Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

টিকিট পেতে পড়শির বাড়িতে

সকালে হয়তো চায়ের দোকানে খবরের কাগজটা খুলে বসেছেন। হাজির শাসকদলের এক নেতা। কথায় কিছুটা যেন বাড়তি মধু ঢালা। ব্যাপারখানা কী? আলাপ গড়াতেই বোঝা গেল, তিনি টিকিট চান পঞ্চায়েত নির্বাচনে।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৮ ০১:০৩
Share: Save:

সকালে হয়তো চায়ের দোকানে খবরের কাগজটা খুলে বসেছেন। হাজির শাসকদলের এক নেতা। কথায় কিছুটা যেন বাড়তি মধু ঢালা। ব্যাপারখানা কী? আলাপ গড়াতেই বোঝা গেল, তিনি টিকিট চান পঞ্চায়েত নির্বাচনে।

সে তো ভাল কথা। কিন্তু তার জন্য পড়শির কাছে কেন? তাহলে কী এমন দিন এসে গেল, যে ‘বনবাদাড় ডিঙিয়ে, কাঁটাতার পেরিয়ে, ব্যারিকেড পেরিয়ে, সাঁজোয়া গাড়ির ঝাঁক আসবে বেহালা, গিটার, বাঁশি, হারমোনিকা নিয়ে’?

না। অতটাও নয়। আপাতত বাঁকুড়ায় শাসকদল ঠিক করেছে, বেশি লোক যাঁকে চাইবেন তিনিই পাবেন টিকিট। তাই পড়ায় পাড়ায় ভোটের আগে চলছে অন্য ভোটের প্রচার। টিকিটপ্রার্থীদের ভয়ে ইদানিং ঘুরপথে কেউ কেউ বাজারে যাচ্ছেন। কেউ কাজের ছুতোয় এড়িয়ে চলছেন সন্ধ্যার আড্ডা। বড়জোড়ার এক বাসিন্দা বলছেন, “আমার এলাকায় পাঁচ জন তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখে বসে আছেন। সবাই আমার খুব কাছের লোক। কেউ বাজারে, কেউ চায়ের দোকানে ধরছেন। কেউ কেউ তো আবার সটান বাড়িতেই এসে হাজির। বলছেন, প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম বলতে। খুব মুশকিলে পড়েছি”।

কী ভাবে হবে প্রার্থী বাছাই?

তৃণমূলের বড়জোড়ার পর্যবেক্ষক তথা তালড্যাংরার বিধায়ক সমীর চক্রবর্তী জানান, দল থেকে প্রতিটি গ্রামপঞ্চায়েতে ধরে পাঁচ জনের কোর কমিটি গড়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই কমিটিই এলাকার প্রতিটি বুথে বাড়ি বাড়ি ঘুরবে। সাধারণ মানুষের কাছে জানতে চাইবে, প্রার্থী হিসাবে কাকে পছন্দ? সমীরবাবু বলেন, “ওই কমিটিই ব্লক স্তরে জানাবে কোন এলাকা থেকে কত জনের নাম উঠে এল আর বেশি মানুষ কাকে চাইছেন। তার ভিত্তিতেই দল প্রার্থী নির্বাচন করবে।”

রবিবার বিকেলে বড়জোড়ার একটি লজে পঞ্চায়েত ভিত্তিক কোর কমিটি গড়তে বৈঠক হয়। এ দিনই তালড্যাংরার বিবড়দা ও ফুলমতি গ্রামপঞ্চায়েতেও দলীয় সম্মেলন করে দু’টি কোর কমিটি গড়ে দিয়েছেন সমীরবাবু। দলের জেলা সভাপতি অরূপ খানের কথায়, ‘‘আমরা চাই জেলা জুড়ে বুথস্তর থেকে যোগ্য প্রার্থীর নাম উঠে আসুক। তাই এই সিদ্ধান্ত।”

ভোটের চেয়ে নির্ঝঞ্ঝাটে প্রার্থী বাছাই করাটা যে কম বড় পরীক্ষা নয়, সে কথা মানছেন তৃণমূলের প্রায় সব স্তরের নেতারাই। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন ভোটে তৃণমূল জিতলেও প্রার্থী বাছাইয়ে অনেক জায়গায় গেরো হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনেই গোঁজ প্রার্থীদের কাঁটায় জেলায় হাতছাড়া হয়েছে পাঁচটি কেন্দ্র। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসকদলে টিকিট না পাওয়া কর্মীদের গোঁজ প্রার্থী হয়ে দাঁড়ানোর ধুম দেখা গিয়েছিল।

দলেরই একাংশের মতে, সেই গোলমাল যাতে না হয় তাই প্রার্থী নির্বাচনে বিকল্প পন্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এই পদ্ধতি কতটা নিশ্ছিদ্র, তা নিয়েও দলের অন্দরে কান পাতলে প্রশ্ন শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, কোর কমিটির লোকজন যদি ঘুরে এসে চোখ-কান বুজে নিজেদের পছন্দের লোকের নামটাই প্রস্তাব করেন, তাহলে? ব্যাপারটা নিয়ে কটাক্ষ করছেন বিরোধীরাও। বিজেপি-র রাজ্য নেতা সুভাষ সরকার বলছেন, ‘‘শাসকদলের নানা কাজকর্ম নিয়ে সবাই এমনিতেই ব্যাতিব্যস্ত। এ বারে নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়েও সাধারণ মানুষকে ভোগাবেন ওঁরা।’’

তবে এই সমস্ত কথায় আমল দিচ্ছেন না শাসকদলের নেতারা। তাঁদের দাবি, তৃণমূল সাধারণ মানুষের দল। তাই তৃণমূল স্তর থেকে তাঁরা প্রার্থী বাছাই করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Panchayat Election Ticket Nomination
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE