ হলেও সেই খরব ছড়িয়ে পড়েছে লাভপুর ও নানুর জুড়ে। এর ফলে বেশিরভাগ কৃষি শ্রমিক ধান কাটতে মাঠে যেতে চাইছেন না। রামকৃষ্ণপুরের কৃষি শ্রমিক পরেশ দাস, উত্তম দাসরা বলেন, ‘‘একদিন কাজ না করলে আমাদের সংসার চলে না। কিন্তু বেঘোরে প্রাণ খোয়ানোর আশঙ্কা নিয়ে ধান কাটতে যাই কি করে?’’ কৃষি বিভাগের আধিকারিকেরা জানান, কার্বলিক অ্যাসিড বা ঝাঁঝালো কীটনাশক জমির আশেপাশে স্প্রে করতে পারলেও সাপ ওই জায়গা থেকে সরে যাবে। জেলা সহ কৃষি অধিকর্তা (তথ্য) অমরকুমার মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘সাপের উপদ্রব বৃদ্ধির খবর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’
সর্প বিশেষজ্ঞরা জানান, এই সময় পাকা ধান খাওয়ার জন্য মাঠে প্রচুর ইঁদুর দেখা যায়। আর ইঁদুর খাওয়ার লোভে সাপেরাও হাজির হয়। মাঠে সাধারণত গোখরো (খরিস), কেউটে (আলান), চন্দ্রবোড়া এবং ডোমনাচিতি বা কালাচের মতো বিষধর সাপ দেখা যায়। তবে ডোমনাচিতি গভীর রাতে বের হয়। স্থানীয় অজয়পুর হাইস্কুলের জীববিদ্যার শিক্ষক তথা সর্প বিশেষজ্ঞ দীনবন্ধু বিশ্বাস বলেন, ‘‘ইঁদুরের মতোই এইসময় খাবারের খোঁজে মাঠে ওইসব সাপের দেখা মেলে। শুধু ধানখেতে নয়, ইঁদুর ধরার জন্য ধানের গাদার মধ্যেও এরা লুকিয়ে থাকে। বহু সময় কাটা ধানের সঙ্গে সাপ চাষির ঘর পর্যন্তও চলে আসে।’’
তাঁর মতে, এই সময়ে বিশেষ সাবধানতার প্রয়োজন। সম্ভব হলে পা ঢাকা জুতো পরে ধান কাটা উচিত। যাঁরা ধান পাহারা দিতে খেতের ধারে মাচা
করে থাকেন তাঁদের শোওয়ার জায়গায় ভালো করে মশারি গুঁজতে হবে। ধান কাটার সময় মাঠে লাঠি দিয়ে ঠুকলে তার কম্পনে সাপ পালিয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy