Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ডাক হুলা পার্টিকে, রাজনগরে রাত জেগে পাহারা বনকর্মীদের

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ  রাজনগরের সীমানা পার করে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে ঝাড়খণ্ডের সোনাচূড়া জঙ্গলে অবস্থান করলেও, যে কোনও মুহূর্তে ফের রাজনগরে ফিরে আসতে পারে দলটি।

অনাহুত: লোকালয় লাগোয়া জঙ্গলে হাতির হানা। রাজনগরের কুড়ুলমেটিয়ায়। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

অনাহুত: লোকালয় লাগোয়া জঙ্গলে হাতির হানা। রাজনগরের কুড়ুলমেটিয়ায়। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা
রাজনগর শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩০
Share: Save:

মাঝে তিন বছরের ব্যবধান। বীরভূমের রাজনগরে ফের এল হাতি। এক বা দুটো নয়, পুরো ১৮টি হাতির একটি দল। দীর্ঘদিন পরে হাতি আসায় ডাক পড়ল হুলা পার্টির। বুধবার মাঝরাতের ঘটনা।

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত তিনটে নাগাদ ঝাড়খণ্ড থেকে হাতির একটি বড়সড় দল (যে দলে অন্তত ৪-৫টি ছোট হাতিও রয়েছে) রাজনগরের কুড়ুলমেটিয়া জঙ্গলে ঢোকে। গ্রামে যাতে হাতিরা না ঢোকে, তাই রাত জেগে পাহারায় ছিলেন বন দফতরের কর্মী ও আধিকারিকেরা এবং রাজনগরের হিরাপুর গ্রামের হুলাপার্টির সদস্যেরা। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ রাজনগরের সীমানা পার করে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে ঝাড়খণ্ডের সোনাচূড়া জঙ্গলে অবস্থান করলেও, যে কোনও মুহূর্তে ফের রাজনগরে ফিরে আসতে পারে দলটি।

এত দিন পরে এলাকায় হাতি ঢুকেছে। হাতি-দর্শনের কৌতূহলের সঙ্গে তাই একটা ভয়ও কাজ করছে এলাকাবাসীর। স্থানীয় বাসিন্দা সুন্দর সরেন, মদন মারান্ডি, রসলি সরেন, কেবলচন্দ্র ঘোষ, মিহির মান্নারা বলছেন, ‘‘মাঠে এখন ধান নেই ঠিকই, তবে প্রতিটি বাড়িতে বা খামারে ধান মজুত রয়েছে। যে কোনও সময় ধানের গন্ধে হাতির পাল ঢুকে পড়ে ধান খায় বা ঘরবাড়ি ভেঙে দিতে পারে, সে আশঙ্কা থাকছেই।’’ বিশেষ করে চিন্তায় রয়েছেন রাজনগরের জঙ্গল লাগায়ো পটলপুর, গোয়াবাগান, কুরোলমেটিয়া, রুইদা, তালপুকুর, সুন্দরখেলে, সাহাবাদ গ্রামের মানুষজন।

ডিএফও (বীরভূম) হরিকৃষ্ণন বলেন, ‘‘সাধারণত ঝাড়খণ্ডের দুমকার মশানজোড় জঙ্গল থেকে হাতিরা রাজনগরের আসে। এ বারের দলটিও সেখান থেকে এসেছে। আমরা সতর্ক আছি। হাতির দলটিকে দ্রুত তাদের আসল বাসস্থানের দিকে ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’

জেলা বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজনগরের সিদ্ধেশ্বরী নদী ঘেঁষা গ্রামগুলিতে গত ১০-১২ বছর ধরে হাতিরা আসে। শুধু রাজনগর নয়, অজয় পেরিয়ে দুবরাজপুর, ইলামবাজার ও বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্ত দাপিয়ে বেড়িয়ে ফসলের ক্ষতি কখনও বা সরাসরি প্রাণঘাতী হামলা চালানোর নজিরও রয়েছে হাতির দলের। ফি-বছর দাঁতালদের বীরভূমে ঢুকে পড়া নিয়ে ফাঁপরে পড়েছিল বন দফতর। হাতি সমস্যা ঠেকাতে রাজনগরের হিরাপুর গ্রামের কিছু আদিবাসী যুবককে নিয়ে স্থানীয় ভাবে তাই হুলাপার্টি তৈরি করে বন দফতর। কিন্তু হঠাৎ করেই বছর তিনেক ধরে হাতিদের বীরভূমে আসায় ছেদ পড়ায় খানিকটা স্বস্তিতে ছিলেন বনকর্মী ও কর্তারা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যার খবরে ফের বন দফতর নড়েচড়ে বসেছে। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ধ্যার পরেই খয়রাশোলের বাবুইজোড়ের কাছাকাছি ঝাড়খণ্ড এলাকায় হাতিগুলির অবস্থান টের পাওয়া গিয়েছিল। সেই খবর পাওয়া মাত্রই দুবরাজপুর রেঞ্জ ও খয়রাশোল বিটকে সতর্ক করা হয়। কিন্তু, কিছুক্ষণের মধ্যেই হাতিগুলি তাদের অবস্থান বদলে ঝাড়খণ্ডের রাজনগর লাগোয়া অংশের দিকে এগোতে থাকে। হাতিগুলির অবস্থান বুঝতে তড়িঘড়ি স্থানীয় হুলাপার্টি নিয়ে হাতিদের রাজনগরে ঢোকার করিডরে পৌঁছে যান রাজনগর ও সিউড়ি ১—এই দু’টি রেঞ্জের রেঞ্জার নির্মল বৈদ্য, সৌমেন রায়। কিন্তু রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও হাতিদের কোনও খোঁজ না থাকায় তাঁরা বাড়ির বা আবাসনের দিকে সবে ফিরছেন, তখনই খবর পান হাতির দল এসে হাজির রাজনগরের কুড়ুলমেটিয়ার জঙ্গলে। ফের ঘটনাস্থলে গিয়ে রাতভর পাহারা চলে।

ওই দুই রেঞ্জার ও হুলা পার্টির সদস্যেরা জানান, তাঁরা জানতে পারেন হাতির দলটি আম্বা, খাজুরি, লোহারপাড়া, বাঁশবুনি হয়ে রাজনগরে পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার এলাকায় পৌছে যান ডিএফও এবং এডিএফও বিজনকুমার নাথ।

রাতে পৌঁছলেও তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি করেনি হাতির দলটি। কিন্তু, সকাল থেকেই হাতি দেখতে উৎসাহী মানুষের ভিড় জমতে থাকে। বন দফতরের দাবি, অনেকেই বিরক্ত করতে থাকেন হাতিগুলিকে। ক্রমাগত ইটপাটকেল খেয়ে হতিগুলি একবার কুড়ুলমেটিয়া, আর একবার সোনচূড়া জঙ্গলের দিকে সরতে থাকে। হাতিদের যাতে বিরক্ত করা না হয়ে, তা নিয়ে বন দফতর গ্রামবাসীদের সতর্ক করলেও খুব একটা কাজ হয়নি।

বনকর্মীদের অভিজ্ঞতা বলছে, এ ভাবে মানুষের হাতে উপদ্রবের শিকার হয়ে অনেক সময়েই হাতির দল বড় ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে। তাতে প্রাণও গিয়েছে মানুষের। ফলে, রাজনগরেও একটা বিপদ না ঘটে, তা নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন বনকর্মী ও কর্তারা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কোনও অঘটন ঘটেনি।

বুধবার সন্ধ্যা থেকেই হাতি ফেরাতে অভিযান শুরু হয়েছে বলে বন দফতর সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elephant Forest Department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE