বোলপুরে প্রহরা। নিজস্ব চিত্র
ভোটগণনার দিন পর্যন্ত প্রতিটি স্ট্রং-রুমের আশপাশে রাতপাহারা-সহ কড়া নজরদারি চালানোর নির্দেশ আগেই দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নির্দেশ মেনে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তার ব্যবস্থা করে ফেলেন দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা। ব্যতিক্রম নয় বীরভূমের দু’টি গণনাকেন্দ্রও।
বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের ভোটগণনা হবে সিউড়ির সরকারি পলিটেকনিক কলেজ শ্রীরামকৃষ্ণ শিল্প বিদ্যাপীঠে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, স্ট্রং-রুম ঘিরে ত্রিস্ত্ররীয় নিরাপত্তা বলয় করা হয়েছে। প্রশাসনের পরিচয়পত্র ছাড়া সেই নিরাপত্তার ঘেরাটোপে প্রবেশ নিষেধ।
তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছেন, সেই সমস্যা এড়াতে শাসকদলের বিশ্বস্ত ১৩ জন কর্মীর জন্য পরিচয়পত্র নেওয়া হয়েছে। তাঁরা দিনরাত পালা করে স্ট্রং-রুম পাহারা দিচ্ছেন।
কী ভাবে তা করা হচ্ছে, সে কথা জানান তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের জেলা সভাপতি কাজী ফরজুদ্দিন। তিনি জানান, স্ট্রং-রুমের নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। সিসিটিভি কন্ট্রোল রুমের বাইরে একটি জায়ান্ট স্ক্রিনে স্ট্রং-রুমের নিরাপত্তার খুঁটিনাটি দেখা যাচ্ছে। পুলিশের খাতায় সই করে পরিচয়পত্র থাকা তৃণমূল কর্মীরা পালা করে ভোটগণনা কেন্দ্র চত্বরে ঢুকে সে সব দেখে আসছেন। রাতে সেখানে ঢোকা বারণ থাকায় নজরদারি চলছে বাইরে থেকেই।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের ভোটগণনা কেন্দ্র হয়েছে বোলপুর কলেজে। স্থানীয় পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সুকান্ত হাজরার নেতৃত্বে কয়েক জন তৃণমূলকর্মী সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে নজরদারি চালাচ্ছেন। সুকান্তবাবু বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের অনুমতিপত্র নিয়ে কয়েক জন দলীয় কর্মী ওই গণনাকেন্দ্রের সিসিটিভি ক্যামেরার ছবিতে সারাক্ষণ নজর রাখছেন। অন্যেরা শিবির করে গণনাকেন্দ্রের বাইরে থাকার ভাবনা নিয়েছিল। কিন্তু কমিশনের অনুমতি না মেলায় এদিক ওদিক থেকেই নজরদারি চলছে।’’
শেষ দফার ভোট-প্রচারের সময়েই ইভিএম নিয়ে কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন মমতা। জানিয়েছিলেন, দিল্লি থেকে তিনি খবর পেয়েছেন স্ট্রং-রুমে ঢুকে ইভিএম বদলে দিতে পারে বিজেপি। তাই দলীয় কর্মীদের বিশেষ পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। কারচুপি করা হচ্ছে এমন সন্দেহ হলেই সেই ছবি তুলে পাঠিয়ে দিতে হবে দলীয় নেতৃত্বের কাছে। তেমন কোনও ক্ষেত্রে দলের তরফ থেকে পুরস্কৃত করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছিলেন মমতা।
জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, নেত্রীর থেকে সেই বার্তা পাওয়ার পরেই প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ করা হয়েছে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলছেন, ‘‘ভোট প্রক্রিয়ার মতোই স্ট্রং-রুমে নজরদারি চালানোর অধিকার দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এটা নতুন বিষয় নয়। নির্বাচন কমিশনের নিয়মের মধ্যেই রয়েছে। আমাদেরও তিন কর্মী সেই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। শাসকদলের ১৩ জনের কথা জানা ছিল না।’’ জেলা বিজেপি সভাপতি রামকৃ্ষ্ণ রায় বলছেন, ‘‘দু’জন কর্মী সচিত্র পরিচয়পত্র নিয়ে যাতে ওই দায়িত্ব করতে পারেন, প্রশাসন তার অনুমতি দিয়েছে। বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফলাফলে বিজেপি এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা সামনে আসতেই নাটক করছে শাসক দল।’’
শুধু স্ট্রং-রুম পাহারা নয়, এ বার গণনার সময় ভিভিপ্যাটের সঙ্গে ইভিএমের ভোটের হিসেবের সামঞ্জস্য থাকছে কি না, সে দিকেও নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বীরভূমের দু’টি আসনে জয়ী হবে শাসকদলই। তবে নেত্রী যা নির্দেশ দিয়েছেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে।
বিজেপি ও বাম নেতৃত্বের কটাক্ষ— গণনাকেন্দ্রের ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তার প্রথম ধাপে কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ানেরা থাকলেও, পরের দু’টি ধাপে রাজ্য পুলিশ। জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসক, জেলা পুলিশ সুপার সকলেই রাজ্য সরকারের হয়ে কাজ করছেন। তা হলে এমন আশঙ্কা শাসকদল কেন করবে! এমন আশঙ্কা তো করবে বিরোধীরাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy