পাড়া বৈঠকে হিরু লেট। নিজস্ব চিত্র
কথা বলতে গেলে এখনও মুখ নাড়াতে ব্যথা হয়। সেদিনের ঘটনায় তিনটে দাঁত ভেঙে গিয়েছিল। এখনও দুটো দাঁত অল্প অল্প নড়ছে। ডান চোখেও ভাল দেখতে পান না। মাথার শিরাগুলো ফোলা। এখনও মাঝে মাঝেই ব্যথা হয় খুব। তবু বছর ষাটের বৃদ্ধ হীরু লেট চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে সেদিনের ঘটনার জবাব দিতে চান। আর নয়, এবারে নিজের ভোট নিজেই দেবেন তো বটেই সেই সঙ্গে পাড়া প্রতিবেশী অনান্য আত্মীয় স্বজন-সহ দলের কর্মীরা যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেই জন্য নড়বড়ে শরীর নিয়েই প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তাঁর কথায়, “মেরেই তো ফেলেছিল। কোনওক্রমে বেঁচে আছি। তবে এবারে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যতটুকু লড়াই করতে হয় করব।’’
এক বছর আগের ঘটনা। ৫ এপ্রিলের দুপুর। পঞ্চায়েত নির্বাচনে নলহাটি-১ ব্লকের প্রশাসনিক কার্যালয়ে তৃণমূলের প্রতিরোধ উপেক্ষা করে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েছিল বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং বিজেপি প্রার্থীরা। ব্লক প্রশাসনিক কার্যালয়ের সামনে সাদা কাপড়ে মুখ ঢাকা লাঠিধারী ‘উন্নয়ন বাহিনী’র হাতে জখম হয়েছিলেন নলহাটি থানার ভগবতীপুর গ্রামের সিপিএম কর্মী হীরু লেট এমনটাই অভিযোগ হয়েছিল তখন। যদিও তাতে অভিযুক্তদের কি শাস্তি হয়েছিল তিনি আজও জানেন না। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসা করে কিছুটা সুস্থ হন হীরু। চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করেছিল দল।
বছর ঘুরতেই আবার নির্বাচন। প্রায় ৪০ বছরের সিপিৈএমের সক্রিয় কর্মী হীরু লেট এবারও নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে বেরোচ্ছেন। দলের মিছিল মিটিং-এ যোগ দিচ্ছেন। আর নিজের ভোট নিজে প্রদান করার জন্য দলীয় কর্মীদের উৎসাহিত করছেন। একবছর আগের স্মৃতি এখনও টাটকা। সেই ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য আমার সঙ্গে গ্রামের দুজন প্রার্থী ছিলেন। ব্লক অফিসের বাইরে যখন দাঁড়িয়ে তখনই কিছুটা দূরে বিকট শব্দে বোমা ফাটল। চারিদিক ধোঁয়ায় ভরে গেল। বোমার টুকরো এসে গায়ে বিঁধল। আচমকা দেখি মুখে সাদা কাপড় বাঁধা, তিন যুবক আমাকে টানতে টানতে সামনে বটতলার দিকে নিয়ে গেল। আমার মাথায় উইকেট দিয়ে সজোরে মারতেই আমি জ্ঞান হারাই। কতক্ষণ যে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলাম খেয়াল নেই। দলের কর্মীরা আমাকে উদ্ধার করেন।’’ প্রথমে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করানো হয় তাঁকে। শেষ পর্যন্ত কলকাতায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।
হীরুর স্ত্রী দ্রৌপদীও ক্যানসার রোগী। দুই ছেলে বাইরে কাজ করেন। অসুস্থ দ্রৌপদী বলেন, ‘‘দল করতে গিয়ে স্বামীকে ওরা আধমরা করেছে। কেন নিজের ভোট নিজে দিতে পারব না? নিজের ভোট নিজে প্রয়োগ করবোই। যা হয় হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy