Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বাঁকুড়ায় উঠছে প্রশ্ন
Dengue

ঘুরিয়ে ডেঙ্গি মৃত্যুর ঘোষণা মেডিক্যালের

 এত দিন কেবল রোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে ডেঙ্গি চোখ রাঙাচ্ছিল। এ বার ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন এক জন। বৃহস্পতিবার রাতে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি থাকা এক রোগীর ডেঙ্গিতে মৃত্যু হল। মৃতের নাম অশোক তুং (৪২)।

মৃত: অশোক তুং। নিজস্ব চিত্র

মৃত: অশোক তুং। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩৮
Share: Save:

এত দিন কেবল রোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে ডেঙ্গি চোখ রাঙাচ্ছিল। এ বার ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন এক জন। বৃহস্পতিবার রাতে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি থাকা এক রোগীর ডেঙ্গিতে মৃত্যু হল। মৃতের নাম অশোক তুং (৪২)। বেলিয়াতোড়ের ছান্দার গ্রাম পঞ্চায়েতের তালান্দা গ্রামে তাঁর বাড়ি। তাঁর ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গি মৃত্যুর কথা ঘুরিয়ে লেখা থাকায়, তা নিয়ে কেউ কেউ কথা তুলেছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার জ্বর নিয়ে অশোকবাবু বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিলেন। ভর্তি হওয়ার পরে তাঁর আইজিএম এবং ম্যাক অ্যালাইজা পরীক্ষা করা হয়। তাতে জানা যায়, তিনি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। সেই মতো চিকিৎসা করা হলেও, বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় তিনি মারা যান। বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, “ম্যাক অ্যালাইজা পরীক্ষায় ওই রোগীর শরীরে ডেঙ্গি পজিটিভ ধরা পড়েছিল। তবে তাঁর প্লেটলেট তেমন কমেনি। মাঝে উনি খানিকটা সুস্থও হয়ে উঠছিলেন। হঠাৎই শ্বাস কষ্ট হয়ে তাঁর মৃত্যু হল।” অধ্যক্ষ জানাচ্ছেন, অশোকবাবুর মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। বাঁকুড়া মেডিক্যালের চিকিৎসকদের একাংশ জানান, ডেঙ্গির প্রভাবে মৃতের শরীর থেকে প্রচণ্ড পরিমাণ জল বেরিয়ে গিয়ে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়াতেই মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।

এ দিকে অশোকবাবুর ডেথ সার্টিফিকেটে অবশ্য মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘প্রোব্যাবল ডেঙ্গি শক সিন্ড্রোম’ বা ‘সম্ভাব্য ডেঙ্গি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। চিকিৎসকদের অনেকেরই অভিমত, রাজ্য জুড়ে ডেঙ্গির প্রকোপে এমনিতেই চিন্তিত রাজ্য সরকার। তাই মৃত্যুর কারণ হিসেবে সরাসরি ডেঙ্গি লেখার ঝুঁকি হয়তো নিতে চাননি চিকিৎসক।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর বাঁকুড়া জেলায় চার জন ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। এই মরসুমে নতুন করে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা। শনিবার দিনভর চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি বাঁকুড়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাসের সঙ্গে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “এ বছর ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা জেলায় ৩০০ ছাড়িয়ে গেলেও, মৃত্যু এটাই প্রথম। তাই চিন্তা বেড়েছে। তবে ঠান্ডা পড়তে শুরু করায় ডেঙ্গির প্রকোপ কমবে বলেই মনে হচ্ছে।’’

বাঁকুড়া মেডিক্যালের দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেট। নিজস্ব চিত্র

মৃতের শ্যালক সোনামুখীর বাসিন্দা গৌতম সিংহ জানান, অশোকবাবু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পরে প্রথমে সোনামুখীতেই এক জন চিকিৎসকের কাছে তাঁকে দেখানো হচ্ছিল। চিকিৎসা চলাকালীনই অশোকবাবুর শরীয়ে ‘র‌্যাশ’ বেরোয়। গৌতমবাবু বলেন, “এরপরেই আমাদের সন্দেহ হয় জামাইবাবুর ডেঙ্গি হয়ে থাকতে পারে। জ্বর আসার তিন দিনের মাথায় রবিবার জামাইবাবুকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করি। ভর্তি হওয়ার এক দিনের মধ্যেই ডেঙ্গি ধরা পড়ে।”

অশোকবাবুর দুই ছেলে ও স্ত্রী রয়েছে। তাঁর পরিবারের প্রাথমিক ধারণা, গ্রাম থেকেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন অশোকবাবু। মৃতের ভগ্নীপতি শ্যামাপদ মল্ল বলেন, “মাঝখানে অশোক দুর্গাপুরে একটি কারখানায় চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকের কাজ করছিল। তবে আড়াই মাস আগে সেই চাকরি ছেড়ে এসে গ্রামেই চাষবাস দেখছিল। তাই আমাদের ধারণা, গ্রাম থেকেই ডেঙ্গি ছড়িয়ে থাকতে পারে।”

ছান্দার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সুভাষ পান বলেন, “ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে অশোকের মৃত্যুর খবর পেয়েই তাঁর বাড়ি গিয়েছিলাম। ঘটনাটি ব্লক প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের তরফে শুক্রবার গ্রামে এসে এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি দেখে গিয়েছে।” সুভাষবাবুর দাবি, ছান্দার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এ বছর কেউ ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছে বলে পঞ্চায়েতের কাছে খবর নেই।

অন্য দিকে জেলার অন্য প্রান্তে ছাতনা ব্লকের বাঁকাশিমূল গ্রামে সম্প্রতি জ্বরে আক্রান্তের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে। গ্রামবাসীর দাবি, ওই গ্রামে কমপক্ষে ৩২ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সরাসরি গ্রামবাসীর দাবিকে মেনে না নেওয়া হলেও, ওই গ্রামে মশা মারার ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Dengue Death Certificate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE