Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ডেঙ্গি রোধে ছাড়া হল গাপ্পি মাছ

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে ডেঙ্গির মতো পতঙ্গবাহিত অসুখের প্রতিরোধে নামল বিষ্ণুপুর ব্লক প্রশাসন এবং পুরসভা। 

গাপ্পি। বিষ্ণুপুরে। নিজস্ব চিত্র

গাপ্পি। বিষ্ণুপুরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৯ ০০:০২
Share: Save:

দেরিতে শুরু হলেও চলতি বছরে ভালই বৃষ্টি হয়েছে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর পুর-এলাকা এবং সংলগ্ন এলাকায়। জলও জমেছে কোথাও কোথাও। তাই আগেভাগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে ডেঙ্গির মতো পতঙ্গবাহিত অসুখের প্রতিরোধে নামল বিষ্ণুপুর ব্লক প্রশাসন এবং পুরসভা।
মঙ্গলবার মশা প্রতিরোধে বিষ্ণুপুর ব্লক অফিসে ন’টি পঞ্চায়েতের প্রধানের হাতে তুলে দেওয়া হয় এক হাজারটি করে গাপ্পি মাছের চারা। পোনা প্রদান কর্মসূচি চলাকালীন উপস্থিত ছিলেন বিষ্ণুপুরের বিডিও স্নেহাশিস দত্ত, বাঁকুড়া জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষ মথুর কাপড়ি ও বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অনিমা বাউরি। বিষ্ণুপুর বিডিও স্নেহাশিস দত্ত জানান, ন’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে নানা ছোটবড় বদ্ধ জলাশয় বা ডোবা রয়েছে। সেখানে মশার লার্ভা থাকতেও পারে। তবে সেগুলি এই মুহূর্তে পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। সেই কারণে ওই জলাশয়গুলিতে গাপ্পি মাছ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য দফতরের উদ্যোগে ডেঙ্গির জীবাণুবহনকারী মশা নিধনের উদ্দেশ্যে ১৯, ২০ ও ২১ অগস্ট জেলা জুড়ে বিভিন্ন জলাশয়ে গাপ্পি মাছ ছাড়ার কর্মসুচি নেওয়া হয়েছে। বিষ্ণুপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সত্যদীপ আদক জানান, বিষ্ণুপুর পুরসভাকেও ৩৮ হাজার গাপ্পি মাছের চারা দেওয়া হয়েছে। বিষ্ণুপুর পুরসভার জনস্বাস্থ্য আধিকারিক তুহিন কুণ্ডু জানান, ১৯টি ওয়ার্ডে বিভিন্ন বদ্ধ জলাশয়ে এই গাপ্পি মাছ ছাড়া হবে।

সাধারণত, ডেঙ্গির জীবাণু বহন করে এডিস ইজিপ্টাই নামক মশা। এই মশার লার্ভা বংশবিস্তার করে বদ্ধ, পরিষ্কার জলে। আবার এই মশার লার্ভাই গাপ্পি মাছের প্রিয় খাবার। সে কারণে বদ্ধ জলাশয়ে থাকা মশার লার্ভা মারতে গাপ্পি মাছ ছাড়া হয়।
পুর কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গিয়েছে, পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে ৮, ৭ এবং ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। আগে যেখানে তিন জন সাফাইকর্মী প্রতি ওয়ার্ডে মশার লার্ভানাশক তেল ছড়াতেন, এখন সেখানে ৫ জন কর্মী কাজ করছেন। এই মুহূর্তে তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ২২টি সাব-সেন্টারে জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া, প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৫ জনের একটি দল গঠন করা হয়েছে, যাঁরা প্রতি মাসে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সমীক্ষা করছেন। কোনও গ্রামবাসী দীর্ঘসময় জ্বরে ভুগলে তাঁকে হেল্থ সুপারভাইজারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে তাঁর রক্ত পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

যদিও মশা নিধনে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে এ দিন অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পুরসভা লাগোয়া ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মুচিপাড়া, বাউরিপাড়ার বাসিন্দারা। ঘটনাচক্রে মুচিপাড়ার এক বদ্ধ জলাশয়ে এ দিন সাফাইকর্মীদের নিয়ে গাপ্পি মাছ ছাড়তে এসেছিলেন পুরসভার আধিকারিকেরা। তা দেখে ক্ষোভের সঙ্গে বাসিন্দারা জানান, মশার জ্বালায় তাঁরা টিকতে পারেন না। পুরসভার কর্মীরাও নিয়মিত এলাকায় আসেন না বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কাজেও পুরকর্মীরা গড়িমসি করেন বলে অভিযোগ তাঁদের। যদিও বিষ্ণুপুর পুরসভার জনস্বাস্থ্য আধিকারিক তুহিন কুণ্ডু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘সাফাইকর্মীরা গুরুত্ব দিয়েই কাজ করেন। এই অভিযোগ ঠিক নয়। নিয়মিত বাড়ি বাড়ি খোঁজ নেওয়া হয়। শহর থেকে আবর্জনাও দ্রুত সরিয়ে ফেলা হয়।’’ডেঙ্গি প্রতিরোধে এ দিন ইন্দাসের বিভিন্ন জলা জায়গাতেও গাপ্পি মাছ ছাড়ে ইন্দাস ব্লক প্রশাসন। ইন্দাসের বিডিও মানসী ভদ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৫৩টি পুকুর ও যে সব জায়গায় জল জমা রয়েছে সেখানে মোট দশ হাজারেরও বেশি গাপ্পি মাছ ছাড়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bankura Guppies Fish Dengue Fever
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE