Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
তিন বছর পরে বাড়ি ফিরছেন রাজস্থানের মেয়ে

শ্বশুরবাড়ি না যাওয়ার গোঁ ধরে বাঁকুড়ার হোমে

মেগা ধারাবাহিক ‘বালিকা বধূ’ দাদিসা-র অত্যাচার সহ্য করেও দাঁতে দাঁত চেপে সংসার করেছিল। তবে বাস্তবের ‘বালিকা বধূ’ যশোদা সমাজের রীতি নীতি-র বিরুদ্ধে গিয়ে ফেরার হয়েই কাটিয়ে দিলেন তিন-তিনটে বছর।

ফেরা: বাবার সঙ্গে বাড়ির পথে যশোদা। বাঁকুড়া স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র

ফেরা: বাবার সঙ্গে বাড়ির পথে যশোদা। বাঁকুড়া স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৩৯
Share: Save:

মেগা ধারাবাহিক ‘বালিকা বধূ’ দাদিসা-র অত্যাচার সহ্য করেও দাঁতে দাঁত চেপে সংসার করেছিল। তবে বাস্তবের ‘বালিকা বধূ’ যশোদা সমাজের রীতি নীতি-র বিরুদ্ধে গিয়ে ফেরার হয়েই কাটিয়ে দিলেন তিন-তিনটে বছর। শেষে হোমের কাউন্সিলরের অনেক বোঝানোয় বাড়ির ঠিকানা বলেন তিনি। হোম কর্তৃপক্ষ তাঁর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে সোমবার পরিবারের হাতে তুলে দিল যশোদাকে।

রাজস্থানের চিতোরগড়ের আমিরামার তরুণী যশোদা ডাঙ্গীকে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে মেদিনীপুরের গোদাপিয়াশাল স্টেশনে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখে বাঁকুড়া জিআরপি উদ্ধার করে। তাঁকে পাঠানো হয় বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসকের কাছে। সেই সময় যশোদা নিজের নাম গোপন করে নিজেকে ‘রাধিকা কৈলাশ বর্মা’ বলে পরিচয় দেন। নিজের বাড়ির ঠিকানাও ভুল জানিয়েছিলেন। তাঁর কাছ থেকে এর্নাকুল্লাম থেকে গুয়াহাটি যাওয়ার একটি টিকিট মিলেছিল। যা দেখে প্রাথমিক ভাবে তাঁকে এর্নাকুল্লামের বাসিন্দা বলেই ভেবেছিল জিআরপি। বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসকের নির্দেশে ওই তরুণীর ঠাঁই হয় বিষ্ণুপুরের সুমঙ্গলম হোমে।

সেখানে তাঁর কাউন্সেলিং করা শুরু করেন মণিকা সামন্ত। প্রথম দিকে কোনও ভাবেই নিজের সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলতেন না। এই ক’বছরে ধরে হোমেই আসন তৈরি, টেলারিং, ফুলদানি তৈরির মতো হাতের কাজ শিখেছেন তিনি। বাংলা ভাষাও অনেটাই রপ্ত করে ফেলেন। মণিকার সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ওই তরুণীর। মাস দেড়েক আগে মনের দরজা খুলে মণিকার কাছে নিজের আসল পরিচয় দেন তিনি। নিজের সম্পর্কে সব কথা খুলে বলেন।

মণিকাদেবী জানান, রাজস্থানের প্রথা মেনে ১২ বছর বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় যশোদার। এর পর থেকেই মাঝেমধ্যে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে থাকতে হতো তাঁকে। উনিশ বছর বয়স হতেই যশোদাকে পাকাপাকি ভাবে শ্বশুরবাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করে তাঁর বাবা। কিন্তু নিজের অমতে বিয়ে দেওয়া শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের পছন্দ হতো না তাঁর। তাই তিনি সেখানে যেতে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে বাবার সঙ্গে ঝগড়া বাঁধে যশোদার। বাড়ি থেকে কয়েক হাজার টাকা হাতিয়ে কোনও বেরিয়ে পড়ে ট্রেনে উঠে পড়েছিলেন তিনি। ইচ্ছে ছিল গুয়াহাটিতে মামাবাড়িতে যাবেন। কিন্তু ভুল ট্রেনে উঠে পড়ায় সব গোলমাল হয়ে যায়।

যশোদার কাছে সব শুনে মণিকা বাঁকুড়া সমাজ কল্যাণ দফতরের কাউন্সিলর মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নিয়ে যান তাঁকে। মুকুলদেবীই চিতোরগড়ের বড়িসাদ্রি মহকুমাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে যশোদার বাড়ির লোকজনের মোবাইল নম্বর জোগাড় করেন। সেই মোবাইলে ফোন করে জানা যায়, যশোদার পুরো পরিবার এখন কেরলে থাকেন। ফোনে যশোদার বাবা ও মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন তিনি।

এ দিন বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসকের নির্দেশ অনুসারে যশোদাকে তাঁর বাবা ভগবানলাল ডাঙ্গীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। ভগবানবাবু বলেন, “কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দিয়ে ভুল করেছিলাম। জোর করে তাঁকে সংসার করাতে গিয়েও ভুল করেছি।’’ বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসক অসীমকুমার বালা বলেন, “যশোদা এই দেশের মেয়েদের কাছে আদর্শ। ওঁকে পরিবারের হাতে তুলে দিলেও যাতে সমাজ কল্যাণ দফতর ও হোম কর্তৃপক্ষের কাউন্সিলরেরা নিয়মিত তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, সেই নির্দেশ দিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rajasthan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE