উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলছে নার্সারি পালন। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।
প্রথাগত পদ্ধতি থেকে সরে এসে এ বার উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে নার্সারি পালন শুরু করেছে জেলা বন দফতর। এমন ছবিই দেখা যাচ্ছে গাছের চারা তৈরির ছবি চোখে পড়ল দফতরের দুবরাজপুর রেঞ্জ অফিসে।
এমনিতে, প্রতি বর্ষায় অর্থাৎ জুন মাসে বন দফতর প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগায়। সেই জন্য নিজস্ব নার্সারিতে ফেব্রুয়ারি থেকে প্রয়োজনীয় চারা তৈরি করে থাকে বন দফতর। মাটিতে মাদার বেড তৈরি করে বা পলি পটে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা তৈরি হয়। সেই চারাই বন দফতরের জন্য নির্দিষ্ট বিভিন্ন প্রান্তে লাগানো হয়। কিন্তু, যে পরিমাণ চারা লাগানো হয়, তার অনেকটাই বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়। যার অন্যতম কারণ অবশ্যই উন্নত মানের চারা গাছের অভাব। এ বার তাই নতুন পদ্ধিতিতে শুরু হয়েছে নার্সারি। সম্প্রতি দুবরাজপুর রেঞ্জ অফিসে গিয়ে দেখা গেল, কার্যালয়ে বাঁ দিকের জমিতে তৈরি নার্সারি। সারি সারি সাজানো লোহার টেবিল তার উপর। তার পরেই ছোট ছোট প্লাস্টিক পাত্র বা ‘রুট ট্রেনার’-এ বসানো আকাশমুনি, প্রিয়া শাল, অর্জুন, বহেড়া, নিম, চিকরাশী, চটরা, শিরিষ ইত্যাদি গাছের একটু বড় আকারের চারাগাছ। একটু দূরে অপেক্ষাকৃত ছোট গাছগুলি ‘হার্ডেনিং শেড’ বা ছাউনির মধ্যে রাখা। বীজ থেকে সবে অঙ্কুরোদগম হয়েছে এমন চারা রয়েছে ‘জার্মিনেশন শেডে’র মধ্যে। পাশে ‘সিড গোডাউন’। চারাগাছগুলিতে জল দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। সঙ্গে জৈব সার তৈরির ব্যবস্থাও। গাছের দেখভাল করছেন যাঁরা, তাঁদের জন্যও শেড। যাকে বলে এলাহি ব্যবস্থা!
বৃক্ষরোপণের জন্য বন দফতর এত সতর্কতা নিচ্ছে?
ভুল ভাঙালেন রেঞ্জ অফিসার কুদ্দুস হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘বন দফতর দেখভাল করলেও জাপানি অর্থ সাহায্য গড়ে উঠেছে এই নার্সারি। ইমপ্লেমেন্টিং অথোরিটি ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট অ্যান্ড বয়োডায়োভার্সিটি কনজার্ভেশন’। জেলায় বারোটি বনরক্ষা কমিটিকে চিহ্নিত করে, তাদের বাছাই করা জায়গায় ওই চারাগুলি নিয়ে যাবে। এতে উন্নতমানের চারাগুলিকে বাঁচানো তুলনায় অনেক সহজ হয়।’’
বন দফতর সূত্রের খবর, জঙ্গলের ‘ইকো সিস্টেমে’র উন্নতি ঘটানোর মানে হল, যেখানে গাছপালা কম বা একে বারেই নেই, সেই সব অঞ্চল বেছে নিয়ে সুপরিকল্পিত ভাবে গাছ লাগানো এবং জঙ্গল তৈরি। এর ফলে জীবজগৎ ও গাছপালার সহাবস্থান ঘটে। সেই সঙ্গে জঙ্গলনির্ভর মানুষের জীবন-জীবিকা তথা আর্থসামাজিক মানোন্নয়ন ঘটানো যায়। জাপানি সংস্থা ‘জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সি’র (জাইক) অর্থ সাহায্যে রাজ্য বন দফতর সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
দফতর সূত্রের খবর, ভারত-জাপান পারস্পরিক বোঝাপড়ার পরে ২০১২ সালের মার্চে ভারত সরকারের সঙ্গে জাপানের ওই সংস্থার একটি ঋণ চুক্তি হয়। ভারত সরকারের পক্ষে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট অ্যান্ড বয়োডাইভারসিটি কনজার্ভেশন’ ওই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব ও নজরদারিতে রয়েছে। মোট আট বছর ধরে তিনটি পর্যায়ে কাজ হওয়ার কথা। প্রস্তুতিতে দু’বছর, মূল কাজ করার জন্য আরও চার বছর এবং শেষ দু’বছর। বর্তমানে প্রকল্পটি প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের মাঝামাঝি রয়েছে। এই জেলায় দুবরাজপুর ও সিউড়ির ছোরায় দু’টি নার্সারিতে ওই প্রকল্পের চারা তৈরির নার্সারি তৈরি হয়েছে। সেই চারাগুলিই মহম্মদবাজার, বোলপুর, রাজনগর, সিউড়ি ও দুবরাজপুরের ২২৭ হেক্টর জমিতে লাগানো হবে। দেখভাল করবেন জেলার মোট ২০২ বনরক্ষা কমিটির মধ্যে বাছাই করা ১২টি কমিটি।
বীরভূমের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার সন্তোষা জি আর বলেন, ‘‘গাছের শিকর ছিঁড়ে গিয়ে বা অনুন্নত পদ্ধতিতে গাছ লাগানো হলে, সেই গাছ বেঁচে থাকার সমস্যা দেখা দেয়। এখানে যে যত্নে চারা তৈরি হচ্ছে, বৃক্ষরোপণ হলে ওই গাছের চারা বেঁচে থাকা এবং তার দ্রুত বৃদ্ধি একপ্রকার নিশ্চিত। ইতিমধ্যেই দু’টি নার্সারিতে ৬৬ লক্ষ টাকা এসেছে। গাছ লাগানোর জন্য আরও প্রায় দেড় কোটি টাকা আসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy