Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নাবালকের হাতে ছুটছে টোটো, শঙ্কা বোলপুরে

বয়স মেরেকেটে ১২ কী ১৩, তাতে কী! গা়ড়ি-ভর্তি যাত্রী তুলে বোলপুর শহর জুড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে নাবালক টোটো চালকেরা। অভিযোগ, না আছে অভিভাবকের শাসন, না আছে পুরসভা কিংবা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ। সংখ্যায় ওই চালকেরা এতই বেশি গন্তব্যে পৌঁছতে হলে সেই গাড়িতে বসা ছাড়া জো নেই। কখন, কী বিপদ ঘটে যায়— সিঁটিয়ে থাকেন অনেকেই।

সারথি: টোটোচালকের আসনে। বোলপুরে। নিজস্ব চিত্র

সারথি: টোটোচালকের আসনে। বোলপুরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:০০
Share: Save:

বয়স মেরেকেটে ১২ কী ১৩, তাতে কী! গা়ড়ি-ভর্তি যাত্রী তুলে বোলপুর শহর জুড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে নাবালক টোটো চালকেরা। অভিযোগ, না আছে অভিভাবকের শাসন, না আছে পুরসভা কিংবা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ। সংখ্যায় ওই চালকেরা এতই বেশি গন্তব্যে পৌঁছতে হলে সেই গাড়িতে বসা ছাড়া জো নেই। কখন, কী বিপদ ঘটে যায়— সিঁটিয়ে থাকেন অনেকেই।

২০১৩ সালে বোলপুরে টোটো চলাচল শুরু হয়। তখন শহরে হাতেগোনা ৫০ থেকে ৬০টি টোটো চলত। প্রশাসনেরই একটি সূত্রের খবর, এখন সেই সংখ্যা প্রায় তিন হাজার ছাড়িয়ে যাবে। তবে সব বোলপুরের নয়। পাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রচুর টোটো ঢোকে শহরে। তাতেই ভিড় বেড়েছে বোলপুরে। অভিযোগ, গত কয়েক বছরে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়েছে টোটোর সংখ্যা। যার ফলে ছোটখাটো দুর্ঘটনা, মদ্যপ অবস্থায় টোটো চালানো, অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়া নিয়ে নানা অসন্তোষ ছিলই। এখন দোসর হয়েছে নাবালক টোটো চালকদের দৌরাত্ম্য।

দিনভর বোলপুর শহর ঘুরে দেখা গেল, নাবালক চালকদের আধিক্য থাকছে সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার পরে। এক নাবালক চালককে প্রশ্ন করে জানা গেল, পাড়ার মাঠে টোটো চালানো শিখেছিল। এখন সে বোলপুরের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া। বাবা, দাদা দু’জনেই টোটো চালান। কোনও কারণে যদি কেউ টোটো নিয়ে না বের হন, সে নিজেই টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। ওই ছাত্রের কথায়, ‘‘কেউ আটকালে কেন শুনব। পড়াশোনার থেকেও আমার টোটো চালাতে আর খেলাধুলো করতেই বেশি ভাল লাগে।’’

এক নাবালক টোটো চালকের গাড়িতে যাত্রী হিসেবে বসেছিলেন বর্ধমানে কর্মরত এক নিত্যযাত্রী। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সকালবেলায় ট্রেন ধরার খুব তাড়া থাকে। সে সময় যে টোটো পাই, সেটাতেই উঠে বসি। তখন আর দেখার সময় থাকে না, যে টোটো চালাচ্ছে সে নাবালক, না সাবালক। অনুচিত জেনেও গন্তব্যে পৌঁছনোর স্বার্থে এ কাজ করতেই হয়।’’ এক টোটো চালকের বাবার কথায়, ‘‘ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। কষ্ট করে দুটো টিউশনও দিয়েছি সামনে মাধ্যমিক বলে। কিন্তু, ওর নেশা টোটো চালানোয়। বাড়ি ফিরেই টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। আমারও একটু বিশ্রাম নেওয়া হয়।’’ যদি পুলিশে ধরে? নির্দ্বিধায় বললেন, ‘‘দেড় বছর হল ছেলে এ ভাবে টোটো চালাচ্ছে। আজ পর্যন্ত তো কোনও দিন ধরেনি।’’ এই অবস্থায় বোলপুরবাসীর অনেকের প্রশ্ন, কেন টোটো নিয়ন্ত্রণ করছে না জেলা পুলিশ, প্রশাসন কিংবা পুরসভা?

কথা বলে জানা গেল, টোটো নিয়ে নানা সমস্যায় জেরবার বোলপুর পুরসভা এবং বোলপুর টোটো চালক শ্রমিক ইউনিয়ন। উপ-পুরপ্রধান নরেশচন্দ্র বাউড়ি জানান, টোটো নিয়ে রীতি মতো দুঃশ্চিন্তায় থাকেন নিজেও। অনুরোধ, উপরোধের রাস্তায় হেঁটেই এত দিন যা কিছু করা হয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, শুধুমাত্র পুলিশ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দুর্গাপুজো, বসন্ত উৎসব, পৌষমেলা, রথযাত্রা, মহরম— এই সব অনুষ্ঠানেই টোটো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। বাকি সময় নাগালের বাইরে চলে যায়।

বোলপুর টোটো চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি গোপাল হাজরা জানালেন, বর্তমানে ইউনিয়নভুক্ত টোটোর সংখ্যা এবং ইউনিয়নে নেই যে রকম টোটোর সংখ্যা প্রায় সমান। ইউনিয়নভুক্ত টোটো চালকদের প্রায়ই বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এমনকি টোটোর নম্বর ধরে কোনও যাত্রী অভিযোগ জানালে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যাঁরা ইউনিয়নভুক্ত নন, সে সব ক্ষেত্রে কিছু বলার অধিকার নেই তাঁদের।

কিছু টোটো চালক আবার আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘‘কয়েক জন চালকের জন্য সকলের বদনাম হচ্ছে। এত বছর টোটো চালাচ্ছি, এখনও কোনও প্রশাসনিক নম্বর পর্যন্ত পাইনি। শুধু ইউনিয়নের নম্বর রয়েছে। গ্রাম থেকেও অনেক চালক নিত্যদিন বোলপুরে আসছেন। তাতেও সমস্যা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Toto Minor Bolpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE