Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ওটিপি না বলেও এটিএম থেকে উধাও ৩৮ হাজার! 

ছাত্রীর আক্ষেপ, ‘‘টিউশন পড়িয়ে এবং বাবার দেওয়া টাকা জমিয়ে অ্যাকাউন্টে ৩৯ হাজার ৬০০ টাকা জমিয়েছিলাম। কিন্তু, কেউ এ ভাবে আমার এটিএম ব্যবহার করে কী ভাবে পুরো টাকা তুলে নিতে পারে? যেখানে আমার কোনও ভূমিকাই নেই, সেখানে এমনটা ঘটবে কেন।’’

নম্রতা। নিজস্ব চিত্র

নম্রতা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৫
Share: Save:

কার্ড যাঁর, তিনি বসে আছেন বীরভূমের দুবরাজপুরে। তাঁর এটিএম কার্ড ব্যবহার করে টাকা উঠে গেল ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে!

বৃহস্পতিবার দুবরাজপুর থানা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় এমনই একটি কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ জানিয়েছেন নম্রতা চৌধুরী নামে এক ছাত্রী। নম্রতা ইন্দিরা গাঁধী ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি অনার্স নিয়ে তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন।

দুবরাজপুর থানায় নম্রতা লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, সেখানকার এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে তাঁর অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এটিএম কার্ডও ওই ব্যাঙ্কের। তিনি কারও সঙ্গে এটিএম কার্ডের পিন শেয়ার করেননি। মোবাইলে বা মেলে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড পাননি বা কাউকে তা জানাননি। অথচ ওই কার্ড ব্যবহার করে বুধবার রাত ১১টা বেজে ৩৭ মিনিট ও ১১টা ৪০ মিনিটে পর পর দু’বারে ৩৮ হাজার টাকা তোলা হয়েছে। মোবাইলে টাকা কাটার মেজেস পাওয়ার পর থেকেই উদ্বেগের মধ্যে কাটাচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার বাবা পপু চৌধুরীর সঙ্গে ব্যাঙ্কে এসে দেখেন আশঙ্কাই সত্যি। দেওঘর মন্দিরের সামনের একটি এটিএম থেকে তোলা হয়েছে টাকা।

ছাত্রীর আক্ষেপ, ‘‘টিউশন দিয়ে এবং বাবার দেওয়া টাকা জমিয়ে অ্যাকাউন্টে ৩৯ হাজার ৬০০ টাকা জমিয়েছিলাম। কিন্তু, কেউ এ ভাবে আমার এটিএম ব্যবহার করে কী ভাবে পুরো টাকা তুলে নিতে পারে? যেখানে আমার কোনও ভূমিকাই নেই, সেখানে এমনটা ঘটবে কেন।’’

ওই ছাত্রীর ‘ত্রুটি’ না থাকার পরেও যেহেতু এমন ঘটনা ঘটেছে, তাই অভিযোগ নেওয়ার পাশাপাশি, ব্যাঙ্কের ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট সেলে (সিএমএস) একটি অভিযাগ জানানো হবে বলে ছাত্রী ও তাঁর পরিবারকে আশ্বস্ত করেছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। দুবারজপুর থানা সূত্রেও খবর, অভিযোগ পুলিশের সাইবার সেলে পাঠানো হয়েছে। ওই ছাত্রী জানাচ্ছেন, এমনিতে এটিএম ব্যবহার করে কিছু কেনা বা টাকা তোলেন। এ ছাড়া প্রায়ই অনলাইনে কেনাকাটি করে থাকেন। সেখানে ওটিপি দিতে হয়। নম্রতার কথায়, ‘‘ওটিপি বা পিন সংক্রান্ত সতর্কতা যে জরুরি, তা আমার অজানা নয়। কিন্তু, রাতে পড়াশোনা করার সময় প্রথম ২০ হাজার টাকা তোলার মেসেজ পেয়ে খুব অবাক হই। কিছু বোঝার আগেই ফের ১৮ হাজার টাকার আরও একটা লেনদেন হয়।’’

বছর দেড়েক আগে সিউড়ি জেলা স্কুলের এক ইংরেজি শিক্ষকের সঙ্গে এমনই ঘটনা ঘটেছিল। তিনি সিউড়িতে। অথচ ইউরোপ ও কাতারে প্রায় ৪০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। পরে ব্যাঙ্ক অবশ্য টাকা ফেরত দেয়। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি ছিল, তথ্য হাতিয়ে ‘ডুপ্লিকেট’ কার্ড তৈরির চল দুষ্কৃতীদের মধ্যে রয়েছে। যার পোশাকি নাম ‘ক্লোনিং’ বা ‘স্কিমিং’। ওই শিক্ষকের কার্ডের তথ্য চুরি করে এ ভাবেই কার্ডের প্রতিলিপি তৈরি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছিল। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, নম্রতার ক্ষেত্রেও তেমন একটা কিছু ঘটেছে। যদিও কার্ড কী ভাবে ‘ক্লোনিং’ বা ‘স্কিমিং’ হল কী সেটা ভেবে পাচ্ছেন না দুবরাজপুরের যে ব্যাঙ্কে নম্রতার অ্যাকাউন্ট, সেই শাখার ম্যানেজার নীতিশ দত্ত। তিনি বলছেন, ‘‘ওই ছাত্রী যে কার্ড ব্যবহার করেন, সেটা গ্লোবাল কার্ড। সেটা ক্লোন বা স্কিমিং সহজ নয়। এই ধরনের জালিয়াতি রুখতেই গ্রাহকদের অনেক সুরক্ষিত ডিজিটাল চিপ বসানো গ্লোবাল কার্ড দিচ্ছে ব্যাঙ্ক। তার পরেও কী ভাবে সেটা ঘটল বুঝতে পারছি না।’’

জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলছেন, ‘‘অভিযোগ যখন হয়েছে, তখন আমাদের পক্ষ থেকেও তদন্ত হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bank Fraud ATM Dubrajpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE