প্রার্থনা: পুরুলিয়া শহরের গাড়িখানায় দত্ত বাড়িতে মুন্সিবাবার মজার। নিজস্ব চিত্র
একই বাড়িতে রয়েছে ঠাকুরের মূর্তি, পীরের মাজারও। পুরুলিয়া শহরের গাড়িখানা এলাকার দত্তবাড়ি যেন আক্ষরিক অর্থেই হিন্দু-মুসলমানের মিলনমেলা হয়ে উঠেছে। প্রতি বছরের মতো মহরমের আগের দিন বৃহস্পতিবার সেখানে দুই সম্প্রদায়ের মানুষকে মুন্সিবাবার মাজারে প্রার্থনা করতে দেখা গেল। শহরবাসীর কাছে এর থেকে বড় সম্প্রীতি আর কিছু নেই।
এক বছর-দু’বছর নয়, গাড়িখানার দত্তবাড়িতে এই ট্রাডিশন চলে আসছে টানা তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে। সম্প্রীতির এই মিলনমেলার সূচনা শম্ভুনাথ দত্তের পাওয়া স্বপ্নাদেশ থেকেই। তাঁর স্ত্রী রিনা দত্ত বলেন, ‘‘আমার স্বামী স্বপ্ন পান, বাড়ির মধ্যেই মুন্সিবাবা অধিষ্ঠিত রয়েছেন। সেই স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর উঠোনে মুন্সিবাবার মাজার তৈরি করা হয়েছে। সেই থেকে আমরা বাড়ির ঠাকুর-দেবতার সঙ্গে মুন্সিবাবারও আরাধনা করে আসছি। আমার বাড়িতে যেমন গোপাল রয়েছেন, তেমনই মুন্সিবাবাও রয়েছেন। প্রতি সন্ধ্যায় ধূপ-প্রদীপে বাড়ির ঠাকুরদের সঙ্গে মুন্সিবাবাকেও শ্রদ্ধা অর্পণ করি আমরা।’’
মুন্সিবাবাকে এলাকার বাসিন্দারা পীরবাবা বলেই মানেন। প্রতি শুক্রবার তো বটেই, মহরমের আগের দিন সকালে এই বাড়িতে বাবার মাজারের সামনে উপস্থিত হয়ে সকলেই প্রার্থনা করেন। রিনাদেবী বলেন, ‘‘আমাদের কোনও ভেদাভেদ নেই। এলাকার হিন্দুদের সঙ্গে শহরের অনেক মুসলিম পরিবারের ভাই-বোন এ দিন এখানে এসে প্রার্থনা জানাতে আসেন। আমরাও প্রার্থনার আগে পর্যন্ত উপোস রাখি।’’ তিনি জানান, মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যেরা এসে আতর, চাদর ইত্যাদি চড়ান।
শহরের ডিগুডিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ তাহির হোসেন বলেন, ‘‘আমি প্রতি বছরই এই দিনটিতে এখানে আসি। দত্তবাড়ির উঠোন এ দিন আক্ষরিক অর্থেই হয়ে ওঠে সম্প্রীতির অঙ্গন।’’ রৌণক খাতুন, শেখ রশিদ, সুদেষ্ণা দত্ত, তুফান দত্তরা পাশাপাশি প্রার্থনা জানান।
আরও পড়ুন: অস্ত্র ছাড়াই মহরমে মিছিল বোলপুরে
স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ ইজারুল হক বলেন, ‘‘এখানে আমরা সকলেই ভাই ভাই। আমি ছোট থেকে এখানে আসছি। আমার মত অনেকেই আসেন তাঁদের মনস্কামনা জানানোর জন্য। সম্প্রীতির অনন্য ছবি এই গাড়িখানার মাজার।’’
পুরুলিয়ার পুরপ্রধান সামিমদাদ খান বলেন, ‘‘গাড়িখানা এলাকার দত্ত পরিবারের মাজারে মহরমের আগের দিন ও মহরমের দিনটিতে সকলেই উপস্থিত হয়ে শ্রদ্ধা জানান। এই দিনটি তো শোকের দিন। সেই কথা মাথায় রেখেই শ্রদ্ধা জানানো হয়। দত্ত পরিবারের লোকজনও একই ভাবে দিনটি পালন করেন। এটা অনেকদিন ধরেই হয়ে আসছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy