Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কিডনির রোগে ‘আক্রান্ত’ ৪৩, গ্রামে গেলেন মন্ত্রী

গত বৃহস্পতিবারও রামপুরহাটের একটি নার্সিংহোমে মৃত্যু হয় ওই গ্রামের বছর পঞ্চান্নের আলিমুদ্দিন মিয়াঁর। তার পরে আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা।

আশঙ্কায়: পাইকপাড়ায় কয়েক জন রোগী। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

আশঙ্কায়: পাইকপাড়ায় কয়েক জন রোগী। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
পাইকপাড়া শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৭
Share: Save:

স্বাস্থ্য দফতর বলছে, ওই গ্রামে এমন ঘটলে তা বিরল। আর সেই গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, এই মুহূর্তে সেখানে বিরল রোগে আক্রান্ত ৪৩ জন। গত তিন বছরে সেই রোগের হানায় মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। তাঁরা আক্রান্ত কিডনির ‘সংক্রামক’ কোনও রোগে।

গত বৃহস্পতিবারও রামপুরহাটের একটি নার্সিংহোমে মৃত্যু হয় ওই গ্রামের বছর পঞ্চান্নের আলিমুদ্দিন মিয়াঁর। তার পরে আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা। রোগ সংক্রমণে যাতে আর কারও মৃত্যু না হয়, সে জন্য স্বাস্থ্য দফতরকে তৎপর হতে এলাকার বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হন তাঁরা। শুক্রবার সকালে ওই গ্রামে যান আশিসবাবু। গ্রামবাসী ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, মন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে ওই গ্রামে গিয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিদল। আক্রান্তদের নাম-তালিকা সহ রোগের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। গ্রামে পানীয় জল, কুয়োর জল, পুকুরের জল পরীক্ষা করার জন্য গিয়েছেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কর্মীরাও।

রামপুরহাট স্বাস্থ্যজেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পরমার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, পাইকপাড়া গ্রামে স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত ও তাঁদের পরিজনদের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট তৈরি করছেন। একটিমাত্র গ্রামে ৪৩ জন কিডনির সংক্রমণজনিত রোগে আক্রান্ত হলে সেটা বিরল বলেও তিনি মন্তব্য করেন। রামপুরহাট ১ ব্লকের বিএমওএইচ রামানুজ সিংহ জানান, ব্লকে দু’জন এএনএম নেই। সে জন্য ওই রোগের বিষয়ে আগে জানতে পারা যায়নি। আক্রান্তেরা কেউ-ই রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করোতে যাননি। যাবতীয় চিকিৎসা করিয়েছেন বর্ধমান ও সিউড়িতে। তাই তাঁরা ওই খবর পাননি।

শুক্রবার দুপুরে রামপুরহাট-দুমকা সড়ক ধরে ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়া থানার পিনারগড়িয়া স্টেশনের রেললাইন পেরিয়ে পাইকপাড়া গ্রামে পৌঁছে দেখা গেল, গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য কুমেলাবিবির স্বামী হাসান মিয়াঁর বাড়ির উঠোনে অনেকে জড়ো হয়েছেন। মন্ত্রী ঘুরে যাওয়ার পরে স্থানীয় যুবকেরা গ্রামে আক্রান্তদের তালিকা তৈরি করেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন হাসান মিয়াঁও।

তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ বছর ধরে্ এই রোগে ভুগছি। রামপুরহাটের সরকারি হাসপাতালে কিডনি রোগের কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই বলে শুনেছি। তাই বর্ধমান আর সিউড়িতে চিকিৎসা করাতে গিয়েছি।’’ তিনি আরও জানান, গত সাত বছর ধরে ওই রোগের সংক্রমণ আরও বেশি ছড়াচ্ছে। প্রথমে জ্বর, তার পর পায়ে, কোমরে ব্যথা, বমি ভাব, প্রস্রাবে জ্বালা— সে সমস্ত লক্ষণ দেখা দেয়। পরে আলট্রাসনোগ্রাফি করে দেখা গিয়েছে, দোগীদের দু’টি কিডনির আয়তন কমে গিয়েছে। তাঁর দাবি, ওই রেগে গত তিন বছরে ১৭ জন মারা গিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন জনের ডায়ালিসিস চলছে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা করাতে গিয়ে কেউ জমি বন্ধক রেখেছেন, কেউ বেসরকারি সংস্থা বা সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর থেকে ঋণ নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন। কেউ চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে না পেরে শয্যাশায়ী হয়ে রয়েছেন। গ্রামবাসী হাসাদ মিয়াঁ, দীপক ভকত জানান, এক জন রোগীকে প্রতি মাসে দু’বার চিকিৎসা করাতে সিউড়ি বা বর্ধমানে যাতায়াত করতে হয়। ওষুধ, ইঞ্জেকশন, ইউএসজি বাবদ প্রতি মাসে প্রায় ১১ হাজার টাকা করে খরচ হয়। এই অবস্থায় অনেকের চিকিৎসা চালানোই সমস্যা হয়ে উঠেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kideny Infection Disease
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE