সিউড়িতে শতাব্দী রায়ের কাছে জলসঙ্কটের অভিযোগ এলাকাবাসীর।নিজস্ব চিত্র
গত পুর-নির্বাচনে তৃণমূল পরিচালিত সিউড়ি পুরসভার বিরুদ্ধে জল সমস্যাই ছিল বিরোধীদের প্রচারের প্রধান হাতিয়ার। তার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় চার বছর। নতুন জলপ্রকল্পের উদ্বোধনও হয়েছে। কিন্তু, জল-সমস্যা নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভ যে পুরোপুরি মেটেনি, মঙ্গলবার তার আঁচ পেলেন বীরভূমের তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ শতাব্দী রায়।
কেন বছরের পর বছর তাঁদের তীব্র জলকষ্টে থাকতে হবে, তা জানতে চেয়ে এবং নালিশ জানাতে পুর-এলাকা থেকে পাশের পঞ্চায়েত এলাকা পর্যন্ত কার্যত বিদায়ী সাংসদের পিছু ধাওয়া করলেন সিউড়ি শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অপারেটিভ কলোনির বেশ কয়েক জন মহিলা। সম্মিলীত ক্ষোভের মুখে পড়ে রীতিমতো বিব্রত শতাব্দী তাঁদের জানান, তাঁর সাংসদ তহবিলের টাকায় ওই এলাকায় ৫টি গভীর নলকূপ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোন এলাকায় তা করা হয়েছে, সেটা স্থানীয় কাউন্সিলর বলতে পারবেন।
তৃণমূল সূত্রের খবর, এ দিন সকালে সিউড়ি ২ ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় প্রচার ছিল শতাব্দী রায়ের। দমদমা পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন গ্রামে প্রচার সেরে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া কেন্দুয়া পঞ্চায়েত এলাকার হাটজনবাজারে আসতেই মহিলাদের ক্ষোভের মুখে পড়েন শতাব্দী।
কেন ক্ষোভ?
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ওই ওয়ার্ডের কো-অপারেটিভ পাড়ার বাসিন্দা শান্ত সাহা, উর্মিলা সরকার, মিনু সাহা, সৌ দাস, প্রিয়ঙ্কা সাহাদের অভিযোগ, ১২ বছর ধরে তাঁদের পাড়ায় জলকষ্ট। পাড়ায় দু’টি গভীর নলকূপ আছে বটে, কিন্তু সেই জল পানের অযোগ্য। অনেক দূর থেকে মহিলাদের কষ্ট করে সারাদিনের জল নিয়ে আসতে হয়। পুরসভা পানীয় জলের পাইপলাইন টেনেছে। দু’বছর আগে স্ট্যান্ডকলও দিয়েছে। কিন্তু সেই কলে জল আসে না। তাঁদের বক্তব্য, পুরসভা থেকে বিদায়ী সাংসদ—সবার কাছে দরবার করেও যে জল মেলেনি, এ দিন সেটাই শতাব্দীকে তাঁরা জানাতে চেয়েছেন। ওই মহিলাদের কথায়, ‘‘গতবার উনি জলসঙ্কট মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু কোথায় কী! তাই তাঁর কাছে গিয়েছিলাম।’’
জল নিয়ে ক্ষোভ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেটা এলাকার মহিলাদের সঙ্গে কথা বললেই স্পষ্ট হয়। কেননা, শতাব্দী তাঁদের এলাকায় আসবেন, এই খবর পেয়ে তাঁর কাছে অভিযোগ জানাতে এ দিন সকাল থেকেই প্রস্তুত ছিলেন ওই মহিলারা। তাঁরা পুর-এলাকায় বিদায়ী সাংসদের পথ চেয়ে আপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু, বিক্ষোভ হতে পারে, এই আশঙ্কায় অন্য পথে শতাব্দীকে নিয়ে পঞ্চায়েত এলাকায় হাটজনবাজার দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এই খবর পেয়ে সটান সেখানে পৌঁছে নিজেদের ক্ষোভ জানাতে থাকেন ওই মহিলারা।
ঘটনা হল, জেলা সদর সিউড়ির অন্যতম প্রধান সমস্যা পুর-এলাকার সবকটি ওয়ার্ডে পরিস্রুত পানীয় জল না পৌঁছনো। পুরসভা সূত্রে খবর, আগের যে জলপ্রকল্প ছিল, সেটিকে সম্প্রসারিত করতে বেশ কয়েক কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও জল-সঙ্কট মেটেনি। ১৯ ওয়ার্ড বিশিষ্ট সিউড়ি পুরসভার অন্তত ৭টি ওয়ার্ডে ঠিক মত জল পৌঁছাত না। তৃণমূল ফের পুরসভায় ক্ষমতা দখলের পরেই শহরের জলকষ্ট মেটাতে প্রায় ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। কাজের দায়িত্ব পায় পুর-কারিগরি দফতর। সেই প্রকল্প কাগজে কলমে শেষ। তার পরেও জল-সঙ্কট কেন থেকে গিয়েছে, সেটাই স্পষ্ট নয় শহরবাসীর কাছে।
সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘১৮ নম্বরের সঙ্গে বেশ কিছু ওয়ার্ডে জলের সমস্যা রয়েছে, এটা ঠিক। তবে এর দায় পুর-কারিগরি দফতরের। এত টাকার প্রকল্পেও জলের সমস্যা মেটানো যায়নি।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, এ দিন মহিলাদের বিক্ষোভের পিছনে বিরোধীদের ইন্ধন রয়েছে। তিনি জানান, জলের সমস্যা মেটাতে ওখানে সাবমার্সিবল করে জল দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। দিন কয়েকের মধ্যে সমস্যা মিটবে। যদিও বাসিন্দারা বলছেন, সাবমার্সিবল দিয়ে তাঁদের পাড়ার সমস্যা মিটবে না। ইন্ধনের অভিযোগ উড়িয়ে তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘কষ্ট না পেলে কেউ কি সাধ করে বিক্ষোভ দেখায়?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy