Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

লাভের গুড় কি মহাজনের সিন্দুকে, প্রশ্ন

যেমন, মানবাজার ২ ব্লকের চৌকান গ্রামের গদাই মাহাতো। দিন কয়েক আগে তাঁর মা মারা গিয়েছেন। আগামী কাল, মঙ্গলবার পারলৌকিক কাজ। টাকা দরকার। কোথা থেকে আসবে, জানেন না প্রান্তিক চাষি গদাই। নিজে দিনমজুরি করেন। দুই ছেলে। তাঁরাও শ্রমিকের কাজ করেন

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৪
Share: Save:

ঘরে আছে পাকা ধান। হাতে দরকার কাঁচা টাকা। ফাঁপড়ে পড়েছেন পুরুলিয়ার কিছু প্রান্তিক চাষি।

যেমন, মানবাজার ২ ব্লকের চৌকান গ্রামের গদাই মাহাতো। দিন কয়েক আগে তাঁর মা মারা গিয়েছেন। আগামী কাল, মঙ্গলবার পারলৌকিক কাজ। টাকা দরকার। কোথা থেকে আসবে, জানেন না প্রান্তিক চাষি গদাই। নিজে দিনমজুরি করেন। দুই ছেলে। তাঁরাও শ্রমিকের কাজ করেন। যা মজুরি পান, তাতে দিন-খাওয়াটা হয়ে যায়। আর রয়েছে কিছুটা টাঁড় জমি। যা ধান হয়, তাতে মাস ছ’য়েকের খোরাক চলে যায়। গদাই বলছিলেন, ‘‘আমাদের পুঁজি বলতে বচ্ছরকার ধানটা। আপদে-বিপদে সেটাই থাকে বেচার মতো।’’

এ দিকে হয়েছে মুশকিল। ধানের অভাবী বিক্রি রুখতে রাজ্য সরকার ফড়েদের মাধ্যমে ধান কেনাবেচা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। চাষিদের বলা হয়েছে, সরকারি কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে। অভিযোগ উঠছে, সেই কেন্দ্র প্রয়োজনের তুলনায় কম রয়েছে জেলায়। আবার গদাইয়ের মতো কেউ কেউ বলছেন, ‘‘চেক না হয় হাতে পেলাম। ব্যাঙ্ক তো দূরে। সেখানেও জমা করলেই যে হাতে হাতে টাকা পাব, সেটা নয়।’’

অগত্যা কী করবেন গদাই? বলছেন, ‘‘ধারই করতে হবে। পরে ধান বেচে টাকা পেলে শোধ করব।’’ শোধ করবেন বটে, তবে সুদ সমেত। সেই হিসেব কষে দেখলে আসলে ন্যায্য দামের লাভ কি তিনি পাবেন? নাকি ঘুরপথে সেটা চলে যাবে মহাজনের ঘরেই? প্রশ্নটা তুলছেন চাষিদের কেউ কেউ।

সামনেই মকর সংক্রান্তি। পুরুলিয়ার কৃষিজীবী ঘরে নতুন জামাকাপড় আসে এই পার্বনে। তার জন্যও লাগে টাকা। চাষিদের দাবি, সরকারি কেন্দ্রে ধান বিক্রি করে তাঁরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন বটে। কিন্তু পরিকাঠামো আর নিয়মকানুন আরও সহজ হওয়া দরকার। দরকার, সরকারি ধান কেনার কেন্দ্র বাড়ানোর। সেই দাবিতেই শনিবার মানবাজার-বরাবাজার রাস্তায় বোরোর চৌকান গ্রামের মোড়ে চাষিরা পথ অবরোধ করেছিলেন। বিডিও (মানবাজার ২) তারাশঙ্কর প্রামাণিক বলেন, ‘‘চৌকান লাগোয়া বারি সমবায় সমিতির মাধ্যমে রবিবার থেকেই ধান কেনা শুরু হয়েছে। চাষিদের হাতে সঙ্গে সঙ্গে চেক দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কারও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’

গদাই এ দিকে অভিযোগ করছেন, ‘‘চেক জমা দিলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকাউন্টে টাকা আসে না। অনেক সময়ে ব্যাঙ্কও ঘোরায়।’’ কেউ আবার অভিযোগ করছেন, ব্যাঙ্কও অনেক দূরে। সেখানে গিয়ে চেক জমা করা, আবার টাকা তোলা— চাট্টিখানি কথা নয়। তবে গদাইয়ের বাড়ি যেখানে, সেই বারি-জাগদা পঞ্চায়েতের প্রধান অনিমেষ মাহাতো বলেন, ‘‘ফসলের দাম যাতে চাষির হাতেই যায়, কেউ যাতে তাঁকে ঠকাতে না পারে, সেই সমস্ত ভেবে অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ার বন্দোবস্ত। এটা সরকারি নিয়ম। মানতে তো হবেই।’’

এই পদ্ধতিতে যে তাঁদের লাভ সেটা মানছেন গদাইও। তবে তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের মতো দিনআনা মানুষদের জন্য ব্যাপারটা যদি কোনও ভাবে সহজ করা যায়, তাহলে খুব ভাল হয়।’’ জেলা খাদ্য নিয়ামক বাপ্পাদিত্য চন্দ্র বলেন, ‘‘চেকে টাকা দেওয়াটা সরকারি নিয়ম। আমাদের কিছু করার নেই। চাষিদের কথা ভেবে আমরা পরবের আগেই ধান কেনায় জোর দিচ্ছি। তাঁদের যাতে দূরে না যেতে হয় সে জন্য ধান কেনার কেন্দ্র বাড়ানো হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rice Trading Farmer Middleman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE