Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বোকারো-হাওড়া প্যাসেঞ্জার

ট্রেন বন্ধে সমস্যায় জঙ্গলমহল

জঙ্গলমহলের বিভিন্ন স্টেশন হয়ে চক্রধরপুর-হাওড়া ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি যায়। স্বাধীনতার আগের আমল থেকেই ওই ট্রেনটি চলে আসছে। বছর তিরিশেক আগে তার সঙ্গে যোগ করা হয় বোকারো-হাওড়া প্যাসেঞ্জার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৭ ১৩:০৮
Share: Save:

হঠাৎ ট্রেন বাতিলে মুশকিলে পড়ছেন পুরুলিয়া-সহ জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ধানবাদ-চন্দ্রপুরা শাখার ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। এর জেরে বাতিল হয়েছে বোকারো স্টিল সিটি-হাওড়া প্যাসেঞ্জার। আর এর জেরেই পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের অনেক যাত্রী সমস্যায় পড়েছেন।

জঙ্গলমহলের বিভিন্ন স্টেশন হয়ে চক্রধরপুর-হাওড়া ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি যায়। স্বাধীনতার আগের আমল থেকেই ওই ট্রেনটি চলে আসছে। বছর তিরিশেক আগে তার সঙ্গে যোগ করা হয় বোকারো-হাওড়া প্যাসেঞ্জার। চক্রধরপুর থেকে আসা ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেনের সঙ্গে বোকারো থেকে আসা ট্রেনটি আদ্রায় জুড়ে গিয়ে এক সঙ্গে হাওড়া যায়।

এই দু’টি ট্রেন মিললে মোট কামরার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭টি। এখন বোকারোর ট্রেনটি বাতিল হওয়ায় ৮ কামরার চক্রধরপুর-হাওড়া ফাস্ট প্যাসেঞ্জার যাতায়াত করছে। তার মধ্যে চারটি স্লিপার, একটি এসি, দু’টি জেনারেল এবং ১টি পণ্যবাহী এসএলআর কামরা। বোকারো থেকে যে ৯টি কামরা এতদিন যাতায়াত করত, তার উপরে পুরুলিয়ার দিকের বিভিন্ন স্টেশনের যাত্রীরাও নির্ভর করতেন। ফলে, হঠাৎ ট্রেন বাতিলে শুধু বোকারো এলাকা নয়, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকার যাত্রীরাও সমস্যায় পড়েছেন।

পুরুলিয়া থেকে কলকাতা যেতে হলে চক্রধরপুর ফাস্ট প্যাসেঞ্জারের বিকল্প ট্রেন রয়েছে আরও দু’টি— পুরুলিয়া এক্সপ্রেস এবং রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস। কিন্তু চক্রধরপুরেই ভিড় বেশি থাকে। ওই ট্রেনটি চক্রধরপুর থেকে বিকেল ৫টা নাগাদ ছাড়ে। হাও়ড়া পৌঁছয় ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ। ফলে পরীক্ষা দিতে যাওয়াই হোক বা অফিস কাছারি, ব্যবসা, ডাক্তার দেখানো— সমস্ত কাজ ওই ট্রেনে গেলে সময় মতো করতে পারা যায়। পুরুলিয়া এক্সপ্রেস হাওড়ায় ঢোকে বেলা সাড়ে ১১টার পরে। ফলে কাজের সময় অনেকটাই পেরিয়ে যায়। আর রূপসী বাংলা তো হাওড়া পৌঁছয় রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ। ফলে এক রাত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকে না।

কলকাতা ফেরার ক্ষেত্রেও সমস্যা একই। পুরুলিয়া এক্সপ্রেস আসে সাড়ে ১০টা নাগাদ পুরুলিয়ায় আসে। ফলে সেখান থেকে দূরে কোথাও যাওয়ার উপায় থাকে না যাত্রীদের। রূপসী বাংলার পুরুলিয়া আসতে আসে বেলা প্রায় পৌনে ১২টা বেজে যায়। ফলে কাজের একটা দিন মাটি হয়। সে দিক দিয়ে, চক্রধরপুর সকাল সাড়ে ৬টার আগেই পুরুলিয়া পৌঁছে যায়।

চক্রধরপুর-হাওড়া ফাস্ট প্যাসেঞ্জার বেশ কিছুটা ঘুরপথে যাতায়াত করলেও সেটির দৌলতে রাতটুকু ট্রেনে কাটিয়ে দিনের সমস্ত কাজের সময়টাই উসুল করতে পারতেন জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকার যাত্রীরা। ওই ট্রেনে এসি কামরা বাড়ানোর জন্য দীর্ঘ দিন ধরে দাবি উঠে আসছিল। কিন্তু উল্টে কামরা কমে যাওয়ায় অফিস যাত্রী, ব্যবসায়ী, পড়ুয়া— সমস্যায় পড়েছেন সবাই।

পুরুলিয়ার সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতো বলেন, ‘‘এই গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনটি বাতিল করা আমরা কোনও মতেই মেনে নেব না। এই বিষয়ে রেলের সঙ্গে কথা বলব।’’

কেন বাতিল করা হল বোকারো থেকে আসা ট্রেনটি?

বোকারো থেকে ওই প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি ধানবাদ-চন্দ্রপুরা শাখা দিয়ে আদ্রায় আসত। ওই শাখায় রাজাবেড়া এবং চন্দ্রপুরা স্টেশনের মাঝে কয়েক বছর ধরে মাটির নীচের কয়লা খনিতে আগুন জ্বলছে। অনেক বার রেল ও খনি সংক্রান্ত বিভিন্ন সরকারি কমিটি সেখানে পরিদর্শন করে রিপোর্ট দিয়েছে। ওই রিপোর্টগুলিতে জানানো হয়েছিল, নীচে টানা আগুন জ্বলায় রেল লাইনের তলার মাটির জোর দিন দিন কমে যাচ্ছে। যে কোনও সময়ে লাইন বসে গিয়ে বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু দিন কয়েকের নোটিসে বৃহস্পতিবার থেকে হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই শাখায় রেল চলাচল।

তবে, রেল চলাচল বন্ধ হলেও খাঁড়ার ঘা পড়েছে শুধু বোকারো-হাওড়া প্যাসেঞ্জারের উপরেই। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শাখায় চলা আরও তিনটি ট্রেন ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে তালগ়ড়িয়া-টুপকাডি শাখা দিয়ে। তালগ়ড়িয়া-টুপকাডি শাখায় আগে যাত্রীবাহী ট্রেন চলত না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, তিনটি ট্রেন চালানো হচ্ছে। সেগুলি বোকারো থেকে রওনা হয়ে টুপকাডির পরে রাজাবেড়া না গিয়ে চাষ, বাঁধডি হয়ে তালগড়িয়া আসছে।

জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকার যাত্রীরা প্রশ্ন তুলেছেন, অন্য তিনটি ট্রেন ঘুরপথে চালানো হলেও বোকারো-হাওড়া প্যাসেঞ্জার একেবারে বাতিল করা হল কেন?

এ প্রসঙ্গে ডিআরএম (আদ্রা) শরদকুমার শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘রেল বোর্ড এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সবাই চাইছেন বোকারো-হাওড়া প্যাসেঞ্জার তালগড়িয়া-টুপকা়ডি শাখা দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হোক। আগামী বৈঠকে আমরা সুপারিশ পাঠাবো। সেখানে এই নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE