Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কন্যাশ্রী প্রকল্পে স্কুলে ক্যারাটে ক্লাস

সমাজে নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে মেয়েরা যাতে নিজেদের আত্মরক্ষা নিজেরাই করতে পরে, সেই মানসিক ও শারীরিক দৃঢ়তা দিতে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় স্কুলে স্কুলে মেয়েদের ক্যারাটে শেখানোর উদ্যোগ নিল বীরভূম জেলা প্রশাসন।

কী ভাবে আত্মরক্ষা, এ ভাবেই শিখবে মেয়েরা। —ফাইল চিত্র।

কী ভাবে আত্মরক্ষা, এ ভাবেই শিখবে মেয়েরা। —ফাইল চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৫ ০২:৩৯
Share: Save:

সমাজে নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে মেয়েরা যাতে নিজেদের আত্মরক্ষা নিজেরাই করতে পরে, সেই মানসিক ও শারীরিক দৃঢ়তা দিতে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় স্কুলে স্কুলে মেয়েদের ক্যারাটে শেখানোর উদ্যোগ নিল বীরভূম জেলা প্রশাসন।

জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী জানিয়েছেন, আগামী ১৪ অগস্ট কন্যাশ্রী দিবসে জেলায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ছাত্রীদের ওই ক্যারাটে প্রশিক্ষণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হবে। কন্যাশ্রী বিভাগের ভারপ্রাপ্ত জেলা আধিকারিক মৌসুমী পাত্র বলছেন, ‘‘কন্যাশ্রী প্রকল্পে স্কুলছাত্রীদের ক্যারাটে শেখানোর উদ্যোগ রাজ্যে প্রথম। জেলা থেকে বিষয়টি প্রথমে প্রস্তাব আকারে দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যের অনুমোদন মিলেছে। ইতিমধ্যেই ওই খাতে টাকা বরাদ্দ হয়েছে।’’ তিনি আরও জানান, জেলার ছ’টি পুরসভা ও উনিশটি ব্লকের মোট ৩০টি স্কুল বেছে নিয়ে প্রায় দু’ হাজার ছাত্রীকে ছ’মাসের ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলির সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

২০১৩ সালে তৎকালীন অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) কৃষ্ণা মাড্ডির উদ্যোগে এবং সর্বশিক্ষা মিশনের টাকায় জেলার ৪০টি স্কুলের প্রায় দু’ হাজার মেয়েকে ক্যারাটে শেখানো শুরু হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে স্কুলের শিক্ষিকা এবং ছাত্রীদের মধ্যে প্রবল উৎসাহও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু, মোট দু’বছর ধরে মেয়েদের ওই প্রশিক্ষণের দেওয়ার কথা থাকলেও সর্বশিক্ষা মিশন ওই খাতে টাকা জোগান দিতে না পারায় দু’দফায় মোট ন’ মাস প্রশিক্ষণের পরেই তা বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে একটা আক্ষেপ ছিল ছাত্রী ও স্কুল শিক্ষিকাদের মধ্যে। ফের সেই সুযোগ আসায় ছাত্রীদের মধ্যে আবার উৎসাহ দেখা দিয়েছে। সাধুবাদ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষকশিক্ষিকারাও।

দুবরাজপুর সারদেশ্বরী বিদ্যামন্দির ফর গার্লসের প্রধান শিক্ষিকা সুপ্তি রায়, নলহাটি হাইস্কুল ফর গার্লসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়, সিউড়ির কড়িধ্যা যদু রায় মেমোরিয়াল পাবলিক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক কল্যাণ ভট্টাচার্য, বোলপুর শ্রীনন্দা উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গৌরাঙ্গ গোস্বামী বা হেতমপুর রাজ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সন্ধ্যা দাস— প্রত্যেকেই বলছেন, ‘‘সাধু উদ্যোগ সন্দেহ নেই। শারীরিক ও মানসিক শক্তি জোগাতে ক্যারাটের জুড়ি নেই। সেটা শিখে যদি ছাত্রীরা সম্মানহানিকর ও অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারে, সেটা অবশ্যই ভাল হবে। সঙ্গে বাড়বে আত্মবিশ্বাস। যেটা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হবে।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রের জানা গিয়েছে, প্রতি স্কুলের জন্য প্রশিক্ষণের জন্য মাসে তিন হাজার টাকা ও ছাত্রীদের পোশাকের খরচ ধরে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা খরচ হবে। ইতিমধ্যেই ইচ্ছুক ছাত্রীদের নাম সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। একটি স্কুল থেকে ৭০ জনের মতো ছাত্রী প্রশিক্ষণে যোগ দিতে পারবে। আগের বার সর্ব শিক্ষা মিশনের টাকায় জেলার যে দু’জন মূল প্রশিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন, সেই খয়রাশোলের কাঁকরতলার বাসিন্দা অলোক চট্টোপাধ্যায়, রামপুরহাটের অভিজিৎ লেটরাই ফের দায়িত্ব পাচ্ছেন। প্রশিক্ষণের শৈলী ‘কিউকুশিন’ (Kyokushin)। ওই শৈলীতে ‘থার্ড ডিগ্রি’ ব্ল্যাক বেল্টের অধিকারী ওই দুই প্রশিক্ষক বলছেন, ‘‘আবার দায়িত্ব পেয়ে ভাল লাগছে। গত বার যে ৪০টি স্কুলে ক্যারাটে শেখাচ্ছিলাম, তার মধ্যে ২২টি স্কুল এ বারের তালিকায় রয়েছে। আরও নতুন চারটি স্কুল যুক্ত হয়েছে। গত বার বাছা হয়েছিল নিচু ক্লাসের ছাত্রীদের। এ বার বাছা হচ্ছে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের।’’ মৌসুমীদেবীর জানান, এর পরেই স্কুল থেকে ওই মেয়েরা বেরিয়ে যাবে। তাই ওদেরই আগে সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

এত কিছুর পরেও একটি বিষয়ে উদ্বেগ কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। তা হল প্রশিক্ষণের সময়কাল নিয়ে। অধিকাংশ শিক্ষকশিক্ষিকাই মনে করছেন, ছ’মাস ক্যারাটে প্রশিক্ষণের জন্য যথেষ্ট নয়। সময়টা আরও বাড়ানো দরকার। বিশেষ করে যে স্কুলে এ বারই প্রথম ক্যারাটে প্রশিক্ষণ শুরু হবে। দুই প্রশিক্ষকও তা স্বীকার করে নিয়ে বলছেন, ‘‘প্রথমে কমলা তার পর নীল, হলুদ ও সবুজ বেল্ট অতিক্রম করে যতক্ষণ না এক জন ছাত্রী বাদামি বেল্ট পাচ্ছে, তত ক্ষণ পর্যন্ত আত্মরক্ষা করার মতো জায়গায় পৌঁছতে পারে না। সেই জন্য সময় চাই। ছ’ মাসে তেমন কিছু করা সম্ভব নয়।’’ কন্যাশ্রী বিভাগের ভারপ্রাপ্ত জেলা আধিকারিক অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছেন, শুরুটা হোক। তার পর দেখা যাবে।

এ দিকে, প্রশিক্ষণ শুরুর আগেই উত্তেজিত ছাত্রীরাও। এ বারের প্রশিক্ষণে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করা নলহাটির হাসিনা বেগম, হাসিবুন্নেসা, সিউড়ির ওহিদা খাতুন, দুবরাজপুরের দেবদ্যুতি বন্দ্যোপাধ্যায়, বোলপুরের বীথি সাহারা খুশি হয়ে বলছে, ‘‘পড়াশোনার সঙ্গে এমন কিছু শেখার খুব শখ। ছিল। ওই প্রশিক্ষণ আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE