Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
ভিন্ রাজ্যে রহস্যমৃত্যু

বাঁকুড়াতেও নতুন করে ময়নাতদন্ত

এলাকায় কাজ না পেয়ে বছর পঁচিশের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হেমন্ত বাবা-মা, ভাই ও স্ত্রী, ছ’মাসের মেয়েকে ফেলে রেখে পুজোর সময়ে কেরলে গিয়েছিলেন রোজগারের আশায়।

হেমন্ত রায়। ফাইল চিত্র

হেমন্ত রায়। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ইন্দাস শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৩৬
Share: Save:

কেরলে কাজ করতে গিয়ে রহস্যজনক ভাবে মৃত ইন্দাসের যুবক হেমন্ত রায়ের দেহের ফের ময়নাতদন্ত হবে বাঁকুড়া মেডিক্যালে। বুধবার ইন্দাসের বিধায়ক গুরুপদ মেটে বলেন, ‘‘হেমন্ত আত্মঘাতী হয়েছেন বলে কেরল পুলিশ ইঙ্গিত দিয়েছে। কিন্তু ওই যুবকের পরিবারের বিশ্বাস তাঁকে খুন করা হয়েছে। তাই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিংশয় হতে তাঁর দেহের এখানে ময়না-তদন্ত করা হবে।’’ যদিও কাগজপত্রের জটিলতার কারণে প্লেনে তাঁর দেহ এ দিনও পাঠাতে পারেনি কেরল পুলিশ।

এলাকায় কাজ না পেয়ে বছর পঁচিশের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হেমন্ত বাবা-মা, ভাই ও স্ত্রী, ছ’মাসের মেয়েকে ফেলে রেখে পুজোর সময়ে কেরলে গিয়েছিলেন রোজগারের আশায়। কিন্তু রবিবার রাতে কেরলের আলাপুঝা জেলার পুচাক্কেল থানার পানাভাল্লি গ্রামে ইন্দাসের রোল গ্রামের বাসিন্দা হেমন্তের গলার নলি কাটা দেহ উদ্ধার হয়। মঙ্গলবার সেখানকারা মর্গে দেহের ময়না-তদন্ত করা হয়।

আলাপুঝার ডিএসপি লাল মঙ্গলবার জানিয়েছেন, হেমন্তের সঙ্গীরা তাঁদের কাছে দাবি করেছেন, তাঁরা ঘুমিয়ে থাকার সময় আনাজ কাটার ছুরি নিয়ে বাথরুমে ঢুকে হেমন্ত নিজেই গলায় কোপ মারেন। এর পিছনে পারিবারিক কোনও সমস্যা থাকলেও থাকতে পারে। পুচাক্কেল থানা সূত্রেও জানানো হয়, ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট আত্মহত্যার দিকেই ইঙ্গিত করেছে।

যদিও তা মানতে নারাজ হেমন্তের পরিজনেরা। এ দিনও তাঁর বাবা আনন্দ রায় বলেন, ‘‘হেমন্ত আত্মহত্যা করতেই পারে না। কেউ নিজেই নিজের গলা কাটতে পারে? বাড়িতে কোনও অশান্তিও নেই। আমাদের বিশ্বাস ওকে খুন করা হয়েছে।’’ বাঁকুড়া সফরে আসা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ওই ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই যুবকের মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধন্দ রয়েছে। তাই দেহ এলে ময়না-তদন্ত করা হবে।’’

এ দিকে, সোমবার সকালে মৃত্যুর খবর আসার পর থেকেই হেমন্তে পরিবারের সঙ্গেই কার্যত অনিদ্রায় রাত কাটাচ্ছে রোল গ্রামের ছোয়ানি পাড়ার ষাটটি পরিবার।

পড়শি বিনতা রায় বলেন, ‘‘স্বামীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই বিষ্ণুকে খাওয়ানো কঠিন হয়ে পড়েছে। দাঁতে কিছু কাটতে চাইছে না। ছ’মাসের ছোট্ট মেয়ে রাধিকা বুঝতে পারছে না, তার জীবনে কী সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে! অবাক চোখে সে লোকজন দেখছে।’’ তাকে কোলে নিয়ে এ দিন সকালে হেমন্তের পিসি সরস্বতী বলেন, ‘‘সংসারটা ভেসে গেল।’’

হেমন্তের বাবা আনন্দ রায় আক্ষেপ করছিলেন, ‘‘নিজে হাতে করে ছেলেটাকে পাম্প মেরামতির কাজ শিখিয়েছিলাম। এখানেই দু’জনে খেটে দু’মুঠো ভাত জোগাড় করে নেব বলে ওকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আমাকে না জানিয়েই ছেলেটা চলে গিয়েছিল। কিন্তু ফোনে বলত, তার ভাল লাগছে না, সে ফেরার টিকিটও কেটে ফেলেছিল। কিন্তু কই আর ফিরতে পারল?’’

দেহ আনতে এ দিন সকালে পাড়ার লোকজন দু’টি গাড়ি নিয়ে দমদমের দিকে রওনা দেন। তখনও তাঁরা জানতেন না প্লেনে দেহ আনতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। হেমন্তের সহকর্মী শেখ সামসুদ্দিন এ দিন বিকেলে কেরল থেকে বলেন, ‘‘হেমন্তের দেহ নিয়ে প্লেনে যাব। কিন্তু কিছু কাগজপত্র তৈরি করতে সময় লাগছে। দেখা যাক কখন প্লেনে ওঠা যায়!’’

হেমন্তের দেহ নিতে আসা হারু রায় বলেন, ‘‘বন্ধুকে এ ভাবে আনতে আসতে হবে, স্বপ্নেও ভাবি নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hemanta Roy Post Mortem
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE