Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
প্রকল্পে মিলছে খাদ্য

মিটছে অপুষ্টির সমস্যা

২০১৭ সালের শিশুদিবসে মানবাজারে মহকুমায় শিশুদের অপুষ্টি দূর করতে ‘শিশুসঙ্গী’ নামে বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছিল প্রশাসন। পুষ্টির মাত্রার নিরিখে এক দিন থেকে ৬ মাস বয়সের শিশুদের তিনটি বিভাগে ভাগ করেছিল মানবাজার মহকুমা প্রশাসন।

সমীর দত্ত
মানবাজার শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০১:৫৭
Share: Save:

কমছে ‘লাল’। চওড়া হাসি প্রশাসনের কর্তাদের মুখে।

২০১৭ সালের শিশুদিবসে মানবাজারে মহকুমায় শিশুদের অপুষ্টি দূর করতে ‘শিশুসঙ্গী’ নামে বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছিল প্রশাসন। পুষ্টির মাত্রার নিরিখে এক দিন থেকে ৬ মাস বয়সের শিশুদের তিনটি বিভাগে ভাগ করেছিল মানবাজার মহকুমা প্রশাসন। বয়সের অনুপাতে যাদের ওজন ও স্বাস্থ্য স্বাভাবিক, সরকারি থাকায় তাদের নামের পাশে সবুজ রং দেওয়া হয়েছিল। বেশি অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের নামের পাশে ছিল লাল রং। তুলনায় কম অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের নামের পাশে হলুদ রং দেওয়া হয়েছিল।

মহকুমার পাঁচটি ব্লকে এই প্রকল্পে শিশুদের পুষ্টি দেওয়ার কাজ চলেছে। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে মহকুমায় গুরুতর অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর (যাদের নামের পাশে সরকারি খাতায় লাল রং দেওয়া হয়েছিল) সংখ্যা কমেছে। এক সরকারি আধিকারিকের কথায়, ‘‘লাল কমায় বলা যেতেই পারে প্রকল্পে কিছুটা সাফল্য এসেছে।’’

শিশুদের অপুষ্টি দূর করার জন্য শিশু বিকাশ প্রকল্প রয়েছে। তা সত্ত্বেও শিশুসঙ্গী প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। মানবাজারের তৎকালীন মহকুমাশাসক সঞ্জয় পাল জানিয়েছিলেন, শিশুদের অপুষ্টি রোধ করার কাজে কোথাও কোথাও ‘ফাঁক’ থেকে যায়। সেই ‘ফাঁক’ চিহ্নিত করে অপুষ্টি প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নিতেই নয়া উদ্যোগ।

শুরু থেকেই ‘শিশুসঙ্গী’ প্রকল্পের কাজে যুক্ত রয়েছেন বরাবাজারের বিডিও শৌভিক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু নানা কারণে অনেকেই শিশুদের খাবার বাড়িতে নিয়ে যেতেন। ফলে শিশুদের জন্য বরাদ্দ খাবার আদৌ তাদের খাওয়ানো হত কি না, অথবা যে পরিমাণ খাবার শিশুদের জন্য বরাদ্দ হত তা তারা পেত কিনা, তা জানা সম্ভব ছিল না। আমরা শিশুসঙ্গী প্রকল্পে কেন্দ্রে বসিয়েই শিশুদের খাওয়ানোর ওপর জোর দিয়েছি।’’ এ ছাড়া যে সকল শিশুর চিকিৎসা প্রয়োজন, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং তাদের পরিচর্যা ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, তা নিয়মিত খোঁজ রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল বলে তিনি জানান।

বিডিও (মানবাজার ১) নীলাদ্রি সরকার বলেন, ‘‘প্রতিটি শিশুর দেখভালে জোর দেওয়ার জন্যে আমরা তাদের ‘স্বাস্থ্য দত্তকে’র ব্যবস্থা করেছিলাম। বিভিন্ন দফতরের আধিকারিক থেকে শুরু করে কর্মীরা একজন করে শিশুর ‘স্বাস্থ্য’ দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।’’ মানবাজার ১ ব্লকের ‘ফিল্ড ফেসিলেটর’ হিসাবে শিশুদের অপুষ্টি নিয়ে কাজ করেন সোমা দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘শিশুসঙ্গী প্রকল্প চালু হওয়ায় শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি অনেকটাই দূর করা সম্ভব হয়েছে।’’

কী বলছে তথ্য?

২০১৭ সালের নভেম্বরে মানবাজার ১ ব্লক এলাকায় ১৪৯ টি শিশু অতি অপুষ্টিতে ভুগছিল। সেই কারণে সরকারি খাতায় তাদের নামের পাশে ‘লাল রং’ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে ওই ধরনের শিশুর সংখ্যা কমে ৭০ হয়েছে। তেমনই মানবাজার ২ ব্লকে ওই ধরনের শিশুর সংখ্যা ১৪৩ জন থেকে কমে ৫২ হয়েছে। শিশুসঙ্গী চালুর আগে পুঞ্চায় অতি অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা ছিল ১৯৭ জন। বর্তমানে সেই সংখ্যা কমে ৫৯ হয়েছে। বরাবাজারে ওই সংখ্যা ২৫২ থেকে কমে ১৯ হয়েছে। বান্দোয়ানে ২৪২ থেকে কমে হয়েছে ১৪৭ জন।

প্রশাসনিক কর্তাদের আশা আগামী দিনে অতি অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা আরও কমবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Malnutrition Child Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE