সামান্য ঝড় বৃষ্টি হলেই অবধারিত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর একবার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলে পরিষেবা স্বাভাবিক করতেও অনেক সময় নেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। গ্রাহকদের ক্ষোভ সেখানেই।
স্থানীয় বিদ্যুৎ দফতরের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ খয়রাশোলের বাসিন্দাদের। উল্টো দিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে দেদার বিদ্যুৎ চুরি এবং অসহযোগিতার অভিযোগ বিদ্যুৎ দফতরের। গত শনিবার মারাত্মক কালবৈশাখী ঝড়ে ব্লকজুড়ে বিদ্যুৎ পরিষেবা কার্যত লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার পর দু’তরফে অভিযোগ ও ক্ষোভের মাত্রা আরও চড়েছে।
প্রতিবাদে কখনও বিদ্যুৎ দফতরে চড়াও হয়ে, কখনও বা বিদ্যুৎ দফতরের গাড়ি আটকে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন খয়রাশোলের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ। প্রায় পাঁচ দিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় শুক্রবার রাতেই খয়রাশোল সাব স্টেশনে চড়াও হন লোকপুর থানা এলাকায় কিছু বাসিন্দা। তার আগেই লোকপুরেই বিদ্যুৎ দফতরের গড়ি আটকে রাখেন কিছু মানুষ। শুক্রবার ফের কাঁকরতলার সাহাপুর গ্রামে বেশ কিছুক্ষণ বিদ্যুৎ দফতরের গাড়ি আটকে রাখেন স্থানীয় মানুষ। পরে অবশ্য পুলিশের তৎপরতায় গাড়িটি ছেড়ে দেন বাসিন্দারা। বিদ্যুৎ দফতরের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়র স্নেহাশিস সিংহ অবশ্য নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, ‘‘যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ হয়েছে। ঝড়ে অনেক সংখ্যক বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে গিয়েোছিল। আধিকারিক থেকে ঠিকাদার রাতদিন দাঁড়িয়ে থেকে কাজ তুলেছেন। কিছু এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের তরফে অসহযোগিতা না এলে কাজটা আরও দ্রুততার সঙ্গেই কারা সম্ভব হত।’’
খয়রাশোল ব্লকের বাসিন্দাদের দাবি, ব্লকের বিদ্যুৎ পরিষেবা বেশ খারাপ। একবার সমস্যা হলে সেটা মেটাতেই অনেক সময় লাগিয়ে দেয় বিদ্যুৎ দফতর। প্রথমত মুষ্টিমেয় দু’একজন ঠিকাদারকে লাগিয়ে কাজ সারে দফতর। তাই প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে একাধিক জায়গায় সমানভাবে কাজ তুলতে সমস্যা হয়। কখনও গাড়ির অভাবে কখনও বা লোকের অভাবেই এমনটা ঘটে। এছাড়া বিদ্যুৎ সারা ব্লকজুড়ে বিদ্যুতের খুঁটি যেভাবে পোঁতা হয়েছে সেগুলির অবস্থায় অত্যন্ত শোচনীয়। একবার ঝড়বৃষ্টি হলেই কোনও না কোনও খুঁটি পড়ে যায়। শুধু তাই নয় ব্লকজুড়ে অনেক জায়াগায় হাইটেনশন লাইন উপরে রয়েছে গাছের ডাল। সেগুলিকেও গ্রীষ্ম এবং বর্ষার আগে কেটে দেওয়ার কোনও উদ্যোগ নেই।
এলাকাবাসীর আভিযোগ, ‘‘গত শনিবার ও সোমবার ব্যাপক ঝড় বৃষ্টির পর অনেক সংখ্যক বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওয়ার পরও যে তৎপরতা দেখানোর কথা ছিল সেটা দেখাতে পারেনি দফতর। তাই কোথাও দু’দিন কোথাও তিন কোথাও চারদিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকেছে। এতে মানুষের ধৈর্ষ চ্যুতি ঘটতে বাধ্য।’’
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, খয়রাশোলের মোট দুটি সাবস্টেশনের আওতায় রয়েছে মোট চারটি ফিডার। বাবুইজোর, লোকপুর খয়রাশোল এবং ভীমগড়। মোট ১৪১টি গ্রাম রয়েছে। এক বিদ্যুৎ কর্তা বলছেন, গত শনি ও সোমবার ঝড়ে শুধু লোকপুর ফিডার এলাকায় ১১ হাজার হাইটেনশন লাইনেই ৩৮টি খুঁটি উপড়ে যায়। এছাড়া ২২০ ও ৪৪০ লাইনে গোটা ব্লকের আরও ২২টি খুঁটি পড়ে যাওয়ায় যে সমস্যা হয়েছিল সেটা রাতারাতি ঠিক করা সম্ভব ছিল না। তার উপর এলাকার বিদ্যুতের খুঁটি পুঁততে গিয়ে বা বিদ্যুতের তার জুড়তে গিয়ে বারবার স্থানীয় মানুষের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। বাসিন্দাদের যদি এমন অসহযোগিতা না দেখান তাহলে কাজ হতে বিলম্ব তো হবেই। শুধু কাজে অসুবিধা সৃষ্টি করা নয়, এলাকার মানুষের মানসিকাতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে বিদ্যুৎ দফতর। আড়ালে দফতরের কর্মীরা জানাচ্ছেন, গোটা খয়রাশোলে ২৬০০০ এর ও বেশি বিদ্যুৎ সংযোগ রযেছে। তারমধ্য ৪০-৫০ শতাংশ গ্রাহকই বিদ্যুতের বিল দিতে চান না। গোটা ব্লকজুড়ে অন্তত ২০টি গ্রাম রয়েছে সেখানে দেদার বিদ্যুৎ চুরি চলছে। কিন্তু বোমা বন্দুকের ভয়ে প্রতিবাদ করা যায় না। বিদ্যুৎ চুরির ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। প্রকৃতিক দুর্যোগ হলে ওই অবৈধ গ্রাহকরাই সবচেয়ে বেশি গোলমাল পাকান। এর সঙ্গে তার চুরি এবং আর্থিং কেটে নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এমন লোকেদের জন্যই বৈধ গ্রহকরা সমস্যায় আরও বেশি পড়ছেন। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও খয়রাশোলের বৈধ গ্রাহকদের দাবি, ‘‘যাঁরা অন্যায় করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিক দফতর। প্রয়োজনে পুলিশে অভিযোগ করুক। যারা নিয়মিত বিল দিই তাঁরা কেন ভোগান্তিতে কাটাব!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy