বাঁকুড়া শহরের নতুনগঞ্জে ট্রান্সফর্মারের পাশেই প্লাস্টিকের ছাউনির নীচে চায়ের দোকান। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
চায়ের ঝুপড়ি দোকান। ঠিক তার পাশেই বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার। বাসিন্দাদের দাবি, মাঝে মধ্যেই সেই ট্রান্সফর্মারে আগুনের ফুলকি ছোটে। জ্বলতে দেখা যায়! বাঁকুড়া শহরের ঘিঞ্জি এলাকা নতুনগঞ্জ বাজারে রাস্তার পাশে বহু বছর এ ভাবেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে ওই দোকান। তবে আগুনের ফুলকি কোনও ভাবে ওই দোকানের উপর পড়লে কী হতে পারে, কলকাতার বাগড়ি মার্কেটের ঘটনার পর তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। শুধু ওই এলাকাই নয়, চর্চায় উঠে আসছে শহরের নানা এলাকার এমনই বেশ কিছু জায়গা। সংশয় যে পুরোমাত্রায় রয়েছে, তা মানছেন দমকলের আধিকারিকেরাও।
বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, শহরের ঘিঞ্জি বাজারগুলিতে এমনই ঝুঁকি নিয়ে চলতে থাকা দোকানের সংখ্যা কম নয়। মুদিখানা, জামাকাপড়, ইমিটেশন গয়না, কসমেটিকসের দোকানের গায়েই আগুন জ্বালিয়ে চলছে চা-তেলেভাজার দোকান। আবার বহু দোকানের মাথার উপর দিয়ে তালগোল পাকিয়ে ঝুলছে বিদ্যুতের তার। স্থানীয়দের অভিযোগ, শহরে এমন বহু পুরনো দোকানও রয়েছে, যেখানে পুরনো আমলের বিদ্যুতের তার এখনও বদল করা হয়নি। ফলে সেখান থেকেও যে কোনও সময় শর্টসার্কিট ঘটে যাওয়ার অস্বাভাবিক কিছু নয় বলেই মত দমকল কর্মীদের। কিছু কিছু বাজারে অগ্নিসুরক্ষা বিধি মানা হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অগ্নিকাণ্ড ঘটে গেলে, তার মোকাবিলা করা যে সহজ হবে না, তা মানছেন দমকল থেকে পুরসভা ও প্রশাসনের একটা বড় অংশই।
সমস্যা কোথায়? দমকল কর্তৃপক্ষের সাফ কথা, অগ্নিকাণ্ডের গোড়াতেই দ্রুত দমকলের ইঞ্জিন পৌঁছতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা এড়ানো যায়। কিন্তু, কিছু ঘিঞ্জি বাজারে দমকলের ইঞ্জিন নিয়ে ঢোকার মতো রাস্তাই নেই। যেমন, বাঁকুড়া শহরে সুভাষরোড এলাকায় রাস্তার পাশে ফুটপাত তৈরির কাজ অনেকটাই শেষ হয়েছে। কিন্তু, প্রথম থেকেই দেখা যাচ্ছে, সেই ফুটপাথ দখলে চলে গিয়েছে ব্যবসায়ীদের হাতে। দোকানের বড় বড় দরজা খুলে রাখা হচ্ছে ফুটপাত জুড়ে। সেই দরজার সামনেই মালপত্রের পসরা সাজিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফুটপাতের নীচে বসে পড়ছেন হকারেরা। ক্রেতারা যানবাহন রাস্তার উপরই রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। পথচারীদেরও ফুটপাতের বদলে সেই রাস্তা দিয়েই হাঁটাচলা করতে হয়। এর জেরে গাড়ি বেড়ে গেলে রাস্তায় যানজট পাকিয়ে উঠছে।
জেলাশাসক পথে নেমে দেখলেন দখল হয়ে গিয়েছে নতুন তৈরি ফুটপাত। মঙ্গলবার।
বাঁকুড়া দমকল বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, “সুভাষ রোডের অবস্থা আমরা খতিয়ে দেখেছি। যা পরিস্থিতি, অবিলম্বে ফুটপাতের দখলদারি সরিয়ে ক্রেতাদের হাঁটার জায়গা করে দিতে হবে। রাস্তার পাশের হকারদের সরাতে হবে। তা না হলে কোনও ভাবেই দমকলের ইঞ্জিন নিয়ে বাজারে ঢোকা যাবে না। প্রশাসনকে এই সমস্যার কথা জানিয়েছি।”
কেবল সুভাষ রোড এলাকাই নয়, মাচানতলা, ভৈরবস্থানের মতো এলাকাগুলিতেও একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। শহরের রাস্তা দখলমুক্ত করে হকারদের সরিয়ে জালের বেড়া দিয়ে ঘিরে দিয়েছিল প্রশাসন। এই সব এলাকার হকারেরা এখন বেড়াজালের বাইরে রাস্তার উপরে বসে পড়ছেন। দমকল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, এর ফলে ভৈরবস্থান ও মাচানতলা এলাকার রাস্তাও অনেক সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়েছে।
বাজারে ঢোকার রাস্তা যে ক্রমশ আরও ঘিঞ্জি হয়ে পড়ছে, তা মেনে নিচ্ছেন বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত। সুভাষরোড এলাকায় ফুটপাত বেদখল হয়ে পড়লে সমস্যা যে বাড়বে তা টেরও পেয়েছেন তিনি। মহাপ্রসাদবাবু বলেন, “রাস্তার পাশ থেকে হকারদের সরিয়ে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কোনও ভাবেই তাঁরা সরছেন না। ঘিঞ্জি রাস্তায় জরুরি পরিষেবার গাড়ি ঢুকতে পারবে না। সমস্যার কথা হকারদের বারবার বোঝানো হলেও তাঁরা কথা শুনতে নারাজ।”
মঙ্গলবারই বাঁকুড়া শহরের বাজার এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস। তাঁর নজরে উঠে এসেছে সমস্যাগুলি। জেলাশাসক জানান, তিনি মহকুমাশাসককে (বাঁকুড়া সদর) নির্দেশ দিয়েছেন রাস্তার পাশ থেকে ব্যবসায়ীদের সরাতে পদক্ষেপ করতে হবে। দমকল বিভাগের কাছ থেকেও শহরের বাজারগুলির পরিকাঠামো নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছেন তিনি। বিদ্যুৎ দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন, পুজোর আগেই বাজারের বিদ্যুতের তার পরীক্ষা করে কোথাও কোনও সমস্যা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে।
জেলাশাসক বলেন, “ব্যবসায়ীদের মধ্যেও সতর্কতা বাড়ানো দরকার। দোকানগুলিতে যাতে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখা হয়, সে জন্য ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠক করব। বাজারগুলির জন্য বড়মাপের ভ্রাম্যমাণ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা করা যায় কি না তা নিয়ে পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy