Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

কোটশিলার কিশোরী উদ্ধার কানপুর থেকে

মায়ের বকা খেয়ে পরিবার ছেড়ে ট্রেনে উঠে পড়েছিল বছর চোদ্দোর এক কিশোরী। পুরুলিয়ার কোটশিলা থেকে সোজা উত্তরপ্রদেশের কানপুর! খোঁজখবর করে চাইল্ডলাইন তাকে কানপুর থেকে পুরুলিয়ায় পাঠালেও শেষমেশ সরকারি বিধিতে আটকে গিয়ে মায়ের সঙ্গে ফিরতে পারল না ছোট্ট মুসকান।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ০৭:২২
Share: Save:

মায়ের বকা খেয়ে পরিবার ছেড়ে ট্রেনে উঠে পড়েছিল বছর চোদ্দোর এক কিশোরী। পুরুলিয়ার কোটশিলা থেকে সোজা উত্তরপ্রদেশের কানপুর! খোঁজখবর করে চাইল্ডলাইন তাকে কানপুর থেকে পুরুলিয়ায় পাঠালেও শেষমেশ সরকারি বিধিতে আটকে গিয়ে মায়ের সঙ্গে ফিরতে পারল না ছোট্ট মুসকান।

কানপুরের চাইল্ডলাইন সেখানকার পুলিশের সঙ্গে মঙ্গলবার রাতে মুসকানকে পুরুলিয়া পাঠায়। রাতে তাকে আনন্দমঠ হোমে রাখা হয়। মাস তিনেক ধরে নিখোঁজ থাকা মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বুধবার ভোরেই সেখানে চলে আসেন মুসকানের মা মোতিয়াদেবী ও দাদু রাজু চৌধুরী। কিন্তু পুরুলিয়ায় এই মূহুর্তে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি না থাকায় এ দিন তাঁরা মেয়েকে কাছে পাননি। দিনভর অপেক্ষা করেও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির হয়ে কে হোম থেকে মুসকানকে রিলিজ অর্ডার দেবে তা ঠিক করতেই দিন কাবার হয়ে যায়। সন্ধ্যা হওয়ায় শেষে খালি হাতে ফিরে যেতে হয় মুসকানের মা ও দাদুকে। মুসকানের দাদুর আক্ষেপ, ‘‘অর্ডার হয়নি বলে নাতনিকে নিয়ে যেতে পারলাম না।’’ পুরুলিয়া জেলা চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্কর সরকার বলেন, ‘‘মেয়েটির রিলিজ অর্ডার না হওয়ায় জেলায় পৌঁছেও মুসকানের মায়ের কাছে ফিরে যাওয়া হল না।’’

আনন্দমঠ হোমের সুপার হৈমন্তী হেমব্রম বলেন, ‘‘বিধি হচ্ছে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি সক্রিয় না থাকলে জেলাশাসক রিলিজ অর্ডার দেবেন। কিন্তু তা হয়নি বলে মেয়েটিকে ছাড়া গেল না।’’ জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘মেয়েটির পরিবারের লোকজন সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য একটু সময় লেগেছে। ওই কিশোরীর রিলিজ অর্ডার দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

পুলিশ ও চাইল্ড লাইন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোটশিলা স্টেশনের অদূরে মাঠের মধ্যে যাযাবর সম্প্রদায়ের বসবাস। মুসকান নামে ওই কিশোরী সেই যাযাবর পরিবারেরই। মাস তিনেক আগে একদিন আচমকাই হারিয়ে যায় সে। যাযাবর হওয়ার সূত্রে তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান। তাঁরা ভেবেছিলেন, কোথাও চলে গিয়েছে, পরে ফিরে আসবে। কিন্তু নানা জায়গায় খুঁজেও তাঁরা ছোট্ট মুসকানের কোন হদিস পাননি।

তবে এ জন্য আর থানা-পুলিশ করার কথা তাঁরা ভাবেননি। চাইল্ড লাইন ও রেলপুলিশ জানাচ্ছে, কানপুর রেলপুলিশ একা একা ছোট্ট মেয়েটিকে স্টেশনে ঘুরে বেড়াতে দেখে উদ্ধার করে তাকে স্থানীয় হোমে পাঠিয়েছিল। পুরুলিয়া জেলা চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্করবাবু জানান, মাস খানেক আগে কানপুর চাইল্ড লাইন থেকে কোটশিলা থানায় একটি ফোন আসে। ফোনে মুসকানের চেহারার বর্ণনা, বয়েস ইত্যাদি জানিয়ে কোটশিলা থানাকে খোঁজ নিতে বলা হয় যে এখানে মুসকানের পরিবার সত্যিই থাকে কি না। ঘটনাচক্রে সে সময় ওই যাযাবর সম্প্রদায়ের লোকজন কোটশিলা স্টেশনের কাছেই ছিল। তাঁদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, তাঁদেরই একটি মেয়ে মাস তিনেক আগে হারিয়ে গিয়েছে। এরপর মেয়েটিকে বাড়ি ফেরাতে উদ্যোগী হয় কোটশিলা থানা।

জেলা চাইল্ডলাইনের সহায়তায় পুলিশ মুসকানকে কানপুর থেকে পুরুলিয়া ফেরানোর ব্যবস্থা করে। দীপঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘আমরা কিছুদিন আগেই জানতে পারি কানপুর চাইল্ডলাইন চেয়েছিল মেয়েটির বাবা-মা সেখানে গিয়ে মেয়েটিকে নিয়ে আসুক। কিন্তু মেয়েটির পরিবার এতটাই গরিব যে ওখানে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই আমরাই কানপুর চাইল্ডলাইনকে অনুরোধ করি মেয়েটিকে এখানে পৌঁছে দেওয়ার।’’ তাঁরা মেয়েটিকে পাঠালেও আইনি জটিলতায় সেই মেয়েকে দু’টি রাত কাটাতে হচ্ছে জেলারই হোমে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kotshila Kanpur abduction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE