Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলের সামনে পিষে গেল ছাত্রী, অগ্নিগর্ভ বিষ্ণুপুর

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, স্কুলে ঢোকার মুখে রাস্তা থেকে নামতে গিয়ে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় মন্দিরা। পিছন থেকে আসছিল গ্যাসের ট্যাঙ্কারটি। ততক্ষণে সেটির সামনে চাকা এগিয়ে গিয়েছে। পিছনের চাকাগুলি পিষে দেয় ছাত্রীটিকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।

বিনা-মেঘে: কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মন্দিরার (ইনসেটে) পরিজনেরা। ছবি: শুভ্র মিত্র

বিনা-মেঘে: কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মন্দিরার (ইনসেটে) পরিজনেরা। ছবি: শুভ্র মিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:১৭
Share: Save:

স্কুলে ঢোকার মুখেই গ্যাসের ট্যাঙ্কারে পিষে গেল নবম শ্রেণির ছাত্রী। ঘটনায় তেতে উঠল বিষ্ণুপুর ব্লকের বাঁকাদহ হাইস্কুল ও তার সামনের জাতীয় সড়ক। চলল লাঠি। কাঁদানে গ্যাস। শুক্রবার সকালের এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগের আঙুল তুলছেন মোতায়েন থাকা সিভিক ভলান্টিয়ার ও স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে বাঁকুড়া যাওয়ার জাতীয় সড়কের (৬০ নম্বর) ধারেই বাঁকাদহ হাইস্কুল। এখন সেখানে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টা। ইতিহাস পরীক্ষা দিতে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাচ্ছিল স্থানীয় চৌবেটা গ্রামের কিশোরী, ওই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী মন্দিরা ধীবর (১৪)। সঙ্গে ছিল সহপাঠী পূজা ধীবর। সে বলে, ‘‘আমি কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ পিছন থেকে জোর একটা শব্দ শুনে চমকে উঠি।’’

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, স্কুলে ঢোকার মুখে রাস্তা থেকে নামতে গিয়ে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় মন্দিরা। পিছন থেকে আসছিল গ্যাসের ট্যাঙ্কারটি। ততক্ষণে সেটির সামনে চাকা এগিয়ে গিয়েছে। পিছনের চাকাগুলি পিষে দেয় ছাত্রীটিকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, সড়কের ধারে মোরামের ফুটপাত বসে গিয়েছে। তাতেই চাকা পিছলে গিয়েছিল বলে উপস্থিত কিছু লোকজন দাবি করেন।

জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ। —নিজস্ব চিত্র

ঘটনার পরে ক্ষুব্ধ জনতা স্কুলে ঢুকে পড়ে। প্রধান শিক্ষকের ঘরের সামনে শুরু হয় প্রবল গোলমাল। লাগোয়া কুড়ি-পঁচিশটি গ্রামের ছেলেমেয়েরা বাঁকাদহ হাইস্কুলে পড়তে আসে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, স্কুলে ঢোকার আরও তিনটি গেট থাকলেও সেগুলিতে সব সময়ে তালা দেওয়া থাকে। ঝুঁকি নিয়ে জাতীয় সড়কের উপরের গেটটি দিয়েই যাতায়াত করতে বাধ্য হয় পড়ুয়ারা। এ দিন একটি গেটের তালাও ভেঙে দিতে দেখা যায় উত্তেজিত জনতাকে।

এ ভাবেই পেরিয়ে যায় প্রায় এক ঘণ্টা। মন্দিরার দেহ তখনও রাস্তায় পড়ে। থমকে রয়েছে যান চলাচল। স্কুলে আসেন এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাস। বিক্ষুব্ধ লোকজনের সঙ্গে আলোচনাতেও লাভ হচ্ছিল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিষ্ণুপুর থানা থেকে পুলিশের বাহিনী এসে পৌঁছয়। এসডিপিও বলেন, ‘‘মৃদু লাঠিচার্জ করতে হয়েছে। কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটাতে হয়েছে।’’ ঘটনার ঘণ্টা দুয়েক পরে দেহ উদ্ধার করতে পারে পুলিশ। স্বাভাবিক হয় যান চলাচল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্যাঙ্কার বাজেয়াপ্ত করে চালককে আটক করা হয়েছে। রুজু হয়েছে মামলা।

দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে রয়েছে ছাত্রীর সাইকেল ও মৃতদেহ। —নিজস্ব চিত্র

স্থানীয় বাসিন্দা সুরজিৎ দে, মন্দিরার কাকা ঝন্টু ধীবরেরা এ দিন অভিযোগ করেছেন, অনেক বার বলার পরেও স্কুলের অন্য গেটগুলি খোলা রাখা হয় না। যদিও সে কথা মানতে চাননি বাঁকাদহ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মধুসূদন মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সব গেটই খোলা রাখি।’’ যে গেটের তালা ভাঙা হয়েছে, সেটির ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওটা মাঠে যাওয়ার গেট। খেলা থাকলে খুলে দেওয়া হয়।’’ স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি সাদেকুর রহমান মণ্ডলও দাবি করেছেন অন্য গেটগুলি খোলা থাকে বলে। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের সামনের জাতীয় সড়কে যাতে স্পিড ব্রেকার বসানো হয়, সে জন্য আমরা আবেদন করব।’’ এসডিপিও জানান, মোতায়েন থাকা সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের সামনে যান নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এ বার থেকে কোনও পুলিশ আধিকারিককে রাখার চেষ্টা করব।’’

মন্দিরার বাবা রূপলাল ধীবর পেশায় দিনমজুর। দরিদ্র পরিবার। আরও এক মেয়ে রয়েছে তাঁদের। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সে। মন্দিরার মা অণুশ্রী ধীবর বলেন, ‘‘অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করছিল মেয়েটা। শুধু মুড়ি খেয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল।’’ আজ, শনিবার নবম শ্রেণির শারীরশিক্ষা পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। সেটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘‘শনিবার স্কুল খোলা থাকবে। এর পরে কী হবে না হবে, সেটা তখনই সবাইকে নিয়ে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bishnupur Accident Lathi Charge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE