Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অনুদান পেলেন সম্পন্ন, ভাঙা ঘরেই দুঃস্থরা

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২-’১৩ আর্থিক বছরে পুরসভা এলাকায় পাকা ছাদহীন বাড়িতে বসবাসকারীদের পাকা বাড়ি নির্মাণের জন্য ‘সবার জন্য বাড়ি’ (হাউজ়িং ফর অল) নামে কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ আবাস যোজনা প্রকল্প চালু হয়।

অসহায়: ঈশ্বর মাড্ডি ও রেখা মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

অসহায়: ঈশ্বর মাড্ডি ও রেখা মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

অর্ঘ্য ঘোষ 
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০৩
Share: Save:

সরকারি আবাস যোজনার অনুদান নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সাইথিয়া পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। অভিযোগ উঠেছে, যাঁদের দুই-তিন তলা বাড়ি, ভাল রকম আর্থিক সংস্থান রয়েছে, এমন কিছু লোকের নামে বাড়ি তৈরির অনুদান বরাদ্দ করা হয়েছে। অথচ কুঁড়ে ঘরে বসবাসকারী সহায় সম্বলহীনেরা সেই সুযোগ পাননি।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২-’১৩ আর্থিক বছরে পুরসভা এলাকায় পাকা ছাদহীন বাড়িতে বসবাসকারীদের পাকা বাড়ি নির্মাণের জন্য ‘সবার জন্য বাড়ি’ (হাউজ়িং ফর অল) নামে কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ আবাস যোজনা প্রকল্প চালু হয়। ওই প্রকল্পে তালিকাভুক্ত উপভোক্তার নামে অনুদান বরাদ্দ হলে নিজেকে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। তার পরে চার দফায় ওই অ্যাকাউন্টে ৩ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। তার মধ্যে কেন্দ্র দেয় ১ লক্ষ ৫০ হাজার এবং রাজ্য ১ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা। প্রতি দফার বরাদ্দ টাকা যথাযথ ব্যবহারের শংসাপত্র জমার পরে পরের দফার টাকা মেলে।

পুরসভা সূত্রেই জানা যাচ্ছে, ২০১২-’১৩ আর্থিক বছরে সমীক্ষা করে ওই ধরনের বাড়িতে বসবাসকারীদের তালিকা তৈরি হয়। তা ছাড়াও, প্রতি বছর ওয়ার্ড পিছু ১০টি করে নতুন পরিবারের নাম অন্তর্ভুক্তি হয়েছে। নিময় অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত ব্যক্তিরা অনুদান পাওয়ার যোগ্য কিনা খতিয়ে দেখার পরই টাকা বরাদ্দ হওয়ার কথা। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের নেতৃত্বে ওয়ার্ড কমিটি খতিয়ে দেখার কাজটি করে যথার্থ প্রাপকদের নাম অনুমোদন করে। কিন্তু, ৭ নম্বর ওয়ার্ড-সহ সাঁইথিয়ার একাধিক এলাকায় সেই নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ বিরোধীদের।

বিরোধীদের দাবি, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দার পাকা দোতলা বাড়ি, গাড়ি, মোটরবাইক, লেদ কারখানা রয়েছে। ওই ব্যক্তির যদিও দাবি, ‘‘আমার নিজের কোনও বাড়ি নেই। বাড়িটি বাবার। আমি আলাদা থাকি।’’ ওই ওয়ার্ডেরই এক প্রৌঢ়ার নামেও বরাদ্দ হয়েছে বাড়ির অনুদান। অথচ তাঁর দোতলা বাড়ি রয়েছে। তাঁরও দাবি, ‘‘বাড়ি আমার ছেলের। আমার নিজের কোনও বাড়ি নেই।’’

উল্টো দিকে, তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও চালাঘরে বসবাসকারী ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা দিনমজুর সন্তোষ মাহাতো, ঈশ্বর মাড্ডি, বাবুরাম হেমব্রম, প্রতিবন্ধী রেখা মণ্ডলদের নামে আজও অনুদান বরাদ্দ হয়নি বলে অভিযোগ। ওই সব দুঃস্থের ক্ষোভ, ‘‘বিপদের ঝুঁকি নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ভগ্নপ্রায় বাড়িতে বাস করছি। বারবার পুরসভায় বাড়ি তৈরির অনুদানের আবেদন জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। অথচ চোখের সামনে দেখছি, এলাকার সম্পন্ন অনেক পরিবারের পাকা বড় বাড়ি থাকা সত্ত্বেও তাদের নামে সরকারি আবাসন যোজনায় বাড়ি তৈরির অনুদান এসেছে।’’

ওই পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য কাশীনাথ মণ্ডলের অভিযোগ, শুধু ৭ নম্বর নয়, প্রতিটি ওয়ার্ডেই ওই ভাবে বাড়ির অনুদান বিলি করা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আসলে উপভোক্তা নির্বাচনেই গলদ রয়েছে। বা ইচ্ছাকৃত ভাবে গলদ করা হয়েছে। এবং এর ফলে প্রকৃত গরিবদের বঞ্চনা করা হয়েছে। শীঘ্রই পুরসভায় আমরা দলীয় ভাবে অভিযোগ জানাব।’’

৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু রায় বলছেন, ‘‘কী ভাবে আর্থিক সঙ্গতি সম্পন্নেরা তালিকাভুক্ত এবং দুঃস্থেরা বাদ পড়ে গেলেন, তা আমার জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলব।’’ পুরসভার চেয়্যারম্যান বিপ্লব দত্তের বক্তব্য, ‘‘এই ধরনের কোনও অভিযোগ আমার জানা নেই। তবে, সত্যি এমন হয়ে থাকলে তা ঠিক হয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা

নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Housing Birbhum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE