কুষ্ঠ রোগ কোনও পাপ নয়। কুষ্ঠ রোগীও কোনও অপরাধী নন। অন্যান্য অনেক রোগের মতো এটিও একটি জীবাণু বাহিত রোগ।
এলাকায় এলাকায় এই বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে কুষ্ঠ রোগ নিয়ে সচেতনতা গড়ছে ‘জাতীয় কুষ্ঠ দূরীকরণ কর্মসূচি’। আর তারই সূত্রে গুরুত্বপূর্ণ ওই কর্মসূচিতে এ বার গ্রাম পঞ্চায়েত, পুরসভা, এমনকী স্কুলকেও জোড়া হল। মহাত্মা গাঁধীর তিরোধান দিবস ৩০ জানুয়ারিকে প্রতি বছরই ‘কুষ্ঠ রোগ বিরোধী দিবস’ হিসাবে পালন করা হয়। এ বার দিনটি পালিত হবে জনমানসে সচেতনতা গড়তে। সেই লক্ষ্যে কাল, সোমবার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত, পুরসভা ও স্কুলে স্কুলে শপথবাক্য পাঠ করা হবে। দেশ, রাজ্যের সঙ্গে বীরভূমেও।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, ‘‘কর্মসূচির নাম— ‘স্পর্শ কুষ্ঠ প্রচার অভিযান’। জেলার প্রতিটি পঞ্চায়েত এবং স্কুলগুলিতে ওই শপথবাক্য পাঠানো হয়়েছে। স্কুলপড়ুয়াদের প্রার্থনার সময় এবং পঞ্চায়েত ও পুরসভায় এলাকার মানুষদের সামনে জনপ্রতিনিধিরা ওই শপথবাক্য পাঠ করবেন। সঙ্গে থাকবে স্বাস্থ্য দফতর। মাইক্রো লেভেলে প্রচার চালাতেই এই উদ্যোগ।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কুষ্ঠ একটি ক্রনিক সংক্রামক রোগ। ‘মাইক্রো ব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রি’ নামক জীবাণু দ্বারা এই রোগের সংক্রমণ ঘটে। আক্রান্ত রোগীর হাঁচি, সর্দি-কাশি বা অন্যান্য শ্বাসনালী ক্ষরিত পদার্থের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ায়। সংক্রমণ ঘটলে প্রথমে চামড়ায় প্রভাব দেখা যায়। রোগীর শরীরে তামাটে, ফ্যাকাশে অসাড় দাগ দেখা যায়। কিন্তু চামড়ায় দাগ হলেও এই রোগের আসল ক্ষতি হয় স্নায়ুতে। তখন অঙ্গহানি বা শরীরে বিকৃতি হতে পারে। জীবাণু শরীরে প্রবেশ ও তার প্রকাশের মধ্যে কমপক্ষে চার-পাঁচ বছর সময় লাগে। কোনও ক্ষেত্রে সেই সময়কাল ১০-১৫, এমনকী ২০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু প্রথম প্রথম শুধু দাগ ছাড়া কোনও অসুবিধা না থাকায় বা সচেতনতার অভাবে রোগী চিহ্নিত করে তাঁকে চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসাটাই যথেষ্ট সমস্যার। কেউ কেউ আবার জেনেও লোকলজ্জার ভয়ে এড়িয়ে যান চিকিৎসা।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কুষ্ঠ দূরীকরণ কর্মসূচির আওতায় ২০০২ সালে যখন এমডিটি (মাল্টি ড্রাগ থেরাপি) শুরু হওয়ায়, তখন থেকেই কুষ্ঠরোগের প্রাদুর্ভাব বা ব্যাপকতা কমতে থাকে। সেই সময় প্রতি দশ হাজারে কুষ্ঠরোগীর সংখ্যা যেখানে ৫৭.৬০ জন ছিল, সেটাই ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত নেমে এসেছে ০.৬৬ জনে। কিন্তু চিন্তার বিষয় হল, নতুন করে যে সব রোগী চিহ্নিত হচ্ছেন, শতাংশের হিসাবে তাঁদের মধ্যে অঙ্গহানির সংখ্যা বেশি। সচেতনতাকে আরও বাড়িয়ে তোলার সেটাই অন্যতম কারণ। জেডএলও বা জোনাল লেপ্রোসি অফিসার ইন্দ্রনীল আচার্যচৌধুরীর দাবি, ‘‘কুষ্ঠরোগ বা রোগী সম্বন্ধে যাবতীয় কুসংস্কার দূর করতে এবং প্রাথমিক স্তরেই রোগীদের চিহ্নিত করতে এই কর্মসূচি কাজ দেবে।’’
তবে, একটি কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। আজ থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজ্যে পালস্ পোলিয় কর্মসূচির মতো আরও একটি কর্মসূচির মাঝে স্বাস্থ্য দফতর কতটা সহযোগিতা করতে পারবে, সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy