বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ককে কাজকর্ম শুরু করার নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ওই নির্দেশ দেন। ন্যূনতম যে টাকা তাদের কাছে গচ্ছিত রাখার কথা (সিকিওরিটি মানি) তা না থাকায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গত বছর ৯ মে ব্যাঙ্কটিকে কাজকর্ম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। হাইকোর্টের নির্দেশে বীরভূমের কয়েক লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সমবায় ব্যাঙ্কটির কাজ বন্ধ করে দিতে বলায় দুর্ভোগে পড়েছিল স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি। ব্যাঙ্কের গ্রাহক ও কর্মীরাও বিপাকে পড়েন। তাঁরাই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। ওই সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। রাজ্য সরকার টাকা দেওয়ার কথা বললেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সমানে বাগড়া দিয়েছে। এত মানুষের জীবন যেখানে জড়িয়ে, সেখানে এই ব্যাঙ্ক খুলতে পারাটা অবশ্যই শুভ খবর।’’ সমবায় ব্যাঙ্ক বাঁচাও কমিটির আহ্বায়ক সাধন ঘোষ বলেন, ‘‘এত মানুষের জন্য আমাদের যে লড়াই ছিল, তা সফল হল।’’
ব্যাঙ্কের আইনজীবী সৃজন নায়েক জানান, তাঁদের পাঁচ লক্ষেরও বেশি গ্রাহক, ১০০ স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং ৩১৯টি কৃষি সমবায় (প্যাকস) রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নাবার্ড-কে দিয়ে ২০১১-২০১২ এবং ২০১২-২০১৩ অর্থবর্ষের যে অডিট করিয়েছিল তাতে দেখা যায়, ন্যূনতম গচ্ছিত অর্থ তাদের নেই। সৃজনবাবুর দাবি, ২০১৩-’১৪ সালের হিসাবে কিন্তু দেখা যায়, যে পরিমাণ টাকা জমা থাকা দরকার, তা রয়েছে।
গত বছর নভেম্বরে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের জন্য পুনরুজ্জীবন প্রকল্প চালু করে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মিলিত ভাবে ৭৭ কোটি টাকারও বেশি তহবিল গড়ে। গত ৩ মার্চ নাবার্ড, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে ‘মউ’ চুক্তি করে। কিন্তু কেন্দ্র থেকে সময় মতো টাকা না আসায় তহবিল ফেরত যাওয়ার উপক্রম হয়। হাইকোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু নির্দেশ দেন, ওই টাকা ফেরত পাঠানো যাবে না। পৃথক একটি তহবিল গড়ে ওই টাকা রাখতে হবে।
সৃজনবাবু জানান, দফায়-দফায় হাইকোর্টের দশ জন বিচারপতির এজলাসে মামলাটি শুনানির জন্য উঠেছিল। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আপত্তি সত্ত্বেও বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। তাতে সকলেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। ব্যাঙ্কের দুবরাজপুর শাখার ম্যানেজার প্রেমানন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে দিন ব্যাঙ্ক বন্ধ হল, সে দিন থেকেই হতাশায় ভুগেছি। আমানতকারীদের ন্যায্য টাকা ফেরত দিতে না পারাও বড় সমস্যা ছিল। ব্যাঙ্ক খোলার নির্দেশ নতুন দিন আনল।’’ নলহাটি ১ ব্লকের বুজুং সমবায় সমিতির ম্যানেজার ডালিম পাল, মুরারই ১ ব্লকের চাতরা সমবায় সমিতির পঞ্চানন উপাধ্যায়, লাভপুরের মিরিটির ব্রাহ্মণপাড়া সমবায় সমিতির ম্যানেজার পঞ্চানন মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘হাইকোর্ট থেকে নব মহাকরণ ঘুরে-ঘুরে আমাদের জুতোর সুকতলা খয়ে গিয়েছে। সমিতি উঠে যাওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। এ বার আশা দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy