Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সতর্কবার্তায় রাতভর জাগল নদীর দু’পাড়

খরাস্রোতা ময়ূরাক্ষী দু’কূল ছাপিয়ে ফুঁসছে। কানা নদী কানায় কানায় ভর্তি। যে কোনও সময় বাঁধ ভেঙে প্লাবন হতে পারে। রবিবার রাতে ওই এমন দুর্যোগের পরিস্থিতিতেই প্রশাসনের তরফে নদী তীরবর্তী শহর থেকে গ্রাম, সর্বত্র শুরু হল মাইকে সতর্কবার্তা প্রচার— মশানজোড় ড্যাম ও তিলপাড়া ব্যারাজ থেকে প্রচুর পরিমাণে জল ছাড়া হচ্ছে।

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ০১:১৮
Share: Save:

খরাস্রোতা ময়ূরাক্ষী দু’কূল ছাপিয়ে ফুঁসছে। কানা নদী কানায় কানায় ভর্তি। যে কোনও সময় বাঁধ ভেঙে প্লাবন হতে পারে।

রবিবার রাতে ওই এমন দুর্যোগের পরিস্থিতিতেই প্রশাসনের তরফে নদী তীরবর্তী শহর থেকে গ্রাম, সর্বত্র শুরু হল মাইকে সতর্কবার্তা প্রচার— মশানজোড় ড্যাম ও তিলপাড়া ব্যারাজ থেকে প্রচুর পরিমাণে জল ছাড়া হচ্ছে। ওই বার্তা পেয়েই মাথায় হাত পড়ল নদী দু’পাড়ের বাসিন্দাদের। নীচু এলাকার বাসিন্দারা রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ পোঁটলা-পুঁটলি নিয়ে ঘর ছাড়তেও শুরু করলেন। আবার কেউ কেউ টর্চ হাতে নদী পাড়ের উঁচু ঢিবিতে জড়ো হলেন। ঘন ঘন টর্চের আলো ফেলে দেখতে থাকেন জলের গতির হাল। সেই সঙ্গে মোবাইলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের দু’দশ মিনিট বাদে বাদে ফোন করে জানতে চাওয়া, ‘‘দাদা কতটা জল ছাড়ল? আর কতটা ছাড়বে?’’ এমনই নানা প্রশ্নের পর প্রশ্ন। সেই সঙ্গে রাতভর চলল দিনের আলো ফোটার প্রতীক্ষা।

প্রশাসন সূত্রের খবর, অনবরত বৃষ্টি ও ঝাড়খণ্ডের জলাধারগুলি থেকে ব্যাপক হারে জল ছাড়ার কারণে গত কয়েক দিন ধরেই ময়ূরাক্ষী নদীতে ৩০-৪০ হাজার কিউসেক জল সব সময়ই ছাড়া হচ্ছিল। এরই মধ্যে মশানজোড়ের ক্যাচমেন্ট এলাকায় প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হওয়ায় রবিবার জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয় বাড়তি জল ছাড়ার। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিকেল ৪টে নাগাদ তিলপাড়া ব্যারাজ থেকে ৫০ হাজার কিউসেক মতো জল ছাড়া হয়। নদী ফের ফুলে ফেঁপে ওঠে। পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হতে পারে, এই আশঙ্কায় সন্ধেয় জরুরি বৈঠকে বসেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিক ও জেলা প্রশাসনের কর্তারা। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘মশানজোড় ড্যাম্পে যে হারে জল বাড়ছে এবং ড্যাম্প বাঁচাতে যে হারে জল ছাড়া হচ্ছে, তাতে তিলপাড়া ব্যারাজের পক্ষে ওই জল ধরে রাখা সম্ভব নয়। মশানজোড় অপেক্ষ তিলপাড়ার জল ধরে রাখার ক্ষমতা অনেক কম। তাই বিপদ আঁচ করে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় নদী তীরবর্তী ও নীচু এলাকার লোকজনদের রাতেই সাবধান করে দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে নিরাপদ স্থানে সরানোর হবে।’’

সোমবার সকালেও আতঙ্ক কাটেনি ওই দুই নদীর চরে থাকা ঘাশবেড়া, কুলতোড়, বড়াম, কাটুনিয়া, বেহিড়া প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দাদের। কল্পনা বিবি, শেখ মেহেরুদ্দিন, উত্তম মন্ডলরা বলেন, রবিবার সকাল পর্যন্ত দুই নদীর জল অনেকটা কমে যাওয়ায় কিছুটা হাঁফ ছাড়ি। কিন্তু, বিকেল থেকে গ্রামের দু’পাশের দুই নদীই গর্জন করতে করতে ফুলে ফেঁপে ওঠে। নদী রূপ দেখে ভয়ে সিঁটিয়ে যাই!’’ তাঁরা জানান, এমনিতেই গ্রামগুলির সঙ্গে বাইরের জগতের কার্যত কোনও যোগাযোগ নেই। ভরসা শুধু মোবাইল। তার উপর গত চার দিন থেকে বিদ্যুৎ নেই। ফলে বেশির ভাগ বাসিন্দাই চার্জের অভাবে মোবাইল ব্যবহার করতে পারছেন না। উত্তমরা বলেন, ‘‘দু’চারজনের মোবাইলে খবর আসে রাতে আরও ৭০-৮০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হবে। ওই খবর শোনার পর থেকে অনেকেই নদীর পাড়ে বসে ভয়ানক আতঙ্কে রাত কাটায়। এমনকী বহু গ্রামে কান্নার রোলও পড়ে যায়।’’

একই ছবি ছিল মাঠপলসা ও দেড়িয়াপুর পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রাম এবং সাঁইথিয়ার নদী সংলগ্ন নীচু এলাকাতেও। অনেকেই নদী বাঁধে বা নদীর উঁচু ঢিবিতে চেপে টর্চ হাতে সারারাত নদীর দিকে নজর রেখে জেগে কাটিয়েছেন। অন্য দিকে পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা— সবার থেকেই মাইকে প্রচার করা হয় সাবধান বাণী। স্থানীয় সাউলডিহির বাসিন্দা তথা তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য সাধন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘‘একে নদী ভর্তি জল। তার উপর আরও জল ছাড়ার খবর। আমরা ঘোর আতঙ্কে একটা রাত কাটালাম। সারা রাত টর্চ হাতে নদীর জল দেখছি। জল বাড়লেই গাঁ ঘরে খবর দিতে হবে।’’ তাঁর অভিযোগ, জলের খবরের জন্য রাতে বারবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি মহম্মদবাজার সেচ দফতরের এসডিও।

অভিযুক্ত আধিকারিকের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলেন, ‘‘ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার বা বড়সড় ক্ষতি যাতে না হয়, সে জন্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন আলোচনা করে জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। জেলায় কোথাও তেমন বন্যা বা বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sainthia Flood alert P Mohan Gandhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE