Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ফল খারাপ, ছাদ থেকে ঝাঁপ ছাত্রীর

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে অসুস্থ অবস্থায় তাকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে সে। চিকিৎসা চলার সময়ে মৃত্যু হয় তার। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ইন্দাস শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:০৪
Share: Save:

মাধ্যমিকের টেস্টের ফল যে দিন বেরিয়েছিল, সে দিনই সৌর আলো বসানোর কাজ চলছিল স্কুলের ছাদে। খোলা ছিল ছাদের দরজা। দু’টি বিষয়ে পাশ করতে পারেনি মেয়েটি। ফল দেখার পরে বাকিদের এড়িয়ে চলে যায় ছাদে। কিছুক্ষণ পরেই শব্দ— প্রায় কুড়ি ফুট উঁচু থেকে নীচে এসে পড়েছে সে। আপাতত কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে ওই ছাত্রীর। বুধবার বাঁকুড়ার ইন্দাসের ঘটনা। মরসুমে নানা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।

বৃহস্পতিবার দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বাঁকুড়া শহরেও। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে অসুস্থ অবস্থায় তাকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে সে। চিকিৎসা চলার সময়ে মৃত্যু হয় তার। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে ওই ছাত্রী। ওই ছাত্রীর স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, সম্প্রতি মাধ্যমিকের টেস্টের ফল বেরিয়েছে। ফল ভাল হয়নি ছাত্রীটির। ফাইনাল পরীক্ষায় বসার জন্য আবেদনও করেনি সে। ছাত্রীটির বাবা দিনমজুরি করে সংসার চালান।

ইন্দাসের স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা জানাচ্ছেন, এ বার মাধ্যমিকের টেস্টে বসেছিল ১৪৬ জন। ৮৮ জন পাশ করে। বাকিরা কেউ দু’টি বিষয়ে ফেল, তো কেউ তিনটি। বুধবার দুপুরে রেজাল্ট টাঙিয়ে দেওয়া হয় স্কুলের নোটিস বোর্ডে। ওই ছাত্রী দু’টি বিষয়ে পাশ করতে পারেনি। স্কুলটির পরিচালন সমিতির সভাপতি বলছেন, ‘‘বরাবর সবাইকেই মাধ্যমিকে বসতে দেওয়া হয়। শুধু অভিভাবকদের ডেকে একটু নজর দিতে বলি।’’ স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার টেস্টে যারা ফেল করেছিল তাদের বলা হয়েছিল অভিভাবকদের বৃহস্পতিবার স্কুলে আনতে। মার্কশিট দেওয়া হবে অভিভাবকদের হাতে।

তার পরেই দোতলার ছাদ। মেঝেয় আছড়ে পড়া। ঘটনার পরেই টোটো ভাড়া করে ইন্দাস গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কিশোরীটিকে। স্কুল সূত্রে জানা যাচ্ছে, সেখানে এক্স-রে পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন, তার বাঁ হাত ভেঙে থাকতে পারে। রেফার করা হয় বর্ধমান মেডিক্যালে। সেখান থেকে পরে অভিভাবকেরা এসএসকেএমে নিয়ে যান বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি।

ওই ছাত্রীর বাবা পেশায় দিনমজুর। এ দিন ফোনে তিনি বলেন, ‘‘পাড়ার একটা ছেলের থেকে খবরটা পেয়ে ছুটে গিয়েছিলাম। ও পরীক্ষায় ফেল করে ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল।’’ মনোসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ জানাচ্ছেন, এই ধরণের প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা কারণ থাকে। চারপাশের পরিস্থিতি এক এক রকম ভাবে মানুষকে ছাদের কিনারায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করায়। বিশদে কথা না বলে আসল কারণ পর্যন্ত পৌঁছনো সম্ভব নয়। তবে মোহিতের অভিজ্ঞতা বলছে, কিছু ক্ষেত্রে অভিভাবককে স্কুলে তলব করাটা ছাত্র বা ছাত্রীর কাছে সরাসরি শাস্তির থেকেও ভয়ের হতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলে ডেকে পাঠালে অনেক অভিভাবকেরই এক দিনের রুজি নষ্ট হয়। সেটার প্রভাব সরাসরি বা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পড়ুয়ার উপরেও এসে পড়ে।’’

কোনও বিপদ ঘটে গেলে হয়তো স্কুলের ফেল করা ছেলে বা মেয়েটাই সবার আগে এগিয়ে যায়, কিন্তু সে জন্য পরীক্ষায় কোনও নম্বর থাকে না। উদাহরণটি দিয়ে মোহিত বলছেন, ‘‘একই গতে সবার মূল্যায়ন তো কখনওই সম্ভব নয়।’’ তাঁর মতে, এখন শিক্ষার যা ব্যবস্থা, তাতে পড়ুয়াকে জীবনের সঙ্গে যুঝতে শেখাতে পারে জীবন কুশলতা বা ‘লাইফ স্কিল এডুকেশন’। জীবন শৈলীর যে পাঠ সচরাচর স্কুলে দেওয়া হয়, তার থেকে এটি আরও বেশি কিছু শেখায়। বিশেষ জোর দেওয়া হয় পড়ুয়ার শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের খুঁটিনাটিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indus Suicide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE