Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রোগীর কাছে এমবিবিএস মহকুমাশাসক

বর্ষায় পুকুরে নেমে রোগ বাঁধালেই ইঞ্জেকশন দিয়ে দেব! স্টেথোস্কোপ কাঁধে নিয়ে বড় বড় চোখ করে ছোটদের তিনি এ ভাবে মিথ্যা ভয় দেখালেন। আবার অনেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গিয়ে পুষ্টিগত সমস্যা নজরে আসায় উদ্বিগ্নও হলেন। শনিবার সাঁতুড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আড়াই ঘণ্টা ধরে ৪৫ জন রোগীকে তিনি দেখলেন।

পাশে: সাতুড়ি গ্রামের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর। নিজস্ব চিত্র

পাশে: সাতুড়ি গ্রামের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর। নিজস্ব চিত্র

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
সাঁতুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৮ ০০:৫৯
Share: Save:

বর্ষায় পুকুরে নেমে রোগ বাঁধালেই ইঞ্জেকশন দিয়ে দেব! স্টেথোস্কোপ কাঁধে নিয়ে বড় বড় চোখ করে ছোটদের তিনি এ ভাবে মিথ্যা ভয় দেখালেন। আবার অনেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গিয়ে পুষ্টিগত সমস্যা নজরে আসায় উদ্বিগ্নও হলেন। শনিবার সাঁতুড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আড়াই ঘণ্টা ধরে ৪৫ জন রোগীকে তিনি দেখলেন। রঘুনাথপুরের নতুন মহকুমাশাসক আকাঙ্ক্ষা ভাস্করকে এ দিন সম্পূর্ণ অন্য ভূমিকায় দেখলেন বাসিন্দারা।

কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএসের শেষ বছরেই আইএএস-র পরীক্ষায় বসে পড়েছিলেন আকাঙ্ক্ষা। পাস করে প্রশিক্ষণ শেষে সটান প্রশাসনের অন্দরে। কিন্তু, সময় পেলেই ছুটে গিয়েছেন রোগীদের কাছে। মুসৌরিতে প্রশিক্ষণের সময় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আশপাশের গ্রামে স্বাস্থ্য শিবিরেও গিয়েছেন। এ রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে ঢুকে গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসকের অভাব দেখেন। মাস দেড়েক আগে রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক হিসেবে কাজে যোগ দিয়েই তাই তিনি জেলাশাসককে জানিয়েছিলেন, তিনি ছুটির দিনে রোগী দেখতে চান।

জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘আকাঙ্ক্ষা ছুটির দিনে বসে না থেকে চিকিৎসক হিসাবে রোগী দেখছেন। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক দিক।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্তের কথায়, ‘‘ভাল চিকিৎসকেরা যে দায়িত্বেই থাকুন না কেন, রোগীদের প্রতি তাঁদের আলাদা একটা টান থাকে।’’ আকাঙ্ক্ষার কথায়, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরে কাজ করার সময়েই দেখেছি চিকিৎসকের খুবই অভাব রয়েছে। তাই এসডিও-র দায়িত্ব নেওয়ার সময়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ছুটির দিনে রোগী দেখব।’’

এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসকের অভাব ছিল। বন্ধ অন্তর্বিভাগ। দিন সাতেক আগে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে এক চিকিৎসককে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু, রোগীর চাপ তুলনায় বেশি। শনিবার নতুন ডাক্তার এসেছেন জেনে অনেকই ভিড় করেন। সাঁতুড়ি গ্রামের সোনামণি বড়াল বলেন, ‘‘এডাক্তার রোজ পাওয়া যায় না। নতুন ডাক্তার এসেছেন শুনে চলে এলাম।’’ বছর বারোর কিশোর শুকদেব মণ্ডলের কানে কাগজের টুকরো গিয়েছিল। স্বাস্থ্যকর্মীদের ডেকে আকাঙ্ক্ষা সেই কাগজের টুকরো বার করেন।

রোগী দেখার ফাঁকেই এলাকার জনস্বাস্থ্য কর্মসূচি, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে এই এলাকায় সমস্যা আছে। অনেকেরই দেখছি চর্মরোগ রয়েছে। বর্ষার পুকুরের জল থেকে নানা রোগ ছড়ায় বলে সবাইকেই এই সময়ে পুকুরে স্নান করতে বারণ করেছি।’’ সাঁতুড়ির বাসিন্দা তথা জেলার প্রাক্তন উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামলাল হেমব্রম বলেন, ‘‘রোগ ধরার পাশাপাশি তিনি জনস্বাস্থ্য সম্পর্কেও রোগীদের সচেতন করছিলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Doctor SDO MBBS Medical Centre
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE