Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

গ্রামে শান্তি ফিরুক, আর্তি ছেলে হারানো দিল ইসলামের

পড়শির বাড়িতে মিষ্টি খেতে গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল রহুল। দু’দিন পরে মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে অদূরে জঙ্গলের মধ্যে মুখে কাপড় গোঁজা ও দুই হাত পিছমোড়া অবস্থায় তার দেহ উদ্ধার হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তালড্যাংরা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৮ ০২:৩০
Share: Save:

ছেলেকে খুনের বদলা নিতে আর যেন রক্ত না ঝরে। এমনই আর্জি জানালেন তালড্যাংরার ঢ্যামনামারা গ্রামে নিহত রহুল কুদ্দুস খানের (৮) বাবা তৃণমূল কর্মী দিল ইসলাম খান। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘আমার নাবালক ছেলেটাকে ওরা মেরে ফেলল। কিন্তু এর বদলা নিতে গিয়ে গ্রামে রক্ত ঝরুক, চাই না। এ বার গ্রামে যাতে শান্তি ফেরে, সকলের কাছে সেই অনুরোধ জানাচ্ছি।”

তবে ছেলের খুনিরা যাতে চরম সাজা পায় সেই দাবিও তুলছেন তিনি। দিল ইসলাম বলেন, “দোষীদের পুলিশ গ্রেফতার করুক। নৃশংস ওই হত্যাকারীরা যাতে ছাড়া না পায়, সেই দাবি তুলছি।” যদিও দেহ উদ্ধারের দু’দিন পরেও পুলিশ অভিযুক্তদের নাগাল পায়নি। নিহতের বাবার দাবি, অভিযুক্তেরা থানায় নিয়মিত যাতায়াত করছে, কিন্তু পুলিশ তাদের ধরছে না। যদিও জেলা পুলিশের এক কর্তা দাবি করেন, অভিযুক্তেরা পলাতক। তাদের খোঁজ চলছে।

পড়শির বাড়িতে মিষ্টি খেতে গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল রহুল। দু’দিন পরে মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে অদূরে জঙ্গলের মধ্যে মুখে কাপড় গোঁজা ও দুই হাত পিছমোড়া অবস্থায় তার দেহ উদ্ধার হয়। ততক্ষণে দেহে পচন ধরে গিয়েছিল। রহুলকে খুনের পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই দায়ী করে অভিযোগ করেন তাঁর বাবা। ভোটের আগের দিন দলেরই বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকেরা বাড়িতে ঢুকে তাঁকেও মারধর করেছিল বলে তাঁর অভিযোগ। সেই থেকে তিনি গ্রামছাড়া ছিলেন।

দিল ইসলাম বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্যের অনুগামী। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন বিধায়ক শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের অনুগামীরাই আমাকে মারধর করে। আমি গ্রামে না ফেরায় ওরা স্ত্রীকে খুনের হুমকি দিচ্ছিল। ওরাই ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নৃশংস ভাবে খুন করেছে।’’ শ্যামবাবু অবশ্য নিজের অনুগামীদের বিরুদ্ধে ওঠা খুনের অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনাটি নিয়ে যথাযথ পুলিশি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

তবে প্রথম শ্রেণির এক ছাত্রকে এ ভাবে খুনের ঘটনায় শিউরে উঠছেন সবাই। বিজেপির তরফে বুধবার বাঁকুড়া পুলিশ সুপারের অফিসে গিয়ে এই ঘটনায় যুক্ত দোষীদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলা হয়। যদিও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুলিশ অভিযুক্তদের কাউকেই গ্রেফতার করতে না পারায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েই। বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারবাবু এ দিন বলেন, “অভিযুক্তদের মধ্যে পুলিশ কাউকেই কেন গ্রেফতার করতে পারছে না, তা বুঝে উঠতে পারছি না। আমি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বিষয়টি জানাব।’’

গত বছর ২০১৭ সালে ঢ্যামনামারা গ্রামেই শ্যামবাবু ঘনিষ্ঠ তৃণমূল কর্মী জান মহম্মদ মল্লিক খুন হন। ওই ঘটনায় তুষারবাবুর গোষ্ঠীর লোকজনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। যদিও পরে পুলিশ সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক তথা গত বিধানসভা ভোটে তুষারবাবুর হয়ে প্রচারে থাকা মনোরঞ্জন পাত্রকে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করে। তুষারবাবু এ দিনও অভিযোগ করেন, “ঢ্যামনামারা গ্রামে একের পর এক খুন ঘটলেও জেলা নেতৃত্ব এলাকায় গিয়ে দলীয় কর্মীদের দ্বন্দ্ব মেটাতে উদ্যোগী হচ্ছেন না।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খান অবশ্য দাবি করেছেন, ব্লক নেতৃত্বই সব দেখছে।

রহুলের মৃত্যুর পরে অবশ্য দলের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশও এলাকায় শান্তি ফেরানোর দাবিতে সরব হয়েছেন। তালড্যাংরা ব্লক তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা শ্যামবাবুর অনুগামী হিসেবে পরিচিত নিতাই চক্রবর্তীও বলেন, “একটা ছোট্ট ছেলেকে যে ভাবে খুন হতে হল, তা মেনে নেওয়া যায় না। প্রকৃত দোষীরা শাস্তি পাক। এলাকায় শান্তি ফেরাতে আমি বুথে বুথে গিয়ে কর্মীদের সংযত থাকতে নির্দেশ দিচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE