Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Land Scam

মৃত দেখিয়ে হস্তান্তরিত জমি, তদন্ত

বুধবার বাঁকুড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে ওই বিষয়টি উঠতেই প্রশাসনিক কর্তারা স্তম্ভিত হয়ে যায়।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানিবাঁধ শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৫৮
Share: Save:

জীবিতকে মৃত দেখিয়ে জমি হস্তান্তর হয়েছে। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানে সেই অভিযোগ পৌঁছতেই তাঁর নির্দেশে শুরু হয়েছে তদন্ত।

বয়স ৮৫। দুই ছেলে, বৌমা, নাতি-নাতনি নিয়ে সংসার খাতড়ার বড় মেটালার বাসিন্দা প্রমীলা সর্দারের। এখনও রীতিমতো শক্তসামর্থ তিনি। অথচ ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাছে তিনি ‘মৃত’! প্রমীলাদেবীর অভিযোগ, তাঁকে ‘মৃত’ দেখিয়ে বাপের বাড়ি সূত্রে পাওয়া রানিবাঁধের মৌলা ও বাজডাঙায় তাঁর প্রায় ৩০ বিঘা সম্পত্তি হস্তান্তর করে দেওয়া হয়েছে অন্যের নামে।

বুধবার বাঁকুড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে ওই বিষয়টি উঠতেই প্রশাসনিক কর্তারা স্তম্ভিত হয়ে যায়। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে ‘ঘুঘুর বাসা রয়েছে’। তা ভাঙতে প্রশাসনিক কর্তাদের সক্রিয় হওয়ার নির্দেশও দেন তিনি। প্রশাসন সূত্রের খবর, রানিবাঁধে এই অভিযোগ নিয়ে শুনানি করার কথা বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) সব্যসাচী সরকারের। জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, ‘‘রানিবাঁধের জমি হস্তান্তরের ঘটনায় জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর তদন্ত শুরু করেছে।’’ রানিবাঁধ এলাকা থেকে নির্বাচিত বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সদস্য চিত্তরঞ্জন মাহাত মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে বিষয়টি তুলেছিলেন। দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।

ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক আধিকারিক জানান, শুধুমাত্র কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর শংসাপত্রের ভিত্তিতে তাঁর জমি অন্যের নামে হস্তান্তর করা যায় না। যাঁর নামে জমি হস্তান্তর করা হচ্ছে, মৃতের সঙ্গে তাঁর রক্তের সম্পর্ক থাকা জরুরি। সেই সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণও দিতে হয়।

প্রমীলাদেবীর দাবি, যে পাঁচ জনের নামে তাঁর জমি হস্তান্তর করা হয়েছে, তাঁদের কারও সঙ্গে তাঁর রক্তের সম্পর্ক নেই। তাঁর কথায়, “ফেব্রুয়ারির গোড়ায় জমি হস্তান্তরের ব্যাপারটি জানতে পারি। ছেলেরা ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে আবেদনের জন্য জমির খাজনা মিটিয়ে রেকর্ডের কপি আনতে গিয়েছিল। তখনই জানা যায় আমি নাকি ‘মৃত’। আমার জমি গত বছর ১১ নভেম্বর অন্যের নামে হস্তান্তর করে দেওয়া হয়েছে।”

গত ৪ ফেব্রুয়ারি রানিবাঁধ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার অফিসে অভিযোগ করেন প্রমীলাদেবী। তাঁর দাবি, “সমস্যা মেটাতে কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি।” বিএলআরও (রানিবাঁধ) নির্মলকুমার দে গোটা বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেননি। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, “যাঁদের নামে জমি হস্তান্তর করা হয়েছে, তাঁরা নিজেদেরকে মৃতের রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় বলে দাবি করেছিল। এই মর্মে তথ্যও জমা করেছিল।”

ওই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে রানিবাঁধ পঞ্চায়েতও। প্রমীলাদেবীর মৃত্যুর শংসাপত্র রানিবাঁধ পঞ্চায়েত থেকে দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের। পঞ্চায়েত প্রধান রিঙ্কু মণ্ডল অবশ্য দাবি করেন, “ডেথ সার্টিফিকেটটি সম্পূর্ণ জাল। আমার সই স্ক্যান করে সেখানে বসানো হয়েছে।” তিনি জানান, জমি যাঁদের নামে হস্তান্তর করা হয়েছে, তাঁদের পঞ্চায়েতে হাজির হওয়ার নোটিশ জারি করা হয়েছে। তবে তাঁরা কেউ বাড়িতে না থাকায় নোটিশ হাতে ধরানো যায়নি। বারবার চেষ্টা করেও ওই জমি যাদের নামে হস্তান্তরিত হয়েছে তাদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

প্রতি সোমবার জেলাশাসকের দফতর এবং তিন মহকুমা এবং ব্লক কার্যালয়ে ‘জেলা জন-অভিযোগ দিবস’ পালন করা হয়। সেখানে সরাসরি মানুষের থেকে অভিযোগ শোনন জেলাশাসক, মহকুমাশাসক এবং বিডিও-রা।

জেলাশাসক বলেন, “মানুষের সমস্যা সরাসরি শুনতেই আমরা জন-অভিযোগ দিবসের আয়োজন করছি। প্রশাসনিক দফতরে যে কোনও অভিযোগ দীর্ঘ দিন ধরে পড়ে থাকলে সরাসরি মানুষ আমাদের কাছে এসে জানাতে পারেন। সেই লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Land Scam Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE