Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

টিকিটের না জানা গল্পে বুঁদ হলেন ডাককর্মীরাও

এ দিন জেলার প্রবীণ ডাকটিকিট সংগ্রাহকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ডাকটিকিট সংগ্রহ করতে গিয়ে তাঁদের বিচিত্র যে সমস্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেগুলি তাঁরা শুনিয়েছেন ডাককর্মী এবং সাধারণ শ্রোতাদের। বুঁদ হয়ে শুনেছেন সবাই।

সংগ্রাহক: পুরুলিয়ার মুখ্য ডাকঘরের অনুষ্ঠানে। নিজস্ব চিত্র

সংগ্রাহক: পুরুলিয়ার মুখ্য ডাকঘরের অনুষ্ঠানে। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৬:২০
Share: Save:

রাজীব গাঁধীর মৃত্যুর পরে ভারতীয় ডাক বিভাগ একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করেছিল। সেই ডাকটিকিট কেনার জন্য কলকাতা জিপিও-য় লাইন দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন এক জন। ২০০৪ সালে ডাক বিভাগ গ্রন্থসাহিব নিয়ে একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে। যে দিন প্রথম বিক্রি শুরু হবে, সে দিনই বেলা ৩টে নাগাদ সেটি তুলে নেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেকের সময়ের মধ্যেই বরাত জোরে সেই টিকিট সংগ্রহ করে ফেলেছিলেন আর এক জন।

জাতীয় ডাক সপ্তাহের চতুর্থ দিনে ডাকটিকিট সংগ্রাহকদের থেকে এমন অনেক গল্প শুনল পুরুলিয়া। বৃহস্পতিবার জেলা মুখ্য ডাকঘরে অনুষ্ঠানটি হয়। পুরুলিয়া ডাক বিভাগের সুপার তপন চক্রবর্তী জানান, জাতীয় ডাকসপ্তাহের এই দিনটিকে ফিলাটেলি দিবস বা ডাকটিকিট সংগ্রহ দিবস হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়েছে।

এ দিন জেলার প্রবীণ ডাকটিকিট সংগ্রাহকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ডাকটিকিট সংগ্রহ করতে গিয়ে তাঁদের বিচিত্র যে সমস্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেগুলি তাঁরা শুনিয়েছেন ডাককর্মী এবং সাধারণ শ্রোতাদের। বুঁদ হয়ে শুনেছেন সবাই।

এ দিন সংগ্রাহকরা বেশ কিছু ডাকটিকিটের প্রদর্শনীও করেন। স্বাধীন ভারতে মহাত্মা গাঁধীর ছবি দেওয়া দেড় আনা দামের যে প্রথম ডাকটিকিটটি প্রকাশিত হয়েছিল, তা নিয়ে এসেছিলেন আদ্রার বাসিন্দা অলোক ভাদুড়ি। ১৯৯৪ সাল থেকে টানা ২৫ মাস ধরে ‘প্রাইড অব ইন্ডিয়া কালেকশন’ নামে ডাকটিকিটের একটি সিরিজ প্রকাশিত হয়েছিল। অলোকবাবু বলেন, ‘‘পরে ওই ২৫টি ডাকটিকিট সোনার পালিশ করা পিতল দিয়ে তৈরি করেছিল ডাক বিভাগ।’’ বিশেষ স্মারক বাক্সে সেই ২৫টি কাগজের এবং ধাতব টিকিট প্রদর্শনীতে নিয়ে এসেছিলেন তিনি।

এ ছাড়া ছিল রেলের বিভিন্ন সময়ের ইঞ্জিন, খেলা, দেশের বিশেষ ঘটনা, রাজা মহারাজাদের ছবি দেওয়া প্রচুর ডাকটিকিট। রাজীব গাঁধীর মৃত্যুর পরে তাঁর ছবি দেওয়া ডিকটিকিটের জন্য যিনি দীর্ঘ লাইন দিয়েছিলেন, তিনিই অলোকবাবু।

গ্রন্থসাহিব ডাকটিকিট যাঁর সংগ্রহে রয়েছে, তিনি পুরুলিয়া শহরের রাজীব চক্রবর্তী। বেলা ২টোয় টিকিট তাঁর হাতে এল, এক ঘণ্টা পরেই সেটি নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ডাকবিভাগ জানিয়েছিল, গ্রন্থ সাহিবের ছবি প্রকাশ্যে আনার কথা নয়। ভুল করে প্রকাশ করা হয়েছিল। রাজীববাবু শোনালেন এ রকমের আরও গল্প।

১৮৪০ ব্রিটেনে প্রথম আঠা দেওয়া ডাকটিকিট প্রকাশিত হয় সাধারণ ডাকের জন্য। নাম পেনি ব্ল্যাক। সেই টিকিও সংগ্রহে রয়েছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘‘পেনি ব্ল্যাকের আগেও ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়েছিল। সে এক মজার গল্প। ব্রিটিশ গাইয়ানা নামে একটা প্রদেশ আছে। তখনও পেনি ব্ল্যাক প্রকাশিত হয়নি। অবশ্য, ততদিনে ডাকটিকিটের প্রচলন হয়ে গিয়েছে।’’

রাজীববাবু শোনান, এক বার সেই প্রদেশে গভর্নর আসবেন। ডাক বিভাগকে বলা হল, তিনি এসে চিঠিপত্র লিখতে পারেন। ডাকটিকিট যেন মজুত থাকে।

কিন্তু তখন সেখানে ডাকটিকিট বাড়ন্ত। সদর থেকে আনতে হলে অনেক সময় চলে যাবে। পোস্টমাস্টার ঠিক করলেন, স্থানীয় ছাপাখানা থেকেই কাজটা সেরে ফেলবেন। যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। কিন্তু তার পরেই শুরু হল চিন্তা। ডাকটিকিট তো ছাপানো হল। এ বারে ওই প্রেস থেকে যদি টিকিটগুলি নকল করা শুরু হয়?

পোস্টমাস্টার তখন ছাপানো ওই টিকিটগুলোয় নিজের সই করে সিলমোহর দিয়ে দিলেন।

তেমন দু’টি ডাকটিকিট নিউজিল্যান্ডের এক ব্যক্তির কাছে ছিল। উত্তরাধিকার সূত্রে সেটি যায় তাঁর মেয়ের হাতে। পরে একটি প্রদর্শনীতে প্রচুর টাকায় ওই টিকিট দু’টি বিক্রি হয়েছিল। রাজীববাবু জানান, আরবের এক শেখ টিকিট দু’টি কিনে একটি পুড়িয়ে ফেলেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, ওই টিকিট পৃথিবীতে একটাই থাকবে। আর সেটা শুধু তাঁর সংগ্রহে থাকবে।

রাজীববাবু জানান, বেশ কয়েক বছর আগে দিল্লিতে এক প্রদর্শনীতে ওই ডাকটিকিটটি এসেছিল। কমান্ডোরা সেটি ঘিরে পাহারায় ছিলেন সারাক্ষণ। সেই টিকিটও চাক্ষুষ দেখে এসেছিলেন তিনি।

এমন অনেক গল্পের শুনে যাঁদের উৎসাহ বাড়ল, এ দিন তাঁদের জন্য পুরনো কিছু ডাকটিকিট বিক্রির বন্দোবস্ত করেছিল পুরুলিয়ার ডাক বিভাগ।

উৎসাহী কেউ কেউ অনুষ্ঠান শেষে ডাকটিকিট সংগ্রহে হাতেখড়িটাও সেরে নিলেন সেখানে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Post office Post
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE