Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
পুরুলিয়ায় ফের ক্ষমতায় তৃণমূল

জয়ী কে পি, হারলেন তারকেশ

সরকারি ভাবে ঘোষণা না হলেও নিজের নিজের ফল জেনে গণনাকেন্দ্র থেকে বাইরে বেরিয়ে আসছিলেন বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রার্থীরা। তখনও বের হননি পুরুলিয়ার বিধায়ক কে পি সিংহ দেও। বিধায়ক হলেও তিনি এই ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। এ বারের পুরভোটে পুরুলিয়ায় তাঁকেই চেয়ারম্যানের মুখ হিসাবে তুলে ধরেছিল তৃণমূল।

ভোটে জেতার পরে পুরুলিয়ায় তৃণমূলের পুরপ্রধান পদপ্রার্থী কে পি সিংহ দেও।—নিজস্ব চিত্র।

ভোটে জেতার পরে পুরুলিয়ায় তৃণমূলের পুরপ্রধান পদপ্রার্থী কে পি সিংহ দেও।—নিজস্ব চিত্র।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০৪
Share: Save:

সরকারি ভাবে ঘোষণা না হলেও নিজের নিজের ফল জেনে গণনাকেন্দ্র থেকে বাইরে বেরিয়ে আসছিলেন বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রার্থীরা। তখনও বের হননি পুরুলিয়ার বিধায়ক কে পি সিংহ দেও। বিধায়ক হলেও তিনি এই ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। এ বারের পুরভোটে পুরুলিয়ায় তাঁকেই চেয়ারম্যানের মুখ হিসাবে তুলে ধরেছিল তৃণমূল।

শুধু নিজের সতীর্থরাই নয়, বিরোধীরাও উৎসুক ‘কে পি’-দার ফল জানতে। গণনার শেষ লগ্নে হল থেকে বেরিয়ে এলেন কে পি। ঠোঁটের কোণে পরিচিত হাসি। দাদা কত হল ব্যবধান, প্রশ্ন উড়ে এল কয়েক জনের কাছ থেকে। বিধায়ক জবাব দিলেন, ‘‘চারশোর কিছু বেশি।’’

শনিবার ভোট পেরোনোর পর থেকেই পুরুলিয়া শহরে জোর আলোচনা ছিল, কে পি সিংহদেও কি জিতছেন? এ দিন ভোট গণনা শুরুর প্রথমে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী গোবিন্দ মুখোপাধ্যায় এবং পরবর্তী রাউন্ডগুলিতে বিধায়কের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছিলেন বিজেপি প্রার্থী রূপকুমার সরকার। শেষমেশ জয়ের খবর নিয়ে বিধায়ক বের হতেই অন্য কাউন্সিলরেরা তাঁকে নিয়ে গেলেন গণনা কেন্দ্রের বাইরে। মানভূম ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনের বাইরে তখন কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থকের ভিড়। পুলিশি ঘেরাটোপ পাশ কাটিয়ে বিধায়ক এগিয়ে যেতেই কান ফাটানো চিৎকার তৃণমূল কর্মীদের। ভিড়ের রং তখন সবুজ। হাতে হাতে উড়ছে সবুজ আবির। কেপি-কে প্রায় ছিনিয়েই নিল ভিড়!

কে পি জিতেছেন। কিন্তু, হেরে গিয়েছেন ভোটের ঠিক আগে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া পুরুলিয়ার সদ্য বিদায়ী পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তিনি এ বার কংগ্রেসের টিকিটে নন, বরং ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল হিসাবে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। আর এ দিন গণনা শুরু হওয়ার পরে তৃণমূলের প্রথম জয়ের খবর আসে সেই ওয়ার্ড থেকেই! কেন্দ্রে ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে তারকেশবাবু বললেন, ‘‘মানুষের রায় মাথা পেতে নিচ্ছি।’’

২০১০ সালের পুরভোটে পুরুলিয়ার ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল ১১টি দখল করেছিল। পরে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর পদত্যাগ করলে সেই ওয়ার্ডটি জিতে তৃণমূল ১২টি আসন পায়। এ বার একক ভাবে তৃণমূলের প্রাপ্ত আসন সংখ্যা ১৪। তৃণমূল সমর্থিত এক জন নির্দল নিয়ে ১৫। দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘মানুষ বিগত পুরবোর্ডের কাজের মূল্যায়নের বিচারে ভোট দিয়েছেন। তা ছাড়া, আমরা মানুষের কাছে কী করতে চাই, তা জানিয়েছি। ভাল ফল আমাদের প্রত্যাশিতই ছিল।’’ পুরপ্রধান পদপ্রার্থী কে পি সিংহদেও বলেন, ‘‘আমাদের একটাই লক্ষ্য, দুর্নীতিমুক্ত পুরসভা। সেটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্য। পুরুলিয়ার মানুষকে উন্নত পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করব।’’

এ দিন পরপর তৃণমূল প্রার্থীদের এগিয়ে থাকার খবর আসার মধ্যেই ভোটগণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এলেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়ী কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল প্রার্থী প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। তৃণমূল এ বার প্রদীপবাবুকে টিকিট দেয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি গৌতম রায়। প্রদীপবাবু বললেন, ‘‘সারা বছর মানুষের সঙ্গে থেকে কাজ করেছি। দল মর্যাদা দেয়নি। কিন্তু মানুষ দিয়েছেন।’’ আর গৌতমবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমি হেরেছি। মানুষ নির্দল প্রার্থীকেই সমর্থন করেছেন। রায় মাথা পেতে নিচ্ছি।’’

নজর ছিল পাশের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দিকেও। কেন না এ দিন গণনাকেন্দ্রে থাকা লোকজনের কাছে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফোন এসেছে কাল্টু-বিল্টুর (দুই ভাই সুদীপ মুখোপাধ্যায় ও প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের ডাকনাম) ফল কী হয়েছে, জানার জন্য। দল মর্যাদা দিচ্ছে না, এই অভিযোগে সুদীপবাবু তৃণমূল ছেড়ে প্রার্থী হয়েছিলেন কংগ্রেস থেকে। জিতেওছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষের ভোটে জিতে মানুষের কথাই ভুলে যান কিছু নেতা। তাঁরা অতীতকে ফিরে দেখতে চান না। আমার এই জয় মানুষকে উৎসর্গ করার পাশাপাশি ওই নেতাদের প্রতিও জবাব। জবাব আমি নই, দিয়েছেন মানুষ।’’

তৃণমূলকে অস্বস্তিতে ফেলে হার হয়েছে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী, বিধায়কের অনুগামী অনামিকা ত্রিপাঠীকেও। ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর সুনয় কবিরাজও এ বার দলের টিকিট পাননি। তাঁর স্ত্রী রুম্পা কবিরাজ এই ওয়ার্ড থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়েছিলেন। ফল বেরোতে দেখা যায়, জিতেছেন রুম্পাদেবীই। এখানে তৃণমূল তৃতীয় স্থানে রয়েছে। গত পুরবোর্ডের বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের বিভাস দাস জয়ী হয়েছে ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। প্রচারের সময় আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। বিভাসবাবুর কথায়, ‘‘আমার ওয়ার্ডের মানুষ আমার কাজের মূল্যায়ন করেছেন। আমরা বোর্ড গড়তে পারছি না। তবু আমাদের দায়িত্ব বেড়ে গেল।’’

পুরুলিয়ায় প্রচারে এসে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলে গিয়েছিলেন, ‘‘পুরুলিয়াকে বিরোধী শূন্য করুন।’’ ফল বলছে, তা হয়নি। গত বোর্ডে কংগ্রেসের ৭টি আসন ছিল। এ বার হয়েছে ৫টি। কংগ্রেস সমর্থিত এক নির্দল-সহ ৬টি। তবে, সন্ত্রাস, অশান্তি এবং রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের দাপটের মধ্যে ৬টি আসন পাওয়াকেও কৃতিত্বের বলছেন কংগ্রেস কর্মীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE