আরাধনা: মাতারার মন্দিরে পুজোর ডালি। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
মাতারার পুজোয় ‘মহা অর্ঘ্য’ জবা ফুল। কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠে তা-ই সেই ফুলের চাহিদা তুঙ্গে।
তারামাতা সেবাইত সমিতির কোষাধ্যক্ষ শ্যামল মুখোপাধ্যায়, সেবাইত সমিতির সদস্য বাসুদেব চট্টোপাধ্যায় জানান, মায়ের নিত্যপুজোতেও অন্য উপকরণের সঙ্গে এক-দু’টো জবা ফুল দিতেই হবে। উৎসবে তো তা আরও বেশি চাই।
কৌশিকী অমাবস্যায় সহস্রাধিক ভক্তের সমাগমে জবা ফুলের চাহিদা তা-ই কয়েক গুণ।
তারাপীঠে ১৯৯৪ সাল থেকে জবা ফুল সরবরাহ করেন ময়ূরেশ্বর থানার সন্ধিগড়া বাজার এলাকার বাসিন্দা নিখিল হাজরা। তিনি জানান, প্রথম দিকে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ফুল সংগ্রহ করতেন। পরে নিজের পাঁচ বিঘা জমিতে জবা ফুলের চাষ শুরু করেন। তারাপীঠে দর্শনার্থীদের ভিড় ক্রমে বাড়তে থাকায় চাহিদা মেটাতে কলকাতা থেকে জবা ফুল নিয়ে আসা শুরু করেন। নিখিলবাবু জানান, এখন তারাপীঠের লাগোয়া কড়কড়িয়া, দেখুড়িয়া, বিলাসপুর, উদয়পুর, বড়শাল, গোপালপুর, খরুণ, স্বর্গপুর, মহেশপুর, ঘোষগ্রাম, রামভদ্রপুর, বীরভূম লাগোয়া মুর্শিদাবাদের শীতলগ্রামে জবা ফুলের চাষ হয়। সে সব জায়গা থেকে থেকে প্রতি দিন প্রায় দু’লক্ষ ফুল তারাপীঠে আসে। সে জন্য কলকাতা থেকে ফুল কম আনতে হয়। তবে কৌশিকী অমাবস্যা, চতুর্দশী তিথি বা শীতকালে (জবা ফুলের ফলন কম) কলকাতা থেকে জবা ফুলের আমদানি বেশি পরিমাণে করতে হয়।
বরশালের মাধাই প্রামাণিকও কলকাতা থেকে জবা ফুল নিয়ে এসে তারাপীঠে বিক্রি করেন। তিনি জানান, এ বছর হাওড়ার ফুলের বাজারে ৩০০ টাকায় এক হাজার জবা মিলছে। সে জন্য ভোরে রামপুরহাট স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে প্রথমে বর্ধমান, তার পরে ট্রেন বদলে হাওড়া যান।
ময়ুরেশ্বর থানার ঘোষগ্রাম এলাকায় প্রায় পঞ্চাশটি বাড়িতে জবা ফুলের চাষ করা হয়। রামপুরহাট থানার কড়কড়িয়া গ্রামের নিমাই মণ্ডলও প্রায় ৩২ বছর ধরে তারাপীঠে জবা ফুল বিক্রি করেন। তারাপীঠে জবা ফুল বিক্রি করেই সংসার চালান তারাপীঠ থানার মহেশপুরের প্রতিবন্ধী তাপস মাল। তিনি জানান, অন্য দিন ১০ টাকা দামের জবার মালার চাহিদা বেশি থাকলেও, কৌশিকী অমাবস্যায় ১০৮টি ফুলের মালা বেশি বিক্রি হচ্ছে। শনিবার তারাপীঠে ওই মালার দাম ছিল ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। তারাপীঠে জবা ফুল বিক্রেতাদের নিজস্ব দোকান নেই। ব্যবসার জন্য তাঁদের পুজোর অন্য সামগ্রী বিক্রেতাদের দোকানের উপরই ভরসা করতে হয়।
মাতারার পুজোয় জবা ফুলের মাহাত্ম্য কী? সেবাইতদের একাংশ জানান, দক্ষযজ্ঞের সময় দেবী মহামায়া দশ রূপ দেখেছিলেন দেবাদিদেব। কালী, তারা, ষোড়শী, ভৈরবী, ভুবনেশ্বরী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী, কমলাকামিনী রূপ চামুণ্ডাতন্ত্রে দশমহাবিদ্যা নামে পরিচিত। শক্তির এই দশ রূপের আরাধনায় প্রয়োজন লাল জবার। তান্ত্রিক ও তন্ত্রধারকদের মতে, জবা ফুলের মধ্যে গর্ভশক্তি রয়েছে। দশমহাবিদ্যার আরাধনা করতে হলে পূর্ণাঙ্গ জবার প্রয়োজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy