Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সার্বিক নিয়ন্ত্রণের আর্জি পর্যটক থেকে ব্যবসায়ীদের, আশ্বাস প্রশাসনের

আড়ে-বহরে বেড়ে শনিবারের হাট যেন বাজার

শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক পরিবেশ ছাড়িয়ে খোয়াইয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে একটা লেখা— ‘খোয়াই বনের অন্য হাট’। অনেকেই মনে করেন, এখন এই হাট আর ‘বনের’ হাট নেই। কারণ, বনের জায়গা শেষ হয়ে কবেই এর পরিসর বেড়ে রাস্তা পর্যন্ত চলে এসেছে। দুর্গাবাড়ির সামনে বসা আদি হাটটি ছাড়াও আলাদা করে খোয়াইয়ের মধ্যেই চার জায়গায় হাট বসতে শুরু করেছে।

পরিধি:  হাট ছাপিয়ে রাস্তার ধারে শনিবারের খোয়াইয়ের হাটে ভিড়। নিজস্ব চিত্র

পরিধি: হাট ছাপিয়ে রাস্তার ধারে শনিবারের খোয়াইয়ের হাটে ভিড়। নিজস্ব চিত্র

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০৫
Share: Save:

শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক পরিবেশ ছাড়িয়ে খোয়াইয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে একটা লেখা— ‘খোয়াই বনের অন্য হাট’। অনেকেই মনে করেন, এখন এই হাট আর ‘বনের’ হাট নেই। কারণ, বনের জায়গা শেষ হয়ে কবেই এর পরিসর বেড়ে রাস্তা পর্যন্ত চলে এসেছে। দুর্গাবাড়ির সামনে বসা আদি হাটটি ছাড়াও আলাদা করে খোয়াইয়ের মধ্যেই চার জায়গায় হাট বসতে শুরু করেছে।

বিশ্বভারতীর কলাভবনের প্রাক্তন ছাত্রী, প্রয়াত শ্যামলী খাস্তগিরের উদ্যোগে এই হাটটি ১৮ বছর আগে ‘শনিবারের হাট’ বলে এলাকায় পরিচিতি পেয়েছিল। হাট বসত শনিবার বিকেলে। তখন হাটটি শুরুর মূল উদ্দেশ্য ছিল, এলাকার পার্শ্ববর্তী মানুষ বিশেষ করে মহিলাদের তৈরি নানা হস্তশিল্প, বাড়িতে করা খাবার বিক্রি করা। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে বিক্রি।

এখন হাটে গেলে দেখা যাবে হাজারেরও বেশি ব্যবসায়ী চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছেন। পুরনো ব্যবসায়ীদের দাবি, নতুন করে যাঁরা জিনিস বিক্রি করতে আসছেন, বেশির ভাগই ব্যবসায়ীদের নিজেদের হাতে বানানো নয়। এক সঙ্গে অনেক জিনিস কিনে শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থে হাটে আসছেন। ট্রাক্টর, টোটো, ভ্যান থেকে ঢালাও জিনিস নামিয়ে বিক্রি করতে বসছেন তাঁরা। এর ফলে যাঁরা সত্যিই শিল্পী, তাঁদের ব্যবসায় ক্ষতি হতে শুরু করেছে।

হাটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বর্তমানে খোয়াই হাটে পাঁচটি কমিটি তৈরি হয়েছে। আলাদা জায়গার জন্য আলাদা কমিটি। আদি হাট ছাড়িয়ে কয়েকশো মিটার পর্যন্ত হাট প্রসারিত হয়েছে। শনিবার দিন শ্যামবাটি ক্যানেল থেকে কিছুটা এগিয়েই হাট শুরু হয়ে যাচ্ছে। কয়েক মাস আগে শান্তিনিকেতন পুলিশের উদ্যোগে হাট প্রবেশের মুখে ‘নো এন্ট্রি’র ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তাতেও পুলিশকে সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের এক দলের দাবি ছিল, নো এন্ট্রির ফলে হাটের ভিতর পর্যন্ত পর্যটকরা যেতে পারছেন না বলে বিক্রি কমে যাচ্ছে। সামনে বসা অপেক্ষাকৃত নতুন

ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই জিনিস কিনে চলে যাচ্ছেন তাঁরা। এর ফলে গত সপ্তাহে নো এন্ট্রি ফলক তুলে নিতে বাধ্য হয় পুলিশ। আবার এই শনিবার হাটে গিয়ে সামনের দিকে বসা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নো এন্ট্রি তুলে নেওয়ার ফলে গত সপ্তাহ থেকে তাঁদের বিক্রি কমে গিয়েছে।

শুধু শনিবার বলে নয়। বেশ কিছু ব্যবসায়ী এখন সপ্তাহে প্রতিদিনই খোয়াইয়ে জিনিস নিয়ে বসেন। অন্য ব্যবসায়ীদের কথায়, ‘‘যাঁরা সারা সপ্তাহ জিনিস বিক্রি করতে বসছেন, তাঁরা নিজেরা জিনিস বানাচ্ছেন কখন?’’ এই সব একাধিক বিষয়ে জর্জরিত ‘খোয়াই বনের অন্য হাট’। সমস্যা মেটাতে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে শান্তিনিকেতন পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন। তবে এলাকাবাসীর আর্জি, এ বার এই হাট নিয়ে প্রশাসন, পুলিশ এবং পঞ্চায়েত এক সঙ্গে কোনও বড় পদক্ষেপ নিক। না হলে ভবিষ্যতে হাট নিয়ে সমস্যা আরও বাড়তে পারে বলেই তাঁদের আশঙ্কা।

এই বিষয় নিয়ে প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এমন সমস্যা যদি হয়েই থাকে প্রশাসন যৌথ ভাবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবে।’’ রূপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রণেন্দ্রনাথ সরকার জানালেন, পঞ্চায়েত থেকেও হাট নিয়ে ভাবনা শুরু হয়েছে। স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে পর্যটকদেরও আর্জি, এক কালীন কোনও সমাধানের কথা ভাবুক প্রশাসন। যাতে সব সমস্যার একযোগে সমাধান হয়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Khoai Mela Bolpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE