Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দোলাডাঙা হাত বদলের ভাবনা শুরু

দোলাডাঙা পিকনিক স্পট মানবাজার ১ পঞ্চায়েত সমিতিকে তুলে দিতে চাইছে বন দফতর। ইতিমধ্যে এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে।

দোলাডাঙার হাতছানি।—ফাইল চিত্র

দোলাডাঙার হাতছানি।—ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৬ ০২:৫০
Share: Save:

দোলাডাঙা পিকনিক স্পট মানবাজার ১ পঞ্চায়েত সমিতিকে তুলে দিতে চাইছে বন দফতর। ইতিমধ্যে এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে।

পুরুলিয়ায় পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে মানবাজারের দোলাডাঙা অন্যতম। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বন দফতরের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী বিলাসীবালা সহিস এই পিকনিক স্পটটির উদ্বোধন করেছিলেন। দফতরের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়েছিল, এখানে জেলার একটি আদর্শ পিকনিক স্পট হিসাবে গড়ে তুলতে যাবতীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ওই পর্যটন কেন্দ্রের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে বন দফতর।

দফতরের কর্মীদের একাংশই জানাচ্ছেন, আদর্শ পিকনিক স্পট হিসাবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। বরং দেখভালের অভাবে পিকনিক স্পটটি চূড়ান্ত অব্যবস্থার শিকার। বন দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘যদি কোনও সংস্থা বা সরকারের অন্য কোনও বিভাগ এর দায়িত্ব নিয়ে পরিচালনা করতে পারে, তাহলে হয়তো এর পুনরুজ্জীবন সম্ভব।

বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর জলাধারের পশ্চিমে মানবাজার শহর থেকে ১৬ কিমি পূর্বে দোলাডাঙা পিকনিক স্পটের অবস্থান। বিশাল নীল জল রাশি, সোনাঝুরির জঙ্গল, হিমেল বাতাস গায়ে মেখে নিতে বছরের প্রায় সব সময় এখানে ভিড় লেগে থাকত। শীতকালে পিকনিকের জন্য এখানে জায়গা পাওয়াই দুষ্কর ছিল। কিন্তু এখন পর্যটকদের আনাগোনার সংখ্যা কমে গিয়েছে।

মুকুটমণিপুর জলাধারের পশ্চিমে একটি মৃগদাব রয়েছে। মৃগদাবটি খাতায় কলমে রানিবাঁধ রেঞ্জের অধীনে। তার দু’কিমি পশ্চিমে দোলাডাঙা গ্রাম। একেবারে গোড়ার দিকে এই পিকনিক স্পটে দু’টি মোটরচালিত বোট ছিল। বনভোজনে আসা দলের জন্য দেওয়াল ও টিনের শেড দেওয়া রান্নাঘর ছিল। একসঙ্গে অন্তত ১০০ জন বসে খেতে পারে, এ রকম ছাউনি দেওয়া বারান্দা, ফুলের কেয়ারি, নলকূপ, শৌচালয় ছিল। কচিকাঁচাদের খেলার দোলনাও মজুত ছিল। দোলাডাঙা গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, নজরদারি না থাকায় এবং সংস্কারের অভাবে পিকনিক স্পটের অবস্থা বেহাল। দীর্ঘদিন ঠিকমতো নজরদারি না থাকায় বোট উধাও হয়ে গিয়েছে। সিমেন্টের বসার বেঞ্চও ভেঙে পড়ছে। নলকূপ অচল। রান্নার ছাউনির শেড উধাও। উনুনও ভেঙে পড়েছে। শৌচালয়গুলির দেওয়াল ধসে পড়ছে।

বন দফতর পঞ্চায়েত সমিতির হাতে পিকনিক স্পটের দায়িত্ব তুলে দিতে চায় কেন?

দফতরের কর্মীদের একাংশ জানান, দু’দশক আগেও কর্মী সংখ্যা দ্বিগুণ ছিল। অভিযোগ, অবসর নেওয়ার পরো ওই পদগুলি আর পূরণ হয়নি। আগে কয়েকজন অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করে পিকনিক স্পট দেখভালের কাজ চালানো হতো। কয়েক বছর হল আর্থিক অসুবিধা দেখিয়ে ওই অস্থায়ী কর্মীদের বাদ দেওয়া হয়েছে।

দফতরের এক জেলা কর্তা বলেন, ‘‘শুধু পিকনিক স্পট নয়, পর্যটকেরা এখানে এসে যাতে দু’দিন বিশ্রাম নিতে পারেন, সে জন্য ডর্মিটরি, আবাসগৃহ নির্মাণ করা হয়েছিল। একটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণেরও পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নজরদারি না থাকায় ওই আবাসগৃহের জানালা-দরজা উধাও হয়েছে।’’ ওই জেলা কর্তার আক্ষেপ, এত ভাল একটি স্পট নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে। কারণ হিসাবে তার ব্যাখ্যা, গত কয়েক বছরে কর্মী নিয়োগ হয়নি। আর্থিক অসুবিধাও রয়েছে। জেলা কর্তার আশা, পঞ্চায়েত সমিতি এর দায়িত্ব নিলে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করে চালাতে পারবে।

সহকারী বিভাগীয় বন আধিকারিক (দক্ষিণ) ব্যোমকেশ দত্ত বলেন, ‘‘দোলাডাঙা পিকনিক স্পটটি পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব মানবাজার ১ পঞ্চায়েত সমিতির হাতে তুলে দেওয়ার কথা হয়েছে। তবে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় এগোয়নি।’’ মানবাজার ১ বিডিও সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘দোলাডাঙা পিকনিক স্পটের পরিচালনার দায়িত্ব বন দফতর আমাদের হাতে দিতে চান। আমরাও নিতে আগ্রহী। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পরিচালনার দায়িত্ব ভার হস্তান্তর হয়নি।’’ তিনি জানান, মানবাজার থেকে দোলাডাঙা পর্যন্ত রাস্তার হাল ভাল নয়। এ কারণেও পর্যটকদের আকর্ষণ হারাচ্ছে ওই জায়গা। ওই রাস্তা প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পের অধীনে এনে রাস্তা সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে বলে বিডিও জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

doladanga forest department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE