Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ডাক্তার নেই, উন্নয়ন তাই মানে না ঢেকা

ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ রয়েছেন এক জন ডাক্তার, দু’জন নার্স, এক জন ফার্মাস্টিট, এক জন জিডিএ এবং এক জন সুইপার। কিন্তু, বর্তমানে স্থায়ী কর্মী বলতে রয়েছেন এক জন নার্স, ফার্মাস্টিট এবং জিডিএ। এর ফলে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র জোড়াতালি দিয়ে চলছে।

আগাছায় ভরে গিয়েছে ঢেকা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ছবি: কল্যাণ আচার্য

আগাছায় ভরে গিয়েছে ঢেকা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ছবি: কল্যাণ আচার্য

অর্ঘ্য ঘোষ
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৪৬
Share: Save:

প্রশাসনের সব স্তরে আর্জি জানাতে জানাতেই পেরিয়ে গিয়েছে পাঁচটি বছর। তার পরেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার আসেননি। হতাশ গ্রামবাসীর অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, ‘‘শাসকদলের নেতাদের মুখে আর যাই হোক উন্নয়নের বড়াই করা মানায় না।’’ সরাসরি না হলেও পরোক্ষে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে নিয়েছেন শাসকদলের একাংশ।

প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, ময়ূরেশ্বর থানা এলাকার ঢেকা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল বেশ কয়েক বছর ধরেই শোচনীয়।১ ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ রয়েছেন এক জন ডাক্তার, দু’জন নার্স, এক জন ফার্মাস্টিট, এক জন জিডিএ এবং এক জন সুইপার। কিন্তু, বর্তমানে স্থায়ী কর্মী বলতে রয়েছেন এক জন নার্স, ফার্মাস্টিট এবং জিডিএ। এর ফলে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র জোড়াতালি দিয়ে চলছে।

বীরভূম জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটি নিয়ে চলে যান ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক মাত্র চিকিৎসক শুভব্রত মজুমদার। তার জায়গায় আজও কোনও স্থায়ী চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়নি। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে এক দিন করে পালা করে এক জন হোমিওপ্যাথিক এবং এক জন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসককে পাঠানো হচ্ছিল। তা-ও বর্তমানে বন্ধ। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে অবসর নিয়েছেন সুইপার। তার জায়গায় আজও কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। এর ফলে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা কার্যত তলানিতে এসে ঠেকেছে। স্বাস্থ্যকর্মীরাই জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নথি অনুযায়ী ডাক্তার থাকাকালীন গড়ে শতাধিক রোগী আসতেন। এখন সাকুল্যে ৫০/৬০ জন আসেন। অধিকাংশ রোগীকেই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিতে হয়। তাই অনেক সময় ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়।

শুধু স্বাস্থ্য পরিষেবা নয়। দেখভালের অভাবে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র এখন গ্রামবাসীর গরু-ছাগল চড়ানো, জ্বালানি সংরক্ষণ কিংবা ধান শুকোনোর জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ। এক স্বাস্থ্যকর্মী জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে হঠাৎ কেউ এলে বুঝতেই পারবে না এটি আদৌ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, না গো-চরণভূমি। গ্রামবাসীর ক্ষোভের মুখে পড়ার আশঙ্কায় সব দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন অনেকে। অথচ ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরেই এলাকার ২০/২৫টি গ্রামই শুধু নয়, লাগোয়া মুর্শিদাবাদ জেলারও বিস্তৃীর্ণ অঞ্চলের মানুষজন নির্ভরশীল। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেহাল দশার কারণে তাঁদেরই এখন ২০/৩০ কিমি দূরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছুটতে হচ্ছে, কিংবা হাতুড়ের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে।

লোকপাড়ার উদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, কুলিয়াড়ার বিকাশ বাগদিরা বলেন, ‘‘ডাক্তার না থাকলে সময় নষ্ট করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে কী লাভ? রোগের উপসর্গ বললেই তো পাড়ার মোড়ের দোকান থেকে ওষুধ মিলে যায়।’’ এ ভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ কেনার প্রবণতাও বাড়ছে। তাতে রোগীর ক্ষতির আশঙ্কাও কয়েকগুণ বাড়ছে। হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছেও ছুটছেন অনেকে। স্থানীয় বাসিন্দা তথা লোকপাড়া মোড় ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুভাসচন্দ্র ঘোষ জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল ফেরাতে প্রশাসনের সকল স্তরে জানিয়েছেন। প্রাক্তন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এমনকী জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জটিল মণ্ডলকেও জানানো হয়েছিল। কোনও কাজ হয়নি। অথচ ওই এলাকাতেই বাড়ি জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জটিল মণ্ডল, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা ব্লক রোগী কল্যাণ সমিতির অন্যতম সদস্যা কল্যাণী দাস, পঞ্চায়েত প্রধান মিঠু গড়াইয়ের। জটিলবাবু এবং কল্যাণী দাস এ বারেও পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী হয়েছেন। উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে জোরদার প্রচারও শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা তাই কটূক্তি করতে ছাড়ছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেরই বক্তব্য, পাঁচ বছরেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাঁরা একটা ডাক্তার দিতে পারলেন না, তাঁদের মুখে উন্নয়নের কথা শোভা পায় না। বাম আমলেও এত দীর্ঘ দিন কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্র ডাক্তারহীন হয়ে থাকেনি বলে অনেকের দাবি। স্বভাবতই শাসকদলের একাংশও অস্বস্তি এড়াতে পারছেন না। জটিলবাবুরা অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে বহু বার স্বাস্থ্য দফতরের দৃষ্টি আর্কষণ করা হয়েছে।’’ ব্লক স্বাস্থ্য অধিকর্তা এনামূল হক বলেন, ‘‘দু’জন চিকিৎসককে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা কেউ যোগ না দেওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’ ডাক্তার নিয়োগের চেষ্টা চলছে বলেও তাঁর আশ্বাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Doctors Crisis Medical Centre Development
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE