অনুব্রত মণ্ডলের খাসতালুকেই এ বার নির্বাচনী সভা করতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
হতে পারেন তিনি একটি রাজনৈতিক দলের জেলা সভাপতি। তবে, তাঁর অনুগামীরা মনে করেন, তিনিই জেলার মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ, জেলার শেষ কথা তিনিই। শাসকদলের সেই দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডলের খাসতালুকেই এ বার নির্বাচনী সভা করতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
লোকসভা ভোটের মুখে প্রতিটি সভায় নিয়ম করে মোদী এবং তাঁর সেনাপতি অমিত শাহকে তুলোধোনা করেছেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত। ওই দু’জনকে কটাক্ষ করতে করতে একেক সময় শালীনতার মাত্রাও তিনি ছাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কখনও ‘ছাগল’, কখনও ‘পাগল’ বলেছেন মোদী-শাহকে। সেই অনুব্রতের ঘাঁটিতেই আগামী ২৪ এপ্রিল মোদী সভা করবেন, এই কথা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই জেলার রাজনীতিতে তাপ ছড়িয়েছে। বিজেপি, তৃণমূল দুই শিবিরের নেতা-কর্মীরাই উৎসুক, সে দিন সভায় মোদী কী বলেন, তা নিয়ে। ২৪ তারিখ বোলপুরের পর নদিয়ার রানাঘাটেও সভা করার কথা রয়েছে মোদীর। কিন্তু, বোলপুরে অনুব্রত বনাম মোদী দ্বৈরথ কেমন হয়, তা দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন যুযুধান দু’দলের কর্মীরা। এরই মধ্যে শুক্রবার বিকেলে বোলপুর ও ইলামবাজারের মাঝামাঝি কামারপাড়ার মাঠে নরেন্দ্র মোদীর সভার অনুমতি মিলতে আরও চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
বিজেপি নেতাদের অবশ্য বক্তব্য, কোথায় দেশের প্রধানমন্ত্রী, আর কোথায় একটি ছোট্ট জেলার এক রাজনৈতিক নেতা। কোনও তুলনাই চলে না! দলের এক নেতার কথায়, ‘‘বিপক্ষের অনেক বড় বড় নাম মোদীর বাক্যবাণে ধরাশায়ী হয়ে যান। অনুব্রত তো সেখানে কিছুই নন! অনুব্রত নিয়ে একটি শব্দ খরচ না করেও বিজেপি-র পক্ষে যে হাওয়া তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী, সেটাই সামলাক শাসকদল।’’ কিন্তু এটাও ঘটনা যে, মোদী-শাহ জুটির সভার জন্য মাঠ জোগাড় করার ক্ষেত্রে যে ভাবে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে বীরভূমের বিজেপি নেতাদের, তাতে তাঁরা শাসকদল আরও নির্দিষ্ট করে বললে অনুব্রতের বিরুদ্ধেই কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ তুলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী সভা করবেন আপনার খাস তালুকে। ভোটযন্ত্রে এর কোনও প্রভাব পড়বে কি? এই প্রশ্নের উত্তরে অনুব্রতের হেঁয়ালিপূর্ণ জবাব, ‘‘ওঁর সভার আগেই দেখবেন মাঠে ছাগল ছেড়ে দেবে। এই জমিটা খেলো, ওই জমিটা খেলো। তার পর আরও দূরের জমিতে ঘাস।’’ এই জবাবের কী ব্যাখ্যা, সেটা অবশ্য খোলসা করেননি জেলা তৃণমূল সভাপতি। তবে, মোদীর সভাকে যে তিনি পাত্তা দিচ্ছেন না, তা অন্তত প্রকাশ্যে স্পষ্ট করে দিচ্ছেন। যা জেনে বিজেপি-র জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় দাবি করছেন, ‘‘জেলায় আমাদের দলের অবস্থা ভাল। মোদী ও অমিতজির সভার পরে আমাদের পক্ষে ঝড় উঠবে। সন্ত্রাস ছড়িয়ে মানুষকে ভোট দেওয়া থেকে তৃণমূল না আটকালে ফল টের পাবেন অনুব্রতেরা।’’
তৃণমূলের অন্দরের খবর, মুখে যাই বলা হোক, ২২ তারিখ মহম্মদবাজারের গণপুরে অমিত শাহ এবং ২৪ তারিখ বোলপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভার দিকে তীক্ষ্ণ নজর থাকবে শাসকদলের। দু’টি সভায় কেমন লোক হচ্ছে, পরিচিত কোনও মুখ, যাঁরা এতকাল শাসকদলের সঙ্গে ছিলেন, তাঁদের কাউকে সভার ভিড়ে দেখা যায় কিনা, তার দিকেও লক্ষ্য রাখা হবে।
তৃণমূলের কর্মীরা আরও উৎসাহিত, কারণ, মোদীর সভার চব্বিশ ঘণ্টা পরেই ২৫ এপ্রিল সিউড়িতে সভা করবেন দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মনে করা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী ওই সভা থেকে মোদীর অভিযোগের জবাব দেওয়ার পাশাপাশি বিজেপি-র সমালোচনায় সুর চড়াবেন। যে জিনিসটা হয়ে আসছে উত্তরবঙ্গের ভোটের সময় থেকেই। বারবারই মোদী সভা করার পরে মমতা সভা করে প্রধানমন্ত্রীকে চাঁচাছোলা ভাষায় বিঁধেছেন। বীরভূমেও তার ব্যতিক্রম হবে না বলেই মনে করছেন জেলা তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। এরই মধ্যে শুক্রবার নলহাটির জনসভায় বিজেপি এবং মোদী-শাহকে তীব্র সুরে আক্রমণ করেছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
সব মিলিয়ে মোদীর সভার আগেই রাজনীতির পারদ চড়ছে বীরভূমে। মোদী-অমিত কী বলেন, মমতাই বা কী জবাব দেন— জানতে মুখিয়ে রয়েছেন দু’দলের নিচুতলার কর্মীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy