Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

তিন সপ্তাহ বৃষ্টি দিক প্রকৃতি, চান চাষিরা

জেলা উপ-কৃষি অধিকর্তা সমীর ঘোষ জানান, স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের তুলনায় জেলায় জুন-জুলাই মাসে বৃষ্টিপাতে ঘাটতি ছিল ২৫ শতাংশ। অগস্টে তা বেড়ে হয় ৩৪ শতাংশ।  সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৫৬ মিলিমিটার। গত ১০-১২ দিনে ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ধান বাঁচাতে যা সহায়ক  হবে।

তিন মাস বৃষ্টি হলে চাষের পক্ষে সুবিধা।

তিন মাস বৃষ্টি হলে চাষের পক্ষে সুবিধা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৪৬
Share: Save:

জুন, জুলাই, অগস্ট— টানা তিন মাস বৃষ্টির জন্যে হা-পিত্যেশ করে বসেছিলেন জেলার চাষিরা। আবহাওয়া দফতরের হিসেবে, তিন মাসে ঘাটতি ছিল বৃষ্টিপাতে। দোসর হয়েছিল, সারের জোগানের অভাব। সেপ্টেম্বরে ঠিকমতো বৃষ্টিপাতে স্বস্তি ফিরল।

জেলার কৃষিকর্তা ও চাষিদের বক্তব্য— ‘মরসুমের প্রথম দিকে বৃষ্টিপাতে ঘাটতির জন্য ধানচাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি। যত জমিতে ধান রোয়া হয়েছে, তা বাঁচাতে চলতি মাসে যথাযথ বৃষ্টি হওয়ায় সুবিধা হবে।’

জেলা উপ-কৃষি অধিকর্তা সমীর ঘোষ জানান, স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের তুলনায় জেলায় জুন-জুলাই মাসে বৃষ্টিপাতে ঘাটতি ছিল ২৫ শতাংশ। অগস্টে তা বেড়ে হয় ৩৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৫৬ মিলিমিটার। গত ১০-১২ দিনে ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ধান বাঁচাতে যা সহায়ক হবে।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কাগজ-কলমে জেলায় ধান রোয়া শেষ হয় ১৫ অগস্টের মধ্যেই। কিন্তু এ বার পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে সেই কাজ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিল। অগস্টের শেষ ভাগে বৃষ্টি হওয়ায় চাষিরা বেশ কিছু জমিতে ধানের চারা রোপণ করলেও, জেলায় ধান চাষে ৩ লক্ষ ১৫ হাজার হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি। জেলা সহ অধিকর্তা (তথ্য) অমর মণ্ডল বলেন, ‘‘বৃষ্টি বঞ্চিত বীরভূমে চলতি বছর ধান রোপণ করা গিয়েছে ২ লক্ষ ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৯১ শতাংশের একটু বেশি।’’

তার সঙ্গে জুড়েছে সারের জোগানের সমস্যা। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় রাসায়নিক সার আসে রেলপথে। পূর্ব রেলের অণ্ডাল-সাঁইথিয়া শাখার সাঁইথিয়া স্টেশনে রয়েছে জেলার একমাত্র ‘রেক পয়েন্ট’ (যেখানে সার নামানো হয়)। কিন্তু নবীকরণ বা সংস্কারের কাজের জন্যে এপ্রিল মাস থেকে সেটি বন্ধ। কৃষিকর্তাদের বক্তব্য, বর্ষার সময়ে সারের চাহিদা বেশি হয়। এক বার ধান রোয়ার সময়ে। দ্বিতীয় বার চাপান বা নাইট্রোজেন ঘটিত সার দেওয়ার সময়ে। প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, প্রয়োজনের সময় জেলার কোথাও সার নামানো যায়নি। একমাত্র উপায় ছিল, পড়শি মুর্শিদাবাদ ও পূর্ব বর্ধমান থেকে সার নিয়ে আসা।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দিকে সারের তত সমস্যা না হয়নি। কারণ, শেষ বেলায় চাষিরা বেশির ভাগ জমিতে ধান লাগিয়েছেন। ধানগাছের বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে রোপণের তিন সপ্তাহ পরে ‘চাপান’ বা নাইট্রোজেন ঘটিত সার দিতে হয়। এ মাসের প্রথম থেকে সারের চাহিদা বেড়ে যায়। বাইরে থেকে সার আনতে গিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। সময় ও খরচ বেড়েছে। জোগানও অপ্রতুল। জেলা উপ-কৃষি অধিকর্তা সমীর ঘোষ জানান, এই সময়ে ৩১ হাজার মেট্রিকটন সার লাগে। দু’দিন আগে ১২ হাজার মেট্রিক টন সারের ঘাটতি ছিল। বুধ ও বৃহস্পতিবার জেলায় সার এসেছে। ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আরও ৫ হাজার মেট্রিক টন সার আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সমীরবাবুর মন্তব্য, ‘‘দুবরাজপুর, রাজনগর, খয়রাশোল, সিউড়ি ১ ও মহম্মদবাজারে বৃষ্টির অভাবে বেশ কিছু জমি অনাবাদি রয়েছে। সারের সমস্যা সেই ব্লকগুলিতেই বেশি। সমস্যা মেটানোর সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ প্রশাসনিক সূত্রে খবর, অগস্টের শেষ পর্যন্ত লাগানো ধান বাঁচাতে সহায়ক ভূমিকা নিয়েছে সেপ্টেম্বরের বৃষ্টি। চলতি মাসে নিয়মিত বৃষ্টি কিছুটা হলেও আশ্বস্ত করেছে চাষিদের। জুন মাসে স্বাভাবিকের মাত্র ৭৫ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়েছিল। জুলাইয়েও একই হাল ছিল। সে মাসে জেলায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩২৪.৫ মিলিমিটার। বৃষ্টি হয়েছিল ২৪৩ মিলিমিটার। ২৯৫.৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল অগস্টে। হয়েছিল ১৯৩.৬ মিলিমিটার। সেপ্টেম্বর আশার আলো দেখিয়েছে। কৃষি দফতর ও জেলার চাষিদের একটাই চাওয়া— এই ধারাবাহিকতা আরও তিন সপ্তাহ বজায় রাখুক প্রকৃতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rain Farmer Cultivation Suri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE