Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পারদে গ্যাংটকের কাছে বীরভূম

প্রবল ঠান্ডায় বীরভূমেও এখন এমনই হাল। শ্রীনিকেতন আবহাওয়া অফিসের হিসেবে, রবিবার জেলায় পারদ নেমেছে ৫.৮ ডিগ্রিতে। যা স্বাভাবিকের তুলনায় ৫ ডিগ্রি কম। তাপমাত্রার নিরিখে এ দিন গ্যাংটকের কাছে পৌঁছেছে জেলা। সেখানে রবিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩.৫।

আমেজ: শীতের সকালে অন্য খেলায় মেতেছে দুই খুদে। রবিবার সিউড়িতে। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

আমেজ: শীতের সকালে অন্য খেলায় মেতেছে দুই খুদে। রবিবার সিউড়িতে। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:১৫
Share: Save:

সোশ্যাল মিডিয়ার কার্টুনেও কাঁপুনি।

সেই কার্টুনে কেউ লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছে। কানের কাছে উড়ছে একটা মশা। সে বলছে— ‘মা কালীর দিব্যি বলছি কামড়াবো না। লেপের তলায় ঢুকতে দে।’

প্রবল ঠান্ডায় বীরভূমেও এখন এমনই হাল। শ্রীনিকেতন আবহাওয়া অফিসের হিসেবে, রবিবার জেলায় পারদ নেমেছে ৫.৮ ডিগ্রিতে। যা স্বাভাবিকের তুলনায় ৫ ডিগ্রি কম। তাপমাত্রার নিরিখে এ দিন গ্যাংটকের কাছে পৌঁছেছে জেলা। সেখানে রবিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩.৫।

শুধু ঠান্ডাই নয়। রবিবার সকাল থেকে কুয়াশায় ঢেকেছে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত। বেলা গড়ালেও কমেনি সেই চাদরের ঘনত্ব। ছুটির দিনে জবুথুবু হয়ে ঘরেই সময় কাটিয়েছেন জেলার বেশিরভাগ মানুষ।

শীতের আঁচ ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। কেউ লিখেছেন— ‘তাপমাত্রা যে ভাবে নামছে তাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থাকলে লিখতেন— এই শীতে স্নান যে করে, স্নান যে সহে, তব ঘৃণা তারে যেন তৃণসম ডহে।’ কারও কথায়— ‘এই শীতে শঙ্করাচার্যের বাণী, লেপ-ই একমাত্র সত্য বাকি সব মায়া।’

গত ডিসেম্বরে দিনতিনেকের জন্য শীত এসেছিল জেলায়। সে সময় জেলার তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করে ১১ ডিগ্রির আশপাশে। ডিসেম্বরের অন্য সময় হালকা সোয়েটার, উইন্ডচিটার, মাফলারেই দিন কাটছিল জেলাবাসীর। সঙ্গে একটা টুপি। জল্পনা ছড়িয়েছিল, এ বছরের মতো কি শীত পাততাড়ি গোটাল? ভারী সোয়েটার, জ্যাকেট, লেপ বের করতে হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনার মধ্যে স্বমহিমায় ফিরল শীত। গত বুধবার থেকেই তাপমাত্রার পারদ চড়চড়িয়ে নেমেছে। আরাম পেতে আগুন জ্বালিয়ে হাত সেঁকছেন মানুষ। ভিড় জমেছে চা, তেলেভাজার দোকানে। খুব দরকার না পড়লে বিছানার লেপ ছাড়ছেন না কেউ-ই। রোদ্দুর থাকলে আরাম। সন্ধে নামতেই পাল্লা ভারী শীতের। শীতকালে এমন ঠান্ডার অপেক্ষাই তো করে বঙ্গবাসী।

জেলার বাসিন্দারা বলছেন, এ বার স্বাদ ফিরবে নলেন গুড়ের। সামনে পিঠেপুলির ভরা মরসুম। জমিয়ে খাওয়াদাওয়া করা যাবে এই শীতে। তবে অসুবিধায় পড়েছেন রাস্তার ধারে রাত কাঠানো নিরাশ্রয় মানুষ। প্রবল ঠান্ডায় অসুস্থ এক ফুটপাতবাসীকে রবিবার সকালে মহম্মদবাজারের দেউচা থেকে প্যাটেলনগর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করান স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ এবং বিডিও। বছর পঞ্চাশের ওই ব্যক্তি কথাও বলতে পারছিলেন না। কষ্ট হচ্ছে খুদে পড়ুয়াদেরও। বিভিন্ন স্কুলে এখন ক্লাস, পরীক্ষা চলছে। বার্ষিক পরীক্ষা ফেব্রুয়ারিতে।

দুবরাজপুরের এক গৃহবধূ বলছিলেন, ‘‘সাতসকালে ঠান্ডায় বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতে কী কষ্ট বলে বোঝাতে পারব না।’’ তবে বিভিন্ন স্কুলে সময় কিছুটা অদলবদল করেছেন কর্তৃপক্ষ। ভোরের দিকে কুয়াশা থাকায় দুর্ঘটনা রুখতে সতর্ক থাকছে পুলিশও।

কষ্ট হলেও আরও কিছুদিন এমন ঠান্ডাই চান জেলাবাসী। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ঠান্ডা লাগা বা শ্বাসকষ্টজনিত কারণে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালগুলিতে রোগীর ভিড় বাড়লেও বছরের অন্য সময়ের থেকে রোগ বা রোগীর সংখ্যা এখন কম। এই ঠান্ডা আরও সপ্তাহ দু’য়েক থাকলে গম, সরষে এবং আলুচাষের উপকার হবে বলে মত জেলার কৃষিকর্তাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Weather Update Temperature Gangtok
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE