সারা: এখানকার অনুষ্ঠান ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র
রাত পোহালেই ছিল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। খোলা জায়গায় এই সময়ে মাইক, সাউন্ড বক্স বাজানোয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, সে সবের তোয়াক্কা না করেই একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার তারস্বরে মাইক, সাইন্ডবক্স বাজানো হল বিষ্ণুপুর শহরের গোয়ানালা পল্লিতে। যার জেরে পরীক্ষা প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে নাজেহাল হল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। শুধু তারাই নয়, একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার্থীরাও শব্দ তাণ্ডবে ভুগল। অনেকে শব্দের দাপাদাপি থেকে রক্ষা পেতে তীব্র গরমেও দরজা-জানলা এঁটে পড়াশোনা করে গেল।
মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল বলেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত পর্যন্ত কোথাও খোলা জায়গায় মাইক, সাউন্ড বক্স বাজিয়ে অনুষ্ঠান করা যায় না। খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে সরঞ্জাম আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, বিষ্ণুপুরের গোয়ানালা পল্লিতে রকেট ক্লাবের উদ্যোগে শনিবার থেকে এলাকায় শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তিন দিন ধরেই মাইক ও সাউন্ডবক্স বাজানো হয়েছে। এর জেরে গোয়ানালা পল্লি থেকে পাশের প্রগতি পল্লি, ঝাপড় মোড়, রসিকগঞ্জ, স্টেশন পাড়ার বাসিন্দা দ্বাদশ শ্রেণি ও একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার্থীরা নাজেহাল হন। তাদের অনেকেই ভেবেছিল, মঙ্গলবার থেকে পরীক্ষা হওয়ায় উদ্যোক্তারা হয়তো সোমবার মাইক, সাউন্ডবক্স বাজাবেন না।
কিন্তু, তাঁদের ভাবনা যে ভুল, বেলা গড়াতেই কানা ঝালাপালা করা শব্দ ছড়াতেই মালুম হয়ে যায়। ‘‘সোমবার রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত গান-বাজনা চলায় তীব্র আওয়াজের চোটে পড়ায় মনঃসংযোগ করা দায় হয়ে পড়েছিল’’— মঙ্গলবার সকালে অভিযোগ করেন প্রগতি পল্লীর এক পরীক্ষার্থী।
স্টেশন রোড এলাকার এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘‘জীবনের অন্যতম বড় একটা পরীক্ষার আগের দিন প্রচণ্ড রকম উদ্বেগ থাকে সবার। অথচ উৎসবের আয়োজকদের সে সবের যেন খেয়াল ছিল না। নিজেদের আনন্দ করতে অন্যদের কষ্ট দিলেন তাঁরা কী ভাবে? তীব্র গরমেও দরজা-জানলা বন্ধ করে কিছুটা রেহাই পাওয়া গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল, শহরে যেন পুলিশ, প্রশাসন কিছু নেই।’’
রকেট ক্লাবের সভাপতি অশোক গড়াই বলেন, ‘‘অনুষ্ঠান উপলক্ষে পাড়ার মেয়ে-বৌয়েরা একটু সাউন্ডবক্স বাজিয়ে আনন্দ করেছে। এ জন্য অবশ্য প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয়নি ঠিকই। তবে এ অঞ্চলে কোনও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আছে না কি? আমাদের তো জানা ছিল না।’’ স্থানীয় বাসিন্দা প্রাক্তন সামরিক কর্মী বর্তমানে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক কৃষ্ণচন্দ্র লো বলেন, ‘‘মাইক তো বাজেনি। বক্স বেজেছে। এ নিয়ে হইচই না করলেই নয়?’’ যদিও আয়োজকদের অন্যতম স্কুল শিক্ষক দিলীপকুমার সিংহ বলেন, ‘‘১৩ বছর ধরে আমরা মন্দির প্রতিষ্ঠা দিবসে এ ভাবেই অনুষ্ঠান করে আসছি। তবে এ বার পরীক্ষার আগের দিন বক্স না বাজানোই ভাল ছিল। পরবর্তী কালে আমারা এই ব্যাপারটা মাথায় রাখব। এ ভুল আর হবে না।’’ স্থানীয় ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপ্পা ঠাকুরেরও দাবি, ‘‘সাউন্ডবক্স আস্তেই বেজেছে। তবে পরীক্ষার সময়ে এমনটা যাতে না হয়, দেখব।
পুলিশ কেন ব্যবস্থা নেয়নি?
বিষ্ণুপুর থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নিয়ম না মেনে মাইক বা সাউন্ডবক্স বাজানো অন্যায়। আর পরীক্ষার ঠিক আগে বা চলার সময়ে মাইক বা সাউন্ডবক্স বাজানোর তো প্রশ্নই নেই। এ নিয়ে তো কেউ অভিযোগ জানাননি! কোথায় হয়েছে, খোঁজ নিচ্ছি।’’ ভুক্তভোগীদের মন্তব্য, শহরের মধ্যেই তিন দিন ধরে শব্দ-তাণ্ডব চলার পরেও পুলিশ যদি জানতে না পারে, তাহলে পুলিশের নেটওয়ার্ক সম্পর্কেই সবার সন্দেহ জাগবে।
মহকুমাশাসক অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘গোয়ানালা পল্লির ঘটনাটি শোনার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে বলছি। এমন ঘটনা যাতে না হয়, সে জন্য নজরদারি বাড়ানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy