Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কৃষিপ্রধান গ্রামে আরাধ্যা লক্ষ্মীই

ইতিহাস অনুযায়ী, এক সময় জনপদহীন জঙ্গলঘেরা এলাকা ছিল ওই গ্রাম।

মগ্ন: মূর্তি গড়ছেন শিল্পী, দেখছে ছোটরা। কড়িধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

মগ্ন: মূর্তি গড়ছেন শিল্পী, দেখছে ছোটরা। কড়িধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৯ ০০:২৪
Share: Save:

গ্রামে দুর্গা বা কালীপুজোর মতো কোনও বড় পুজো নেই। এক সময় তা নিয়ে আক্ষেপ ছিল খয়রাশোলের কড়িধ্যার বাসিন্দাদের।

আক্ষেপ দূর করতে গ্রামের কয়েক জন যুবক নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসলেন। ঠিক হল, কৃষিপ্রধান গ্রামে লক্ষ্মীপুজো করলে কেমন হয়।

যেমন ভাবা তেমন কাজ ।

গ্রামের একটি নিচু জায়গা লক্ষ্মীপুজোর জন্য পছন্দ করা হল। কয়েকটি পরিবারের দান করা সেই জমিতেই মাটি ফেলে শুরু হল লক্ষ্মীপুজো। তিন দশক পেরিয়ে সেই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোই এখন খয়রাশোলের কড়িধ্যা গ্রামের সেরা উৎসব। কলেবরে দিন দিন বাড়ছে তা। তৈরি হয়েছে মুক্ত মঞ্চ। এ বছর তৈরি হয়েছে পাকা মন্দিরও। এখনও কাজ শেষ না হলেও, এ বার সেখানেই পুজো হবে। তবে আগামী বছর থেকে লক্ষ্মীপুজোর আগে ওই মন্দিরে প্রথম দুর্গাপুজোর ভাবনা রয়েছে গ্রামবাসীদের।

শনিবার ওই গ্রামের নবনির্মিত মন্দিরের সামনে মুক্তমঞ্চে সন্তোষ গড়াই, নিরঞ্জন গড়াই, অজয় মণ্ডল শোনালেন কী ভাবে লক্ষ্মীপুজো সেই গ্রামের সেরা উৎসব হয়ে উঠল। মুক্তমঞ্চে তখন প্রতিমায় গায়ে রঙের প্রলেপ দিচ্ছেন মৃৎশিল্পী পরীক্ষিত সূত্রধর। তাঁকে ঘিরে একদল কাচিকাঁচা।

ইতিহাস অনুযায়ী, এক সময় জনপদহীন জঙ্গলঘেরা এলাকা ছিল ওই গ্রাম। গ্রামের পাশে শালনদীর ও পাশে থাকা মানকরা গ্রাম উঠে গিয়েছিল দুষ্কৃতী ও ডাকাতদের উৎপাতে। কিন্তু নদীর ধার ঘেঁষা গ্রাম হওয়ায় কড়িধ্যায় কৃষির সম্ভাবনা ছিল প্রচুর। ধীরে ধীরে তাই লোকসংখ্যা বেড়েছে গ্রামে। বর্তমানে সেখানে ১৫০টি পরিবারের বাস। কৃষিজীবী গ্রামের জন্য লক্ষ্মীপুজোই আদর্শ, তা বছর তিরিশেক আগে বুঝেছিলেন ষষ্ঠী বাগদি, পরেশ মণ্ডল, প্রফুল্ল গড়াই। তাঁদের উদ্যোগেই শুরু পুজো।

গ্রামবাসীরা জানান, লক্ষ্মীপুজোকে নিজেদের পুজো বলে মনে করেন সকলে। সাধ্যমতো চাঁদা দেন। তাই ধূমধাম ভালই হয়। পুজোয় দিন কয়েক ধরে নানা সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। দিন চারেক পরে প্রতিমা বিসর্জনের দিন পর্যন্ত গোটা গ্রাম আনন্দে মেতে উঠে। বিসর্জনের দিন প্রতি বছরের মতো গোবিন্দভোগ চালের খিচুড়ি, নিরামিষ পদ, চাটনি, পায়েসে পঙক্তিভোজ হয়।

এখনই অবশ্য বিসর্জন নিয়ে ভাবতে নারাজ খুদে তপন বাউড়ি, আর্চনা বাউড়ি, দিশা গড়াই, সরস্বতী গড়াইরা। ঠাকুর তৈরি দেখার ফাঁকে তারা বলে, ‘‘এখন কয়েক দিন পড়াশোনা বাদ দিয়ে আনন্দ তো করি।’’

এলাকাবাসীর বিশ্বাস, লক্ষ্মীপুজো শুরুর পরে ক্রমে উন্নতির পথে এগোচ্ছে গ্রাম। গ্রামের মানুষের মিলিত অবদানে পাকা মন্দির গড়া গিয়েছে। সামনের বছর থেকে দুর্গাপুজো হবে। কিন্তু সমান উৎসাহে লক্ষ্মী পুজো থাকবে। শনিবার সকালেই বিশালপুর গ্রামে থেকে হাজির পুরোহিত আশিস ভট্টাচার্য। এ দিনই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়।

গ্রামের বধূ লতিকা গড়াই, সীমা গড়াই, সন্ধ্যা মণ্ডল বলছেন, ‘‘সত্যিই দারুণ আনন্দ হয় এই সময়। কয়েকটা দিন হৈহৈ করে কাটে। বাচ্চারা সব চেয়ে বেশি আনন্দ করে। অনেক পরিবারে নতুন জামাকাপড় ভাঙা হয় লক্ষ্মীপুজোতেই। বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয় স্বজন আসেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kojagari Lakshmi Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE