বাঘমুিণ্ডর চড়িদা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
ছৌ মুখোশের কদরই আলাদা। আর সেই মুখোশের সম্ভার নিয়ে মুখোশ শিল্পীদের গ্রামেই মেলা বসে, তবে তার মাত্রাই অন্য রকম। পুরুলিয়ার অযোধ্যাপাহাড়ের অদূরে চড়িদা গ্রামে হয়ে গেল ছৌ মুখোশের মেলা। মানুষজনকে আনন্দ দিয়ে রবিবার শেষ হল তিন দিনের এই মেলা।
পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের সহায়তায় ছৌ মুখোশ শিল্পীদের নিজস্ব সংগঠন ‘ছৌ-মুখোশ শিল্পী সঙ্ঘ’-র উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলার বিশেষত্ব মাঠে নয়, গোটা চড়িদা গ্রামই মেলার প্রাঙ্গণ। মুখোশ শিল্পীদের এক ছাতার তলায় এনে তাঁদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেওয়া, মুখোশের বিবর্তন-সহ শিল্পে সংস্কারের কাজে সহায়তা করছে শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সেই সংস্থার হাত ধরেই এই মেলা এক দিকে যেমন চড়িদায় শিল্প রসিকদের টেনে এনেছে মেলা প্রাঙ্গণে, তেমনই এই শিল্পকে অবলম্বন করে চাঙা হয়েছে এখানকার অর্থনীতিও।
মেলার অন্যতম উদ্যোক্তা উৎপল দাসের দাবি, ‘‘প্রথম বছর মেলা হয়েছিল হাতে গোনা কয়েকটি দোকানকে নিয়ে। এ বার পঞ্চম বর্ষের মেলায় শিল্পীদের দোকানের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছে।’’
তিনি জানান, ছৌ মুখোশ তৈরিতে আগ্রহও বেড়েছে। আগে যাঁরা বড় শিল্পীদের অধীনে কাজ করতেন, এখন এই বিক্রি বাড়ায় তাঁরা নিজেরাও ব্যবসা শুরু করেছে। শুধু মুখোশ তৈরি করেই যে সারা বছর ব্যবসা চালানো যায়, এই বিশ্বাসটা তাঁদের মধ্যে তৈরি হয়েছে।
ছৌ-মুখোশ শিল্পী সঙ্ঘের এক কর্মকর্তা ভীম সূত্রধর বলেন, ‘‘প্রতি বছর মেলায় লোকজনের আসা বাড়ছে। মেলা থেকেই ছৌ মুখোশ দিয়ে পুজোর মণ্ডপ তৈরির ‘বুকিং’-ও মিলছে। আগে বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় ছিল মুখোশের মরসুম। এখন সারা বছর কাজ মিলছে।’’
ছৌ নাচে পদ্মশ্রীপ্রাপক প্রয়াত গম্ভীর সিং মুড়ার কর্মভূমি চড়িদার খুদেরাও জানে ছৌ মুখোশ তৈরির কারিগরি কৌশল। কিন্তু এত দিন বিপণনের তেমন ব্যবস্থা না থাকায় শিল্পীদের অনেকেই ভিনরাজ্যে কাজ করতে যেতেন। এখন তাঁরাই গ্রামে মুখোশ তৈরি করছেন।
শিল্পী সঙ্ঘের সভাপতি করুণাসিন্ধু সূত্রধর বলেন, ‘‘মেলায় শুধু এ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই মানুষজন আসছেন তা নয়, বাংলাদেশ থেকেও অনেকে এসেছিলেন। তাঁদের মাধ্যমেই এই মেলার খবর পৌঁছচ্ছে নতুন নতুন এলাকায়।’’
বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ থেকে মেলায় এসেছিলেন তন্ময় দাস। তিনি বলেন, ‘‘ছৌ মুখোশের মেলার কথা শুনেছিলাম। এই প্রথমবার মেলায় এলাম। দারুণ লাগছে। কিছু মুখোশ কিনেছি।’’ সুইসা নেতাজি সুভাষ আশ্রম মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক উমাশঙ্কর রায় বলেন, ‘‘আমার বাড়ি রানাঘাট। টানা তিন বছর মেলায় আসছি। প্রচুর লোকের আনাগোনা বেড়েছে।’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত মাসে জেলা সফরে এসে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী ছোট ছোট ছৌ মুখোশ তৈরি করতে বলে গিয়েছিলেন। সঙ্ঘের অন্যতম কর্মকর্তা ভীমবাবু বলছেন, ‘‘আমরা সেই রকম মুখোশও তৈরি করছি। এর দামও সবার নাগালের মধ্যে। সে জন্য ক্রেতাও বেড়েছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী মুখোশে পরিবর্তন আনছে চড়িদা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy