Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

গোষ্ঠমেলায় জাঁক খয়রাশোল, খড়িয়ায়

খয়রাশোলে শতাব্দীপ্রাচীন গোষ্ঠমেলা শুরু হল বৃহস্পতিবার। বলরাম মন্দির থেকে বলরাম জিউর বিগ্রহ নিয়ে আসা হল গোষ্ঠমেলা প্রাঙ্গণে। সঙ্গে কৃষ্ণ বিগ্রহও। স্থানীয় সূত্রে খবর, কার্তিক মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে কৃষ্ণ ও বলরাম গোচারণে গোষ্ঠে গিয়েছিলেন, এটা মেনেই বহু বছর ধরে এই মেলা হয়ে আসছে।

খড়িয়ার বিগ্রহ। নিজস্ব চিত্র

খড়িয়ার বিগ্রহ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খয়রাশোল ও মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:২১
Share: Save:

খয়রাশোলে শতাব্দীপ্রাচীন গোষ্ঠমেলা শুরু হল বৃহস্পতিবার। বলরাম মন্দির থেকে বলরাম জিউর বিগ্রহ নিয়ে আসা হল গোষ্ঠমেলা প্রাঙ্গণে। সঙ্গে কৃষ্ণ বিগ্রহও। স্থানীয় সূত্রে খবর, কার্তিক মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে কৃষ্ণ ও বলরাম গোচারণে গোষ্ঠে গিয়েছিলেন, এটা মেনেই বহু বছর ধরে এই মেলা হয়ে আসছে।

বলরাম সমিতির সম্পাদক রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সভাপতি বিশ্বনাথ ঠাকুর বলছেন, ‘‘৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো এই মেলা চলবে শনিবার পর্যন্ত। মেলায় শুধু খয়রাশোল নয়, দুবরাজপুর ও ঝাড়খণ্ডের মানুষও আসেন।’’

বলরাম মন্দিরের সেবায়েতরা মূলত ‘ঠাকুর’ উপাধিধারী। বর্তমানে ৬২ জন সেবায়েত রয়েছেন। অনেক বছর আগে মূলত তাঁদের উদ্যোগে এই মেলা হতো। বর্তমানে মেলা তাঁদেরই নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে গোটা খয়রাশোলের মানুষ এবং প্রশাসন। প্রবীণ সেবায়েতদের কথায়, ‘‘আমাদের পূর্বপুরুষ পর্ণগোপাল ঠাকুর বর্ধমানের মঙ্গলডিহি গ্রামে এই বিগ্রহ এনেছিলেন। তার পরে সেখান থেকে খয়রাশোলে বলরাম বিগ্রহ নিয়ে আসেন আমাদেরই বংশধরেরা। সেই থেকেই মেলা চলছে।’’

তাঁরা জানান, গোষ্ঠের দিন মন্দির থেকে বিগ্রহ নিয়ে গিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে রাখা হয় রাত আটটা পর্যন্ত। তার পরে বিগ্রহ মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়। প্রভু গোচারণে গিয়েছেন এটা মেনেই দুপুরে থালায় থালায় ভোগ নিয়ে যাওয়া হয় মেলার মাঠে। চলে পুজো, আরতি। বিগ্রহ নিয়ে যাওয়ার সময়ে শোভাযাত্রা এবং ৫০-৬০টি থালায় ভোগ পাঠানো দেখতে ভিড় জমে।

বৃহস্পতিবারও বলরামের মেলা প্রাঙ্গণে যাওয়া দেখতে ভিড় জমে মন্দিরে। শোভাযাত্রা সহকারে বিগ্রহ দুপুরে মেলা প্রাঙ্গণের স্থায়ী মঞ্চে পৌঁছলে ভিড় আরও বাড়ে।

এ দিন খয়রাশোলে দেখা গেল, মঞ্চ ঘিরে শ’দুয়েক স্টল, নাগরদোলা। মেলায় আসা দর্শকদের অনেকেই প্রথমে বিগ্রহ দর্শন করছেন। কেউ পুজো দিচ্ছেন, তার পরে মেলার ভিড়ে মিশে যাচ্ছেন।

খয়রাশোলে গোষ্ঠমেলা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

এ দিন দুপুরে রীতি মেনেই পৌঁছয় বনভোজনের সামগ্রী। ধুতি পরে সেবায়েত পরিবারের পুরুষেরা থালায়, থালায় নিয়ে এলেন ভোগ। সাজিয়ে রাখা হয় মঞ্চে। আরতির পরেই প্রসাদ নিয়ে আবার বাড়ির পথ ধরলেন তাঁরা।

জানা গিয়েছে, সন্ধ্যার পরে বিগ্রহ মন্দিরে ফিরে গেলেও মেলায় দর্শকদের মধ্যে আনন্দের খামতি থাকে না। সেবায়েতদের পরিবার তো বটেই, খয়রাশোলের বাড়িতে বাড়িতে এই সময় আত্মীয়স্বজন আসেন।

অন্য দিকে একই দিনে গোষ্ঠ পালিত হল দুবরাজপুরের গোশালায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, কয়েক দশক আগে এক সময় শতাধিক গরুর আশ্রয়স্থল ছিল দুবরাজপুরের এই গোশালা। গোষ্ঠের দিন দুবরাজপুর লায়েকপাড়ার মহাপ্রভু মন্দির থেকে বিগ্রহ নিয়ে আসা হতো সেখানে। বসত মেলা। এখন অবশ্য গরু নেই। মেলাও বসে না। তবে বহু প্রচীন সেই প্রথা মেনে এ বারও রামকৃষ্ণ আশ্রমের আয়োজনে ওই মন্দির থেকে মহাপ্রভুর বিগ্রহকে চৌদোলায় গোশালায় নিয়ে আসা হয়। রামকৃষ্ণ আশ্রমের শীর্ষসেবক সত্যশিবানন্দ বলছেন, ‘‘বিগ্রহ আনা, পুজোপাঠ, পংক্তিভোজে যোগ দেন বহু মানুষ।’’

মহম্মদবাজারের খড়িয়াতেও সাড়ে চারশো বছরের পুরনো গোষ্ঠ উৎসব পালিত হয়। কৃষ্ণের বিগ্রহকে ঘোরানো হয় গোটা গ্রাম। নিয়ে যাওয়া হয় গোষ্ঠতলায়। রাতেই ফের বিগ্রহ ফেরে রাজরাজেশ্বর মহাপ্রভুর আশ্রমে। গোষ্ঠতলায় বসে মেলা।পুজো কমিটির সম্পাদক আনন্দগোপাল কর্মকার জানান, এই এলাকার সব থেকে বড় উৎসব গোষ্ঠ। শুধু খড়িয়া নয় আশপাশের গ্রাম থেকেও অনেকে এখানে আসেন। বর্তমান সেবায়েত শিবানন্দ দাস জানান, গোষ্ঠের দিন ঠাকুরকে ভোরে জাগিয়ে জল, মিষ্টি দিয়ে মঙ্গলারতি করা হয়। তার পরে কীর্তন হয়। বেলা দু’টোর পরে ঠাকুর গোচারণে বের হন। বিগ্রহকে গ্রাম পরিক্রমা করানো হয়। অন্নভোগে দেওয়া হয় গোবিন্দভোগ চালের দু’রকমের পায়েস, ন’রকম ভাজা, মুগ ডাল,

মোচার ঘণ্ট, পাঁচমেশালি টক, সন্দেশ, বারো রকমের মিষ্টি। এ ছাড়াও হয় গাওয়া ঘিয়ে ভাজা লুচি, চিড়ের পায়েস, সন্দেশ। রাতের ভোগে থাকে লুচি, ফল ও দুধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gosto Mela Khoyrasol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE