Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দাতা নিয়ে এলে তবেই রক্ত মিলবে ব্লাড ব্যাঙ্কে, আকাল কাটাতে বিজ্ঞাপন

হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের অবস্থা ভাঁড়ে মা ভবানী। সঙ্কট কাটাতে এ বার তাই নিজেরাই বিজ্ঞাপন দিল পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক।

পুরুলিয়ায় রক্তের জন্য অপেক্ষা রোগীর পরিজনদের। নিজস্ব চিত্র

পুরুলিয়ায় রক্তের জন্য অপেক্ষা রোগীর পরিজনদের। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৮ ১৫:৫০
Share: Save:

হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের অবস্থা ভাঁড়ে মা ভবানী। সঙ্কট কাটাতে এ বার তাই নিজেরাই বিজ্ঞাপন দিল পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক।

হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের চরম সঙ্কট চলছে জানিয়ে স্থানীয় সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে রক্তদান শিবির সংগঠিত করার অনুরোধও জানানো হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এরপরেও রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে জেলার কোনও এলাকা থেকে সাড়া মেলেনি।

পুরুলিয়া জেলায় এত দিন শুধু সদর হাসপাতালেই ব্লাড ব্যাঙ্ক ছিল। সম্প্রতি রঘুনাথপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালেও জেলার দ্বিতীয় ব্লাড ব্যাঙ্ক চালু হয়েছে। কিন্তু, তাতেও জেলা সদরের হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের চাপ কমেনি।

সেই হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কেই বৃহস্পতিবার আটটি গ্রুপ মিলিয়ে মজুত রক্তের পরিমাণ ছিল ৩২ ইউনিট। নেগেটিভ গ্রুপের কোনও রক্তই নেই। ব্লাড ব্যাঙ্কের এ দিনের তালিকা জানাচ্ছে এ-পজিটিভ ৫টি, বি-পজিটিভ ১৪টি, ও-পজিটিভ ৯টি এবং এবি-পজিটিভ ৪টি। তবে এই চারটি গ্রুপের নেগেটিভ রক্ত মজুত নেই। ব্লাড ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক জানান, এই ছবি যে শুধু দু’-এক দিনের, তা কিন্তু নয়। এই অবস্থা চলছে সপ্তাহ দুয়েক ধরেই। ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘রক্ত মজুত থাকলে রক্ত দেওয়া যাচ্ছে। না হলে বলে দেওয়া হচ্ছে, রক্তদাতা নিয়ে এলে তবেই রক্ত দেওয়া যাবে।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মার্চ মাসে এই জেলায় প্রায় আটটি রক্তদান শিবির হয়েছিল। সেখান থেকে ৩৫০ ইউনিট রক্তের সংস্থান হয়। পরের মাসে গত এপ্রিলে সারা জেলায় মাত্র চারটি শিবির হয়েছে। সেই শিবিরগুলি থেকে সাকুল্যে ৩১৪ ইউনিট রক্ত জোগাড় হয়েছে। ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার তারাপদ রায় বলেন, ‘‘জেলা সদরের ব্লাড ব্যাঙ্কে প্রতি মাসে রক্তের চাহিদা থাকে ৬০০ থেকে ৬৫০ ইউনিটের। তার অর্ধেক লাগে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্য। সে তুলনায় প্রয়োজনের অর্ধেক রক্তে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছি।’’

পুরুলিয়া ২ ব্লকের বোঙাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা নারায়ণ মাহাতোর স্ত্রী রক্তাল্পতায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তিনি বলেন, ‘‘স্ত্রীর রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে জানাচ্ছে, ওই গ্রুপের রক্তদাতা নিয়ে গেলে তবেই রক্ত মিলবে। কোথা থেকে রক্তদাতা পাব ভেবে কূলকিনারা করতে পারছি না।’’

সুবোধ দাস নামে পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা এক যুবকও বসেছিলেন ব্লাড ব্যাঙ্কের বারান্দায়। তাঁর কথায়, ‘‘বাবার জন্য ‘ও’ নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু এখানে কোনও নেগেটিভ রক্তই তো নেই দেখছি।’’ পাড়া ব্লকের এক বাসিন্দাও রক্ত নিতে এসেছিলেন। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ব্লাড ব্যাঙ্কে যে রক্ত নেই, সে দিকে কারও মাথাব্যথা নেই। সবাই ভোট নিয়ে মেতে রয়েছেন। রক্তের সংস্থান করা বুঝি তাঁদের দায় নয়?’’

হাসপাতালের সুপার শিবাশিস দাস বলেন, ‘‘বিভিন্ন জায়গায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন না হলে কী ভাবে রক্তের সঙ্কট মিটবে? এই সমস্যা সকলকেই উপলব্ধি করতে হবে। বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে। দেখা যাক, যদি বিভিন্ন সংস্থা এগিয়ে আসে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blood Blood Bank Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE