Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

হরিণদের জন্য জল নিয়ে পাহাড়ে চড়ছেন ওঁরা

বনদফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, বৈশাখের শেষে পাহাড়ের উপরে ছোট জলাশয়গুলি শুকিয়ে গিয়েছে।

পাত্রে জল ভরা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

পাত্রে জল ভরা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
সাঁতুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৯ ০০:০৩
Share: Save:

পাহাড়ের জঙ্গলে শুকিয়েছে জলের উৎস। আগেও দেখা গিয়েছে, জলের সমস্যা শুরু হতেই পাহাড়ের জঙ্গল থেকে হরিণ নীচে লোকালয়ের পুকুরে চলে আসছে। আর তাড়া করছে কুকুর। এই ঘটনা রুখতে পাহাড়ের উপরেই গরমকালে জলের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হল বন দফতর। নীচ থেকে জল ভর্তি টিন পাহাড়ে পৌঁছে দিচ্ছে স্থানীয় বন সুরক্ষা কমিটির লোকজন ও বনদফতরের কর্মীরা। পুরুলিয়ার সাঁতুড়ি ব্লকের দণ্ডহিত ও ধনেশডি পাহাড়ে গত চার-পাঁচ দিন ধরে এমনটা হচ্ছে।

সাঁতুড়ি ব্লকের পর্যটনস্থল বড়ন্তির অদূরেই দণ্ডহিত পাহাড়। বছর দশেক আগে বাঁকুড়া থেকে কয়েকটি চিতল হরিণকে এনে পাহাড়ে ছেড়েছিল বন দফতর। এখন হরিণের সংখ্যা দুশো ছাড়িয়েছে বলে দাবি বনদফতরের। পাহাড়ের জঙ্গলে রয়েছে বুনো শুয়োর, খরগোশ, গন্ধগোকুল ও শেয়ালের মতো অনেক প্রাণীও।

বনদফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, বৈশাখের শেষে পাহাড়ের উপরে ছোট জলাশয়গুলি শুকিয়ে গিয়েছে। শুরু হয়েছে জলসঙ্কট। জলের খোঁজে কিছু হরিণকে গ্রামের পুকুরের দিকেও ঘেঁষতে দেখেছেন স্থানীয় বনসুরক্ষা কমিটির লোকজন। আর তার পরেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কী করা হচ্ছে? প্রতিদিন বনদফতরের কর্মী ও বনসুরক্ষা কমিটির কয়েক জন কর্মী পালা করে টিনে নীচের পুকুর বা নলকূপ থেকে জল ভরে নিয়ে যাচ্ছেন পাহাড়ে। রোজ পনেরো টিন, মানে প্রায় দেড়শো লিটার জল নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। নীচ থেকে পাহাড়ের উপর পর্যন্ত দেড়শো মিটার দূরে দূরে সিমেন্ট ও মাটির বড় পাত্র তৈরি করে রেখেছে বন দফতর। সেগুলি জলে ভরে দেওয়া হচ্ছে। বনকর্মীর সংখ্যা সাঁতুড়িতে প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম থাকায় এই কাজে বিশেষ ভাবে যুক্ত করা হয়েছে স্থানীয় বনসুরক্ষা কমিটির সদস্যদের।

প্রায় একশো জন সদস্য আছেন ওই কমিটিতে। বন ও বন্যপ্রাণ রক্ষার কাজে তাঁরা বরাবরই এগিয়ে আসেন। এ বারেও দেড়শো মিটার উঁচুতে উঠে প্রতিদিন জল পৌঁছে দিচ্ছেন কমিটির সদস্যেরা। তাদের মধ্যে অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়, ধনঞ্জয় মালেরা বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগেই তিন-চারটি চিতল হরিণ জল খেতে নেমে কুকুরের আক্রমণে মারা যায়। আমরা চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারিনি। তাই এ বার হরিণের মৃত্যু আটকাতে বন দফতরের কথা মতো কাজ শুরু করেছি।”

ভিন রাজ্যে এই ধরনের কাজ দেখেছিলেন রঘুনাথপুরের রেঞ্জ আধিকারিক বিবেক ওঝা। সেই থেকেই দণ্ডহিত ও ধনেশডি গ্রামের পাহাড়ে এই ব্যবস্থা শুরু করার কথা মাথায় আসে বলে জানাচ্ছেন তিনি। বিবেকবাবু বলেন, ‘‘পুরোদমে বর্ষা নামার পরে পাহাড়ের জলের উৎস ভরে যাবে। তার আগে পর্যন্ত আমরা এই কাজ চালিয়ে যাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Wildlife Purulia Santuri Deer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE