Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

জয়ের হ্যাটট্রিক হবে কি, প্রশ্ন ঘুরছে বীরভূমে

বোলপুরে মিললেও, জল্পনা সত্যি হল না বীরভূম কেন্দ্রে।

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৯ ০৪:৫১
Share: Save:

বোলপুরে মিললেও, জল্পনা সত্যি হল না বীরভূম কেন্দ্রে।

‘ট্র্যাক রেকর্ড’ যথেষ্ট ভাল হলেও এ বার বীরভূম আসনে শতাব্দী রায় প্রার্থী না-ও হতে পারেন, এমন জল্পনা ছড়িয়েছিল। শোনা যাচ্ছিল, ওই কেন্দ্রে লড়তে পারেন তৃণমূল জেলা সভাপতির ‘অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ’ তথা দলের জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহের নাম। এমনও রটেছিল, সাংসদ হিসেবে শতাব্দী যত ভাল কাজই করুন, দলীয় সংগঠন মজবুত করার ক্ষেত্রে তাঁকে নাকি তেমন ভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ তিনি বীরভূমে সব সময় থাকেন না। শতাব্দী প্রার্থী হন, তা নাকি চাইছিলেন না অনুব্রত মণ্ডলও।

এমন একটা আভাস যে শতাব্দীর কানেও পৌঁছেছে, তৃতীয় বারের জন্য বীরভূম আসনে দল মনোনীত করার পরে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় তেমনই ইঙ্গিত মিলল। শতাব্দী বলেন, ‘‘ব্লক, টাউন সভাপতিদের সংবাদমাধ্যম অস্থির করছিল বারবার। তাঁরা আমাকে ফোন করে বলছিলেন— দিদি আমাদের ছেড়ে যাবেন না।’’ প্রশ্ন ছিল, বীরভূম কেন্দ্রে আপনাকে বাদ দিয়ে অন্য কোনও প্রার্থীর কথা কী কানে এসেছিল? সরাসরি উত্তর এড়িয়ে শতাব্দীর জবাব, ‘‘আমার কানে শুধু দিদি-র ফোনটাই এসেছে। দিদি যখন ফোন করে বলে দিয়েছেন, সেটাই শেষ কথা।’’

রানা সিংহের নাম যে আলোচনায় ছিল, তা এ দিন মেনেছেন স্বয়ং অনুব্রতও। তাঁর কথায়, ‘‘রানা সিংহের নামও বিবেচনায় ছিল। দলনেত্রী যা ভাল মনে করেছেন সেটাই করেছেন।’’ অনুব্রতের সংযোজন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছেন। এটুকু বলব, ওঁরা সবাই উন্নয়ন করবেন, ভাল কাজ করবেন।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘কে প্রার্থী হলেন সেটা নয়, বড় কথা দল। এখানে জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই শেষ কথা। তিনি যাঁকে মনোনীত করেছেন, তাঁর হয়েই আমরা সকলে ঝাঁপাব।’’ একই বক্তব্য কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

দশ বছর আগে বীরভূমের ‘লালদুর্গে’ বহিরাগত প্রার্থী হিসেবে ঘাসফুল ফুটিয়ে চমকে দিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় বারও বিপক্ষকে হেলায় হারান। তা-ই তৃতীয় বারের জন্য বীরভূম লোকসভা আসনে ‘তারকা প্রার্থী’ শতাব্দীর উপরেই ভরসা রাখলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জয়ের হ্যাটট্রিক করতে পারবেন কিনা, এখন সে প্রশ্ন ঘুরছে জেলার রাজনীতিতে।

দশ বছর আগে ‘নতুন মুখ’ হিসেবে বীরভূম আসনে প্রার্থী হয়েই বাজিমাৎ করেছিলেন শতাব্দী৷ তৃণমূল সূত্রের খবর, শতাব্দীকে প্রার্থী করা নিয়ে দলের দুই শীর্ষনেতার মধ্যে ‘ঠান্ডা লড়াই’ চলছিল। কিন্তু প্রার্থী করা হয় শতাব্দীকেই। সে বার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। দলের নেতাদের একাংশের বক্তব্য, সেই সময় অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে শতাব্দীর সম্পর্ক ‘মসৃণ’ ছিল না। মূলত আশিসবাবুর উপরে নির্ভর করেই রুপোলি পর্দার নায়িকা তাঁর লোকসভা কেন্দ্রে ‘ঝড়’ তুলেছিলেন

প্রচারে। ঝড় এতটাই ছিল যে, সিপিএমের প্রার্থী ব্রজ

মুখোপাধ্যায়কে পরাজিত করে বীরভূম লোকসভা আসনে জয়ী হন শতাব্দীই।

তবে ভোটের প্রচারে তো বটেই, এমনকি জেতার পরেও সিপিএম এবং দলের ‘বিরোধী গোষ্ঠী’ রব তুলেছিল, জিতলেও আর জেলায় আসবেন না শতাব্দী। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। জেতার পর থেকেই তিনি চেষ্টা করেছেন নিজের কেন্দ্রকে ভাল করে চিনতে, জানতে। তার জন্য গ্রামে গ্রামে গিয়েছেন, কথা বলেছেন প্রান্তিক মানুষজনের সঙ্গে।

তৃণমূল সূত্রে খবর, গত লোকসভা নির্বাচনের আগে শতাব্দীর সঙ্গে সম্পর্ক তুলনায় মসৃণ হয় অনুব্রতের। দলও দ্বিতীয় বারের জন্য ভরসা রাখে শতাব্দীর উপরেই। ২০১৪ সালে বিজেপির তারকা প্রার্থী জয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও বামফ্রন্টের কামরে এলাহিকে অনেক পিছনে ফেলে তিনি-ই জয়ী হন।

এ বার ভোটপ্রচারের পথ কী হবে? শতাব্দীর উত্তর, ‘‘মানুষ জানেন শতাব্দী সেলিব্রিটি হলেও অনেক রাজনৈতিক নেতার থেকে এলাকায় বেশি আসেন। চেষ্টা করব, দলের সাহায্যে মানুষের চাহিদা বুঝে এগোতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE